মহারাষ্ট্রে তখন শিবসেনার উত্থানের জমানা। মহারাষ্ট্র শুধুই মারাঠাদের। এই স্লোগান দিয়ে জনসমর্থন বাড়ানোর চেষ্টা করেছিল শিবসেনা। আর, তাতে বিহারি এবং উত্তর ভারতীয়দের খেদানোর একের পর এক ঘটনা সামনে এসেছিল। এবার অনেকটা একই সুর শোনা গেল পঞ্জাবে কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী চরণজিৎ সিং চান্নির গলায়।
তিনি অবশ্য পঞ্জাব থেকে কাউকে খেদানোর ডাক দেননি। তবে, পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী, রূপনগরের নির্বাচনী সভায় বাসিন্দাদের কাছে বিহার, উত্তরপ্রদেশ এবং দিল্লিবাসী (পড়ুন জাঠ)- দের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। এই সব অঞ্চলের বাসিন্দাদের কথা উল্লেখ করে, তাদের পঞ্জাবে প্রবেশ করতে না- দেওয়ার জন্য তিনি পঞ্জাবিদের কাছে আহ্বান জানান।
উত্তর ভারতীয়দের মধ্যে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বিহারিরা ছড়িয়ে আছেন। তাদের সংঘবদ্ধতার জেরে কার্যত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের স্থানীয় বাসিন্দারা কর্মহীনতার শিকার হচ্ছেন। এমন অভিযোগ নতুন কিছু না। পঞ্জাবেও এমন ধরনের ঘটনা ইদানিং বেড়েছে। লোকসংখ্যা বৃদ্ধির অনুপাতে কর্মসংস্থান না-বাড়ায় পঞ্জাবের বহু বাসিন্দাই বিদেশে চলে যাচ্ছেন।
তার ওপর আবার এবারের নির্বাচনে আম আদমি পার্টির ব্যাপক প্রভাব বিস্তারের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সরকারে থাকার সুবাদে এই আম আদমি পার্টির মূলঘাঁটি দিল্লিতে। তাই আঞ্চলিকতার তাস খেলতে কসুর করেননি পঞ্জাবে কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী। পরে অবশ্য পরিস্থিতি দেখে ঢোঁক গিলেছেন। সাফাইয়ে বলেছেন, 'পঞ্জাবের কাজকর্মে যাঁরা ব্যাঘাত ঘটাচ্ছেন, কেবল সেই ব্যক্তিদের উদ্দেশ্য করেই আমি মন্তব্য করেছি। কিন্তু, আমার মন্তব্য বিকৃত করা হয়েছে। উত্তরপ্রদেশ এবং বিহার থেকে আসা ভাইবোনেরা পঞ্জাব গড়ে তুলতে বড় ভূমিকা নিয়েছেন। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে আমরা তাঁদের সঙ্গে থাকছি। তাঁদের আমরা নিজেদের পরিবারের সদস্যদের মতোই সম্মান করি এবং ভালোবাসি।' কিন্তু, বৃহস্পতিবার চান্নি এই সাফাই দিলেও ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।
পঞ্জাবে কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থীর মন্তব্য প্রকাশ্যে আসার পর স্বভাবতই তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে মূলত উত্তর ভারতের রাজনীতির বিভিন্ন দল। আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল, চান্নির এই মন্তব্যকে 'লজ্জাজনক' বলেছেন। তবে, সবচেয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা সংযুক্ত জনতা দলের প্রধান নীতীশ কুমার। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশের দল জেডিইউ এমনিতেই এনডিএ শরিক। অর্থাৎ বিজেপির সঙ্গী। তার ওপর চান্নির মন্তব্যে বিহারের কথাও উল্লেখ আছে।
অতীতে দেশের একাধিক রাজ্য থেকে বিহারি খেদাও অভিযানের সাক্ষী নীতীশ তাই 'আতঙ্কিত'। তিনি বলেছেন, 'এটা বোকামি। কীভাবে মানুষ একথা বলতে পারে, তাই ভেবেই আমি আতঙ্কিত। তিনি (চান্নি) কি জানেন না, যে বিহারের ঠিক কত বাসিন্দা সেখানে (পঞ্জাবে) থাকেন আর কীভাবে তাঁরা ওই অঞ্চলের সেবা করেছেন?'
আরও পড়ুন- Explained: দেশের বৃহত্তম আর্থিক প্রতারণায় অভিযুক্ত, গুজরাটের জাহাজ কোম্পানির উত্থান ও পতন
চান্নি যখন বিহারি, উত্তরপ্রদেশ এবং দিল্লির বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে সরব হচ্ছিলেন, সেই সময় মঞ্চে তাঁর ঠিক পিছনেই ছিলেন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। চান্নি তাঁর সামনেই বলেন, 'প্রিয়াঙ্কা গান্ধী পঞ্জাবের পুত্রবধূ। উত্তরপ্রদেশ, বিহার আর দিল্লি থেকে যে ভাইরা এখানে আসছে, তাদের এখানে শাসন করতে দিও না ভাইয়েরা।'
চান্নির কথা শুনে প্রিয়াঙ্কাকে হাততালি দিতেও দেখা যায়। সেনিয়ে মূলত গোবলয়ের দল বলে পরিচিত বিজেপি সরব হয়েছে। নীতীশকে অবশ্য ভবিষ্যৎ রাজনীতির স্বার্থেই প্রিয়াঙ্কার বিরুদ্ধে একটা শব্দও উচ্চারণ করতে দেখা যায়নি।
Read story in English
মহারাষ্ট্রের মতো পঞ্জাবেও এবার ভূমিপুত্রের স্লোগানে আতঙ্কিত বিহারিরা
পঞ্জাবে কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থীর বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করলেও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢড়ার বিরুদ্ধে অবশ্য মুখ খোলেননি নীতীশ কুমার।
Follow Us
মহারাষ্ট্রে তখন শিবসেনার উত্থানের জমানা। মহারাষ্ট্র শুধুই মারাঠাদের। এই স্লোগান দিয়ে জনসমর্থন বাড়ানোর চেষ্টা করেছিল শিবসেনা। আর, তাতে বিহারি এবং উত্তর ভারতীয়দের খেদানোর একের পর এক ঘটনা সামনে এসেছিল। এবার অনেকটা একই সুর শোনা গেল পঞ্জাবে কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী চরণজিৎ সিং চান্নির গলায়।
তিনি অবশ্য পঞ্জাব থেকে কাউকে খেদানোর ডাক দেননি। তবে, পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী, রূপনগরের নির্বাচনী সভায় বাসিন্দাদের কাছে বিহার, উত্তরপ্রদেশ এবং দিল্লিবাসী (পড়ুন জাঠ)- দের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। এই সব অঞ্চলের বাসিন্দাদের কথা উল্লেখ করে, তাদের পঞ্জাবে প্রবেশ করতে না- দেওয়ার জন্য তিনি পঞ্জাবিদের কাছে আহ্বান জানান।
উত্তর ভারতীয়দের মধ্যে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বিহারিরা ছড়িয়ে আছেন। তাদের সংঘবদ্ধতার জেরে কার্যত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের স্থানীয় বাসিন্দারা কর্মহীনতার শিকার হচ্ছেন। এমন অভিযোগ নতুন কিছু না। পঞ্জাবেও এমন ধরনের ঘটনা ইদানিং বেড়েছে। লোকসংখ্যা বৃদ্ধির অনুপাতে কর্মসংস্থান না-বাড়ায় পঞ্জাবের বহু বাসিন্দাই বিদেশে চলে যাচ্ছেন।
তার ওপর আবার এবারের নির্বাচনে আম আদমি পার্টির ব্যাপক প্রভাব বিস্তারের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সরকারে থাকার সুবাদে এই আম আদমি পার্টির মূলঘাঁটি দিল্লিতে। তাই আঞ্চলিকতার তাস খেলতে কসুর করেননি পঞ্জাবে কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী। পরে অবশ্য পরিস্থিতি দেখে ঢোঁক গিলেছেন। সাফাইয়ে বলেছেন, 'পঞ্জাবের কাজকর্মে যাঁরা ব্যাঘাত ঘটাচ্ছেন, কেবল সেই ব্যক্তিদের উদ্দেশ্য করেই আমি মন্তব্য করেছি। কিন্তু, আমার মন্তব্য বিকৃত করা হয়েছে। উত্তরপ্রদেশ এবং বিহার থেকে আসা ভাইবোনেরা পঞ্জাব গড়ে তুলতে বড় ভূমিকা নিয়েছেন। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে আমরা তাঁদের সঙ্গে থাকছি। তাঁদের আমরা নিজেদের পরিবারের সদস্যদের মতোই সম্মান করি এবং ভালোবাসি।' কিন্তু, বৃহস্পতিবার চান্নি এই সাফাই দিলেও ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।
পঞ্জাবে কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থীর মন্তব্য প্রকাশ্যে আসার পর স্বভাবতই তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে মূলত উত্তর ভারতের রাজনীতির বিভিন্ন দল। আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল, চান্নির এই মন্তব্যকে 'লজ্জাজনক' বলেছেন। তবে, সবচেয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা সংযুক্ত জনতা দলের প্রধান নীতীশ কুমার। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশের দল জেডিইউ এমনিতেই এনডিএ শরিক। অর্থাৎ বিজেপির সঙ্গী। তার ওপর চান্নির মন্তব্যে বিহারের কথাও উল্লেখ আছে।
অতীতে দেশের একাধিক রাজ্য থেকে বিহারি খেদাও অভিযানের সাক্ষী নীতীশ তাই 'আতঙ্কিত'। তিনি বলেছেন, 'এটা বোকামি। কীভাবে মানুষ একথা বলতে পারে, তাই ভেবেই আমি আতঙ্কিত। তিনি (চান্নি) কি জানেন না, যে বিহারের ঠিক কত বাসিন্দা সেখানে (পঞ্জাবে) থাকেন আর কীভাবে তাঁরা ওই অঞ্চলের সেবা করেছেন?'
আরও পড়ুন- Explained: দেশের বৃহত্তম আর্থিক প্রতারণায় অভিযুক্ত, গুজরাটের জাহাজ কোম্পানির উত্থান ও পতন
চান্নি যখন বিহারি, উত্তরপ্রদেশ এবং দিল্লির বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে সরব হচ্ছিলেন, সেই সময় মঞ্চে তাঁর ঠিক পিছনেই ছিলেন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। চান্নি তাঁর সামনেই বলেন, 'প্রিয়াঙ্কা গান্ধী পঞ্জাবের পুত্রবধূ। উত্তরপ্রদেশ, বিহার আর দিল্লি থেকে যে ভাইরা এখানে আসছে, তাদের এখানে শাসন করতে দিও না ভাইয়েরা।'
চান্নির কথা শুনে প্রিয়াঙ্কাকে হাততালি দিতেও দেখা যায়। সেনিয়ে মূলত গোবলয়ের দল বলে পরিচিত বিজেপি সরব হয়েছে। নীতীশকে অবশ্য ভবিষ্যৎ রাজনীতির স্বার্থেই প্রিয়াঙ্কার বিরুদ্ধে একটা শব্দও উচ্চারণ করতে দেখা যায়নি।
Read story in English