দক্ষিণের একমাত্র রাজ্য কর্নাটকেই ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার রয়েছে। আর সেই রাজ্যেই তুঙ্গে হিজাব, হালালা মাংস বিরোধী আন্দোলন। মাথাচাড়া দিচ্ছে কট্টার হিন্দুত্ববাদীরা। দেশজুড়ে প্রবল চর্চা। যা আপাতত চাইছে না পদ্ম শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। উল্টে, এইসব বিতর্কের চেয়ে কর্নাটকের বাজেটে প্রস্তাবিত বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণ, পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য মুখ্যমন্ত্রী বাসরাজ বোম্মাই-কে নির্দেশ দিয়েছেন দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গের শীর্ষ নেতারা। তাঁদের আশঙ্কা, এখন থেকেই কট্টর হিন্দিত্ববাদের প্রচার চললে দক্ষিণী রাজ্যে তার বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।
বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দলের একাংশের দাবি মেনে কর্নাটকে বিধানসভা ভোট এগিয়ে আনতে নারাজ। সম্প্রতি, বোম্মাইয়ার দিল্লি সফরে তা সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে তিনি রাজ্যের উন্নয়মূলক কাজে মনোনিবেশ করেন। উন্নয়নকে পুঁজি করেই ২০২৩ সালে বিধানসভা ভোটে ঝাঁপাতে চায় গেরুয়া বাহিনী।
উন্নয়নে ভর করে ভোটে যাওয়ার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অবস্থানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বলেই মনে করছে বিজেপি। কর্নাটক থেকে নির্বাচিত দলের এক সাংসদের কথায়, 'কেন্দ্রীয় নেতারা মুখ্যমন্ত্রীকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে হিজাব এবং হালাল মাংস নিয়ে বিতর্কের পাশাপাশি সংখ্যালঘুদের লক্ষ্য করে অন্যান্য বিষয়গুলি দলটিকে কিছু পকেটে কট্টর হিন্দু ভোটকে একত্রিত করতে সাহায্য করতে পারে, তবে দলটি ক্ষমতায় ফিরে আসার জন্য আমাদের প্রয়োজন সরকারের কাজের উন্নতি। বিজেপি সরকারের কর্মদক্ষতায় যাতে কেউ আঙুল তুলতে না পারে তাতে নজর দিতে হবে।'
হিজাব বিতর্কের শুরু থেকেই মুখ্যমন্ত্রী বোম্মাইয়া আদালতের রায় অনুসারে ,সরকারি পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলেছিলেন। কিন্তু, সরকারের বহু মন্ত্রী বিতর্কে ইন্ধন জুগিয়েছিল। পরে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সি টি রবি হিন্দুদের হালাল মাংস না কেনার আহ্বানকে সমর্থন করেন। হালালকে 'অর্থনৈতিক জিহাদ'ও বলেছেন। যা ভালোভাবে দেখছেন না নাড্ডা-অমিত শাহরা। আপাতত তাই বিতর্ক বন্ধ করে সরকারি উন্নয়নের কাজে মুখ্যমন্ত্রীকে মনোনিবেশের কড়া বার্তা দেওয়া হল দলের তরফে।
এদিকে, চলতি বছর গুজরাট সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে ভোট রয়েছে। কর্নাটকের বিজেপি নেতাদের একাংশ হিজাব, হালাল বিতর্ক জারি রেখে এ বছর ভোট এগিয়ে আনার পক্ষে। দলকেও সেই প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু, তা খারিজ করে ২০২৩ সালের মে মাসেই দক্ষিণী এই রাজ্যে ভোটের পক্ষে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা। তার আগেই কৃষকদের সেচ নিয়ে অসন্তোষ মেটাতে বলা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে।
বোম্মাইয়ার দাবি মেনে চলতি মাসেই মন্ত্রিসভায় রদবদলে তাঁর দেওয়া প্রস্তাবে সিলমোহর পড়তে পারে বলে অনুমান। আগামী সপ্তাহেই কর্নাটকে যাচ্ছেন বিজেপির সর্ভাবরতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা ওসে রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অরুণ সিং। তাঁদের এই সফরেই মন্ত্রিসভায় রদবদলের বিষয়টি চূড়ান্ত হতে পারে। তারপরই রাজ্য সংগঠনও ঢেলে সাজানো হবে বলে বিজেপি সূত্রে খবর।
যথাসময়ে নির্বাচন হলে আগামী কয়েক মাসে সরকারি উন্নয়ন কাজগুলিকেও বাস্তবায়িত করা সম্ভব করা যাবে। নেতৃত্ব মনে করছে য়ে, সেই উন্নয়নের কাজ পুঁজি করেই প্রচারে ঝাঁপাতে পারবে দল ও বিরোধীরাও প্রচারে কল্কে পাবে না।
Read in English