আটের দশকে জঙ্গিদের হামলায় ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন কাশ্মীরি পণ্ডিতরা। ভূস্বর্গে সাজানো ঘর-বাড়ি ফেলে স্রেফ জীবন হাতে করে ছুটে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন দিল্লি অথবা ভারতের অন্য কোথাও। আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিলেন ত্রাণশিবিরে। এমন ৬১০ জন শরণার্থী কাশ্মীরি পণ্ডিতের জমি গত পাঁচ বছরে উদ্ধার করেছে প্রশাসন। বুধবার সংসদে এমনটাই জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই। রাজ্যসভায় এক প্রশ্নের লিখিত জবাবে রাই বলেন, 'জম্মু-কাশ্মীর সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৬১০ জন শরণার্থী পণ্ডিতের সম্পত্তি গত পাঁচ বছরে উদ্ধার হয়েছে'।
রাই জানিয়েছেন, ১৯৯৭ সালে জম্মু-কাশ্মীরের শরণার্থীদের সম্পত্তি আইন অনুযায়ী, জেলাশাসকরা এই সব কাশ্মীরি পণ্ডিতদের সম্পত্তির রক্ষাকর্তা। এই সব সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জেলাশাসকদের অতিরিক্ত ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে। ঘরহারা পণ্ডিতদের অভিযোগ গ্রহণের জন্য জম্মু-কাশ্মীর সরকার পোর্টাল চালু করেছে। গত বছর ৭ সেপ্টেম্বর ওই পোর্টাল চালু হয়েছে। সেখানে কাশ্মীরি পণ্ডিতরা তাঁদের ঘরবাড়ি ফিরে পাওয়ার দাবি জানাতে পারছেন। তারই সুফল মিলেছে। ভূস্বর্গে আবেদনকারী ৬১০ জন কাশ্মীরি পণ্ডিতের ঘরবাড়ি উদ্ধার সম্ভব হয়েছে। এই খাতে এখনও পর্যন্ত ৭৫৩.৮৯ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে বলেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানান।
পণ্ডিতরা এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যরা যাতে কাশ্মীরে ফেরেন, সেব্যাপারেও পদক্ষেপ করেছে প্রশাসন। এমনটাই দাবি করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। যাঁরা ফিরতে চেয়েছেন, তাঁদের পুনর্বাসনেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুনর্বাসনের কথা মাথায় রেখে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের জন্য উপত্যকায় তিন হাজার রাজ্য সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী উন্নয়ন তহবিল থেকে ১,০৮০ কোটি টাকা বরাদ্দও করেছে সরকার।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানান, জম্মু-কাশ্মীর সরকার ইতিমধ্যেই ১,৭৩৯ জন কাশ্মীরি পণ্ডিতের পরিবারের সদস্যকে চাকরি দিয়েছে। পাশাপাশি, ১,০৯৮ জন কাশ্মীরি পণ্ডিতের পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ থেকে সাহায্য করা হয়েছে। কাশ্মীরি পণ্ডিতদের বাসস্থান পুননির্মাণের জন্য সরকার ইতিমধ্যেই ৯২০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। ওই অর্থে ছ'হাজার শরণার্থী কাশ্মীরি পণ্ডিতের বাসস্থানের ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন।
আরও পড়ুন- এবার আরও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দরজা ফের খুলতে চলেছে
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একথা বললেও গত ডিসেম্বরে শরণার্থী কাশ্মীরি পণ্ডিতদের উপত্যকায় পুনর্বাসন নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। কারণ, দেখা গিয়েছিল, উপত্যকায় শরণার্থী কাশ্মীরি পণ্ডিতদের অস্থায়ী পুনর্বাসনের কাজ মাত্র ১৫ শতাংশ হয়েছে। সেকথা মাথায় রেখেই কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে বুধবার রাজ্যসভায় জানতে চাওয়া হয়েছিল, কাশ্মীরি পণ্ডিতদের পুনর্বাসনের কাজ কতটা এগিয়েছে। তারই জবাবে নিত্যানন্দ রাই এই তথ্য দিয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে স্থায়ী কমিটি চায় সরকার একটা সময়সীমা বেঁধে দিক। আর, ওই সময়ের মধ্যেই শরণার্থী কাশ্মীরি পণ্ডিতদের উপত্যকায় অস্থায়ী বাসস্থানের কাজ শেষ করুক সরকার। তবে, কাশ্মীরি পণ্ডিতদের অনেকেই এখনও উপত্যকায় ফিরতে চাইছেন না। কারণ, সরকার দাবি করলেও এখনও কাশ্মীর উপত্যকা পুরোপুরি শান্ত না। সেনাবাহিনীর ব্যাপক টহলদারি জন্য উপত্যকা আপাত শান্ত হলেও, পণ্ডিতদের ওপর বড় ধরনের হামলার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না শরণার্থীরা।
Read story in English