প্রশান্ত কিশোর, সংক্ষেপে পিকে। এই নামটা এখন ভারতের স্কুলপড়ুয়াদেরও অনেকে জানে। ভোটের নদী পার হতে অনেক রাজনৈতিক দলই ইদানিং সাহায্য নেন এই ভোটকুশলীর। সম্প্রতি তিনি বিহারে এক নতুন রাজনৈতিক ফ্রন্টের জন্য ভিত্তি তৈরি করছেন। পাটনারই ছেলে। তবুও এবারটা লড়াইটা প্রশান্ত কিশোরের কাছে বেশ কঠিন। এমনটাই বলছেন বিহার রাজনীতির বিশেষজ্ঞরা।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে, মহাগঠবন্ধনের অংশ হিসাবে নীতীশ কুমারকে ক্ষমতায় ফিরে আসতে সাহায্য করেছিলেন প্রশান্ত কিশোর। এরপর যোগ দিয়েছিলেন নীতীশের জনতা দল (ইউনাইটেড)-এ। নীতীশ তাঁকে পার্টির জাতীয় সহ-সভাপতির পদে বসিয়েছিলেন। জায়গাটা ছিল কার্যত নম্বর ২। নীতীশ তাঁকে একজন ক্যাবিনেট মন্ত্রীর সমতুল্য মর্যাদা দিয়েছিলেন। পরিকল্পনা ও কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য তাঁর উপদেষ্টা হিসেবে কিশোরকে মনোনীত করেছিলেন।
জেডি(ইউ)-এর জাতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) আর সি পি সিং-এর সাথে কিশোরকেও সংগঠন বিস্তারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। দলীয় বিষয়গুলো প্রত্যক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে, কিশোরকে দলের যুব ক্যাডারদের সক্রিয় করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। ২০১৯ সালে পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনে, জেডি (ইউ) ছাত্রদের শাখা রীতিমতো সাড়া ফেলে। যার জন্য কিশোরকে কৃতিত্ব দিয়েছিলেন নীতীশ। কিন্তু, কিশোরের উচ্চাকাঙ্ক্ষা বোধহয় একটু বেশি ছিল। যার জেরে জেডি(ইউ)-এর কিছু প্রবীণ নেতা এবং তরুণ কর্মীদের সঙ্গে তাঁর বৈঠক অনেকের পছন্দ হয়নি। বিশেষ করে ওই তরুণ কর্মীদের নেতা করার প্রতিশ্রুতি খোলা মনে মেনে নিতে পারেননি অনেকেই। বিশেষ করে আর সি পি সিং। যদিও তাঁর সঙ্গে কিশোরের সরাসরি কোনও দ্বন্দ্ব ছিল না।
আরও পড়ুন- লালুপ্রসাদের পথেই গো-রাজনীতি-ভোজপার্টি, বিহার বিজেপির মুখ হতে কৌশল নিত্যানন্দর
২০২০ সালের জানুয়ারিতে, কিশোরকে জনতা দল (সংযুক্ত) থেকে বহিষ্কার করা হয়। নীতীশ কুমার সেই সময় বলেছিলেন যে তিনি বিজেপির শীর্ষনেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অমিত শাহের অনুরোধেই কিশোরকে দলে নিয়েছিলেন। নীতীশ কুমারের এই বক্তব্যের বিরুদ্ধে কিশোর কোনও প্রতিবাদ করেননি। সেটাই ছিল বিহারের রাজনীতিবিদ হিসেবে কিশোরের প্রথম ইনিংস। এর আগে ভোটকুশলী হিসেবে তাঁকে অবশ্য ২০১৪ থেকেই গোটা ভারত চিনে ফেলেছিল। নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী করার জন্য বিজেপির নির্বাচনী রণকৌশলের দায়িত্ব নিয়ে কিশোর গোটা দেশে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন।
তবে, ২০২০ সালে জেডি (ইউ) থেকে বিতাড়িত হয়েও কিশোর হাল ছেড়ে দেননি। সেই বছরের শেষের দিকে, তিনি 'বাত বিহার কি' নামে একটি প্রচারাভিযান শুরু করেন। সদস্য সংগ্রহের জন্য একটি অনলাইন পোর্টালও চালু করেছিলেন কিশোর। সেখানে উন্নয়ন সূচকগুলোকে মাথায় রেখে তিনি দেখিয়েছিলেন যে কীভাবে বিহার অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় পিছিয়ে পড়েছে। কিশোরের তৈরি ভোট পরিচালনার সংগঠন আই-প্যাকের এক কর্তার কথায়, 'আমরা কয়েক লক্ষ সদস্য পেয়েছিলাম। অনলাইন পোর্টালটি ভালোই চলছিল। তারপর, আমরা অন্যান্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। তাই আর বিষয়টি এগোয়নি। তবে প্রচারের জন্য সংগ্রহ করা তথ্যগুলো এখনও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।' আর, সেই তথ্যের ভরসাতেই বিহারের রাজনীতিতে তাঁর দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করার পথে এগোতে চাইছেন প্রশান্ত কিশোর।
Read story in English