অসমে নির্বাচনী প্রচারে কংগ্রেসকে ‘রেশন চোর’ বলে কটাক্ষ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বুধবার সিপাইঝারে এক নির্বাচনী সভায় নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘একটা সময় ছিল কংগ্রেস দুর্নীতিতে মদত দিত।গরিবের রেশন অন্য কেউ খেয়ে নিত। এখন রেশন কার্ড ডিজিটাল হয়েছে, তাই চুরি করতে পারে না। ওদের কোনও নেতা নেই, আসল উপলক্ষ্যও নেই।‘
তাঁর আক্রমণ, ‘কংগ্রেসের লক্ষ্য, মিথ্যা বলে, বিভ্রান্তি ছড়িয়ে, যে কোনওভাবে ক্ষমতা দখল।‘ তিনি বিরোধী জোটকেও কটাক্ষের নিশানা বানান। কংগ্রেস আর এআইইউডিইউএফ (Cong-AIUDUF) জোট অসমে বেগ দিতে পারে বিজেপিকে। জনমত সমীক্ষায় এমন সম্ভাবনা স্পষ্ট হতেই। এই জোটকে আক্রমণ করা শুরু করে বিজেপি নেতৃত্ব। এদিন প্রধানমন্ত্রী এই জোটকে ‘মহাজোট নয়’, বরং ‘মহাঝুট’ আখ্যা দিয়েছেন। অসমের পাশাপাশি এদিন বাংলায় ভোট প্রচারে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতি আক্রমণাত্মক ছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রথম দফার নির্বাচন আর মাত্র তিন দিন বাকি। তার আগে শেষবেলায় বঙ্গ প্রচারে ঝড় তুলতে অধিকারী-গড় বলে পরিচিত কাঁথিতে বিজেপির জনসভায় এলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এদিন সভায় উপস্থিত ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী এবং তাঁর বাবা সাংসদ শিশির অধিকারী। একনজরে দেখে নিন কী বললেন নরেন্দ্র মোদী-
- স্বাধীনতার ৭৫ বছর পালনে বাংলার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে। এই ভোটে যাঁরা প্রথমবার ভোট দেবেন, তাঁদের জন্যও এই সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যুবদের সামনে আগামী ২৫ বছরের পশ্চিমবঙ্গ নির্মাণের দায়িত্ব। তার জন্যই আসল পরিবর্তনের প্রয়োজন। সোনার বাংলা গড়ার কথা এখানকার সবাই শুনছেন। বাংলার প্রতি ঘর থেকে, সবার মুখে একটাই আওয়াজ উঠছে। ২ মে, দিদি যাচ্ছে।
- দিদি এখনও তাঁদের কাছে জবাব দিতে পারেননি, যাঁদের ঘর বাড়ি শেষ হয়ে গিয়েছিল আমফানে। তারপর তাঁদের জন্য যে অনুদান পাঠানো হয়েছিল, সেটা ভাইপো উইন্ডোতে আটকে গিয়েছিল। আজ বাংলা প্রশ্ন করছে, আমফানের টাকা, চাল কে লুটে নিল? আমফানে ক্ষতিগ্রস্তরা এখনও কেন ভাঙাচোরা ঘরে বসবাস করছেন? জবাব দিন দিদি।
- যখন প্রয়োজন, তখন দিদি দেখেন না। আর ভোট আসলে উনি বলেন, দুয়ারে সরকার। এটাই আপনার খেলা। বাংলার শিশুরা পর্যন্ত আপনার খেলা বুঝে গিয়েছে। এই জন্যই ২ মে দিদিকে দুয়ার দেখিয়ে দেবে সবাই। মানুষ আপনাকে দরজা দেখিয়ে দেবে।
- বিজেপি কর্মীরা খুন হয়েছেন। তার সাজা তো পাবেনই। কিন্তু তার আগেই রাজ্যের মা-বোনেরা আপনাদের শাস্তি দেবেন। পায়ে হেঁটে বেরিয়ে আসবেন মহিলারা। হাজার হাজার মানুষ বেরিয়ে এসেছেন। দিদি আপনি শুনতে না পেলে, দেখে নিন। এই ছবিই এর প্রমাণ, বাংলার মহিলারা মনস্থির করে নিয়েছেন। তৃণমূলের খেলা শেষ হবে। উন্নয়ন শুরু হবে।
- পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়ন, এখানকার মানুষের বিকাশ হল বিজেপির একমাত্র সংকল্প। বাংলার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য আমরা প্রাণ দিয়ে চেষ্টা করব। এটা প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছি। বাংলা চায় শিক্ষা, শিল্প, কর্মসংস্থান, বাংলা চায় নারী সুরক্ষা, বাংলা চায় কৃষক সুরক্ষা, বাংলা চায় বিজেপি সরকার।
- রাজ্যে সমস্ত প্রকল্পে কাটমানি বন্ধ করবে বিজেপি। উপভোক্তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা দেবে বিজেপি। মাঝখানে দালাল, ফড়ে কেউ থাকবে না। কোনও তোলাবাজি থাকবে না।
- কেন্দ্রের বিজেপি সরকার বাড়ি বাড়ি শৌচালয় দিয়েছে, বিদ্যুৎ দিয়েছে, গ্যাস দিয়েছে। করোনার সময় মহিলাদের আর্থিক সাহায্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি দেওয়া হয়েছে। জল দেওয়ার জন্য ‘ঘর ঘর জল’ প্রকল্পের কাজ করছে। কিন্তু এখানকার সরকার সে সব করতেই দিচ্ছে না। তৃণমূল সরকারের আপনাদের জন্য কোনও চিন্তা নেই।
- মেদিনীপুর ভারতের কৃষিতে অনেক বড় স্থান নিয়ে আছে। এখানে চিংড়ির অত্য়াধুনিক চাষ হচ্ছে। কিন্তু দিদি এখানে কৃষকদের ফুড প্রসেসিং, কোল্ড স্টোরেজের সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে রেখেছেন।
- বাংলার কৃষকরা ভোলেননি, কী ভাবে দিদি ওঁদের সঙ্গে নির্মমতা দেখিয়েছেন। দিদি আপনাদের কিষাণ সম্মান নিধি থেকে বঞ্চিত করে রেখেছেন। কৃষকদের কাছে পৌঁছতে দিচ্ছে না তৃণমূল সরকার। সরকার কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু দিদি কৃষকদের শত্রু হয়ে বসে রয়েছেন।
- তাই ২ মে সব বাধার দেওয়াল ভেঙে যাবে। বিজেপি সরকার আসবে। আর কৃষকদের তিন বছরের টাকা তাঁদের দেবই আমি। গত ৩ বছরের যে টাকা দিদি আপনাদের দিতে দেননি, আমি আপনাদের দেবই।
- যে পশ্চিমবঙ্গ পুরো ভারতকে বন্দে মাতরম শিখিয়েছে, দিদি সেই বাংলায় দাঁড়িয়ে বহিরাগত বলছেন? বঙ্কিমচন্দ্র, বিদ্যাসাগররা বলেছেন, আমরা সবাই ভারতমাতার সন্তান। এখানে কোনও ভারতবাসী বহিরাগত নয়। সবাই ভারতমাতার সন্তান।