দুর্নীতির বিরুদ্ধে অপসহীনতার বার্তা দিলেন পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান। ক্ষমতায় আসার মাস কয়েকের মধ্যেই বরখাস্ত করলেন রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ বিজয় শিংলাকে। তাঁর বিরুদ্ধে টেন্ডার দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। বিজয় শিংলা টেন্ডারের বিনিময়ে দফতরের ঠিকাদার থেকে এক শতাংশ করে কমিশন চাইতেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ডাঃ সিংলা তাঁর কাছে নিজেই অপরাধ স্বীকার করেছেন। এরপরই তড়িঘড়ি পদক্ষেপ করা হয়েছে। পুলিশকেও মামলা রুজুর জন্য নির্দেশ দিয়েছেন ভগবন্ত মান।
এক ভিডিও বার্তায় মান বলেছেন যে, 'স্বাস্থ্যমন্ত্রী শিংলাকে বরখাস্ত করে আপ নেতা, কর্মী সহ সকলকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের বার্তা দিতে চেয়েছেন।'
মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, 'আমার মন্ত্রিসভার একজন মন্ত্রী তার বিভাগের প্রতিটি টেন্ডার এবং দ্রব্য ক্রয়-সংক্রান্ত লেনদেনে ১ শতাংশ কমিশন চাইছেন। যা আমার নজরে আসে। এই মামলার কথা শুধু আমিই জানতাম, মিডিয়া বা বিরোধী দল কেউই জানত না। আমি চাইলে পুরোটাই চেপে যেতে পারতাম। আমি যদি তা করতাম তবে আমি আমার বিবেকের কাছে অপরাধী হয়ে থাকতাম। আর সেই সব লক্ষ লক্ষ ভোটারদের ফাঁকি দিতাম যারা আমাকে বিশ্বাস করেছিলেন। তাই আমি তড়িঘড়ি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করেছি। আমি তাঁকে আমার মন্ত্রিসভা থেকে বরখাস্ত করছি এবং পুলিশকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছি। সে এই অপরাধের কথা স্বীকারও করেছে।'
মানের সংযোজন, 'আপনারা সবাই জানেন, আমরা একটি সৎ সরকার। এক টাকারও দুর্নীতি আমরা বরদাস্ত করব না। যখনই গ্রামে, শহরে, শহরে মানুষের কাছে যেতাম, তাদের চোখে আশার আলো দেখতাম। আমি দেখেছি যে তাদের আশা ছিল যে এমন কেউ আসবে যে তাদের দুর্নীতি কমাবে। যখন আমাকে মুখ্যমন্ত্রী পদের মুখ ঘোষণা করা হবে, তখন আপ-এর প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেছিলেন যে তিনি ঘুষ ও দুর্নীতি সহ্য করবেন না। আমি তাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম যে আমরা এই সরকারকে সেইভাবেই চালাব। আমি তাকে আশ্বস্ত করেছি যে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত কাউকে আমরা ছাড় দেব না।'
মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা যে, 'আপ সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েছে। দেশে দ্বিতীয়বারের মতো এমন ঘটনা ঘটল। ২০১৫ সালে, কেজরিওয়াল তার খাদ্য ও অসামরিক সরবরাহ মন্ত্রীকে বরখাস্ত করেছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধেও ঘুষ চাওয়ার ভিডিও দেখানো হয়েছিল। আমি সবাইকে বলতে চাই আমি ১ টাকারও দুর্নীতি বরদাস্ত করব না। তাই নিজেকে সোজা করুন। আমরা শহিদ ভগত সিংয়ের খটকার কালান গ্রামে শপথ নিয়েছিলাম, আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম যে আমরা দুর্নীতিমুক্ত সরকার চালাব। এটি আপের একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত।'
বিরোধীদের সমালোচনার প্রেক্ষিতে মান বলেছেন যে, 'বিরোধী দলগুলি বলবে যে আপের মন্ত্রী সরকার গঠনের দুই মাসের মধ্যে দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন। তবে আমি তাদের বলতে চাই যে, পদক্ষেপ করা হয়েছে। বিরোধীরা সেই দুর্নীতি জানতেও পারেনি। ওদের মুখ্যমন্ত্রীরা বলছেন যে তারা জানতেন তাদের মন্ত্রীরা মাফিয়া, তোলাবাজিতে জড়িত। তাহলে তারা ব্যবস্থা নেয়নি কেন? আমি শুধু আমার মন্ত্রীকে বরখাস্তই করিনি, তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশকেও নির্দেশ দিয়েছি। আমরা দেশে পরিবর্তন আনব।'
পা়্জাবের ভহবন্ত মান মন্ত্রিসভায় ১০ জন মন্ত্রী শপথ নেন। ডা. সিংলাকে বহিষ্কার করায় আর মাত্র ৯ জন মন্ত্রী রয়েছেন। বিধানসভার বহর অনুযায়ী পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী সহ ১৮ জন মন্ত্রী থাকতে পারেন।
মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে আপ নেতা রাঘব চাড্ডা বলেছেন, 'আম আদমি পার্টিই একমাত্র দল যার সততা, সাহস এবং ন্যায়পরায়ণতা রয়েছে। তাই দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। আমরা দিল্লিতে দেখেছি, এখন পাঞ্জাবেও দেখছি। দুর্নীতির জন্য জিরো টলারেন্স। মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মানের প্রশংসনীয় সিদ্ধান্ত।'
মন্ত্রিসভা থেকে বরখাস্ত ডাঃ শিংলা মানসার বিধায়ক। তিনি পেশায় একজন ডেন্টিস্ট এবং শহরে একটি ডেন্টাল ক্লিনিক চালান। শিংলা প্রায় সাত বছর আগে আপে যোগ দেন।
Read in English