ভোটে তাঁর মূল মন্ত্র ছিল, আসল পঞ্জাব ফেরানোর লড়াই। শহিদ ভগৎ সিংয়ের নামে শপথ নিয়ে মাথায় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ট্রেডমার্ক বাসন্তী রঙা পাগড়ি পরা এবং জনতার ভিড়ে ইনকিলাব জিন্দাবাদ স্লোগান দেওয়া। এটাই আপ সাংসদ ভগমন্ত মানের ইউএসপি। ৪৮ বছরের এই প্রাক্তন স্ট্য়ান্ড-আপ কমেডিয়ানই এবার বসতে চলেছেন পঞ্জাবের মসনদে। রাজনীতিতে আনকোড়া সদস্য থেকে ১১ বছরে মুখ্যমন্ত্রী মুখ, সিনেমার চিত্রনাট্যকেও হার মানাবে ভগবন্তের যাত্রাকে।
বিধানসভা নির্বাচনের ফলের ট্রেন্ড সাফ বলে দিচ্ছে, আম আদমি পার্টির ঝাড়ু সপাটে উড়িয়ে দিয়েছে শাসক কংগ্রেস-সহ বাকি দলগুলিকে। আপ গত ১৯ জানুয়ারি ভগবন্তকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মুখ ঘোষণা করে। ঠিক নির্বাচনের এক মাস আগে। প্রায় ২১ লক্ষ ফোন কল পেয়ে জনতার ভোটে ভগবন্ত মান মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী নির্বাচিত হন। ইতিমধ্যেই ধুরি কেন্দ্র থেকে এগিয়ে রয়েছেন ভগবন্ত। তিনি জিতলে কেজরিওয়ালের পর ভগবন্তই হবেন আপের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী।
পঞ্জাবের সাঙ্গরুর থেকে দুবারের সাংসদ কিন্তু রাজনীতির থেকে বেশি জনপ্রিয় ছিলেন হাস্যকৌতূকের দুনিয়ায়। স্কুলশিক্ষকের পরিবারে জন্ম, ১৮ বছর বয়সে প্রথম লাইমলাইটে আসেন শহিদ উধম সিং কলেজে বি.কম পড়ার সময়। একটি অডিও ক্যাসেট বের করেন হাস্যকৌতূকের উপর। তার পর ধীরে ধীরে কমেডির রাজা হয়ে যান। সামাজিক-রাজনৈতিক ব্যঙ্গাত্মক কৌতূকে ভর করে তরতরিয়ে উপরে উঠে যান। জুগনু মস্ত মস্ত নামে টিভিতে একটি কমেডি শো-ও করতে শুরু করেন। যা তাঁকে পঞ্জাবে আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা দেয়।
আরও পড়ুন Explained: পাঞ্জাবে জয়ের পথে আপ, কেন? রইল ৫ কারণ
কিন্তু কেরিয়ারের শীর্ষে পৌঁছে আচমকা রাজনীতিতে পা রাখেন ভগবন্ত। অকালিদের পরিবারের বিদ্রোহী মনপ্রীত সিং বাদলের দল পিপলস পার্টি অফ পঞ্জাবে যোগ দেন তিনি। কিন্তু ২০১২ সালের নির্বাচনে হেরে যান মান। তার পর মনপ্রীত নিজের দলকে ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রেসের সঙ্গে জুড়ে দিলে ভগবন্ত মান দল ছাড়েন। সেই সময় কেজরিওয়ালের ডাকে আম আদমি পার্টিতে যোগ দেন। বাকিটা ইতিহাস, সাঙ্গরুর কেন্দ্র থেকে ২ লক্ষ ভোটের রেকর্ড ব্যবধানে লোকসভায় জেতেন তিনি।
আরও পড়ুন কৃষক হত্যা অতীত, বিজেপিতেই আস্থা রাখছে লখিমপুর
২০১৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও আপের সবচেয়ে জনপ্রিয় মুখ ছিলেন মান। ৩০০টি সভা করেছিলেন, বাদলদের বিরুদ্ধে ব্যঙ্গাত্মক গান ছেড়েছিলেন ভোটের বাজারে। তবে ২০১৮ সালে অকালি নেতা বিক্রম সিং মাজিঠিয়ার মানহানি মামলার জেরে কেজরিওয়াল তাঁর কাছে ক্ষমা চাইলে সেই সময় প্রতিবাদ করে রাজ্য সভাপতির পদ ছেড়ে দেন। তবে মানের বিরুদ্ধে অভিযোগও রয়েছে বিস্তর। একাধিক বার মদ্যপ অবস্থায় তাঁর ছবি-ভিডিও ভাইরাল হয়। তা লোকসভায় সরব হয় বিরোধীরা। এর পর ২০১৯ সালে কেজরিওয়ালের কথায় মদ পুরোপুরি ছেড়ে দেন।
তবে বিতর্ক আজ অতীত। সব ঠিক থাকলে তিনি-ই বসছেন পঞ্চনদের দেশের গদিতে। কমেডিয়ান থেকে মুখ্যমন্ত্রী, ইতিহাসে নাম লেখাবেন ভগবন্ত মান।