' তেরে মুন্ডে কানেডা (কানাডা) জান।' ব্যস্ত বাজারে গানটা গাইছিল বছর আটের ফেরিওয়ালা ছেলেটা। দেখা গেল ওর হাতে প্ল্যাস্টিকের প্যাকেটে মোড়া ভাজা বাদাম ভালোই বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতাদের অধিকাংশই আবার শিখ তরুণ। লুধিয়ানার এই ছোট্ট দৃশ্যটা যেন, কানাডার প্রতি পঞ্জাবের তরুণ ও যুবকদের ঝোঁকটাকেই নতুন করে বুঝিয়ে দিয়ে গেল।
অবশ্য এটা নতুন কিছু না। খালিস্তান নিয়ে রাজনৈতিক-প্রশাসনিক উত্তাপে আটের দশকে তখন পঞ্জাব উত্তপ্ত। বেসামাল মাদকের বাড়বাড়ন্তে। এই পঞ্জাবকে মুখ থুবড়ে পড়া থেকে বাঁচিয়েছে কানাডা। একটু হলেও দিয়েছে শান্তির ছোঁয়া। যার আকর্ষণে দলে দলে শিখ যুবক কাজের সন্ধানে পাড়ি দিয়েছে অচেনা দেশে। সেখানে বসত করেছে। জায়গা করে নিয়েছে পাকাপাকি। স্বপ্ন দেখিয়েছে দেশে থাকা অন্যান্য শিখ যুবকদের। সেই ধারাবাহিকতা কয়েক দশক পেরিয়ে আজও চলছে। কানাডা আজও হাতছানি দেয় পঞ্জাবের তরুণ ও যুবকদের। সঙ্গে জুটেছে অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডও।
দিল্লি এবং পাটনার কয়েকটি জায়গায় যেমন আইএএস বা আইপিএস হওয়ার কোচিং সেন্টার বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে তরুণ প্রজন্মকে স্বপ্ন দেখায়। পঞ্জাবে সেই কাজটাই করে চলছে 'আইইএলটিএস' বা 'পিটিই'-র কোচিং সেন্টারগুলো। অভিবাসন, বিদেশের মাটিতে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্নের ফেরিওয়ালা এই সব কোচিং সেন্টার। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের মতো বিভিন্ন দেশে স্টুডেন্টস ভিসা পাইয়ে দেওয়ার স্বপ্নের সওদাগর।
সুলতানপুর লোধির কাছে এক গ্রামে দেখা মিলল বছর ২৫-এর হরমনপ্রীত সিংয়ের। আদতে গুরদাসপুরের বাসিন্দা হরমনপ্রীত। সুলতানপুরে এসেছেন রাজনৈতিক দলের কর্মী হিসেবে। দলের প্রচারে প্রতিদিন অংশ নিচ্ছেন। কিন্তু, তিনিও বিদেশে যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর। এর আগেও চেষ্টা করেছিলেন এই যুবক। এক আত্মীয় ইতালিতে থাকেন। তাঁকে টাকাও দিয়েছিলেন বিদেশে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য। কিন্তু, লাভ হয়নি। টাকাটা চোট গেছে। তা-ও হরমনপ্রীত আশা ছাড়তে নারাজ।
এখনও ওই আত্মীয়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে যাচ্ছেন গুরদাসপুরের এই যুবক। যদি টাকাটা ফেরত পাওয়া যায়। বলছিলেন, 'আমি বেশ কয়েকজনের থেকে ধার করে ওনাকে ৪ লক্ষ টাকা দিয়েছিলাম। ভরসা ছিল, কারণ উনি ইতালিতে থাকেন। তার ওপর আমার আত্মীয়। কিন্তু, দেখা গেল যে উনি ধীরে ধীরে আমার ফোন ধরা বন্ধ করে দিলেন। মেসেজ করলেও উত্তর দিতেন না। আমি হোয়াটসঅ্যাপে রেকর্ড করা মেসেজ পাঠালে দেখেন। কিন্তু, উত্তর দেন না।'
আরও পড়ুন- যে কোনও মুহূর্তে হামলা করবে রাশিয়া! ইউক্রেন ছেড়ে পালাচ্ছেন মার্কিন কূটনীতিবিদরা
১২ ক্লাস পাস হরমনপ্রীত এখন গুরদাসপুরের এক কারখানায় কাজ করেন। এখন তাঁর লক্ষ্য একজন বিশ্বাসযোগ্য দালালকে খুঁজে পাওয়া। যে তাঁর বিদেশ যাওয়ার স্বপ্ন সফল করবে। কারণ, পঞ্জাবে কোনও চাকরি নেই। বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম দফার মুখে দাঁড়িয়ে এই অভিযোগটাই এখন তাড়া করে বেড়াচ্ছে পঞ্জাবের শাসক দলকে।
হরমনপ্রীতদের মতো যাঁরা কোনও রাজনৈতিক দলের কর্মী। যাঁরা বিধানসভা নির্বাচনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। তাঁরাও কিন্তু বিশ্বাস করেন না, যে যাঁকে ভোট দিচ্ছেন বা যে দলকে ভোট দিচ্ছেন, সে এসে পঞ্জাবে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটাতে পারবে। অথবা বলা ভালো ঘটাবে। এবারের বিধানসভা নির্বাচনে তাই বিরোধী- শিরোমণি অকালি দল এবং আম আদমি পার্টি ক্ষমতায় এলে ব্যাপকহারে কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। প্রথম দফা বিধানসভা নির্বাচনের আগে এখন এই পরিস্থিতিতেই দাঁড়িয়ে পঞ্জাব এবং তার যুবসমাজ। বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে তাই তাঁদের কোনও আগ্রহই নেই।
Read story in English