পলাশির যুদ্ধে বেশিসংখ্যক সৈন্য নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়েছিলেন মিরজাফর। তিনি লড়াই করেননি। কথিত আছে, উপায় না-পেয়ে শেষপর্যন্ত নিজের উষ্ণীষ বা পাগড়ি মিরজাফরের পায়ের কাছে রেখেছিলেন নবাব সিরাজদৌল্লা। অনুরোধ করেছিলেন, মিরজাফর সৈন্যদের যুদ্ধের আদেশ দিন। বদলে, জয়ী হলে মিরজাফরই হবেন বাংলার নবাব। উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের আগেও যেন পলাশির এই অবস্থার পুনরাবৃত্তি হয়েছিল।
এখানে অবশ্য ভোটযুদ্ধ। প্রতিপক্ষ রবার্ট ক্লাইভের ব্রিটিশ সেনা নয়, ভারতীয় জনতা পার্টি। আর, অনেকটা যেন সিরাজের ভূমিকাতেই পাওয়া গিয়েছিল কংগ্রেসে গান্ধী পরিবারের উত্তরসূরি রাহুল গান্ধীকে। শনিবার এক অনুষ্ঠানে সদ্যসমাপ্ত উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচন প্রসঙ্গে স্মৃতিচারণ করছিলেন রাহুল। তখনই তিনি জানান, বহুজন সমাজ পার্টির প্রধান মায়াবতীর কাছে উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রেস গিয়েছিল। মায়াবতীকে মুখ্যমন্ত্রী পদে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছিল। কিন্তু, পলাশির যুদ্ধের মিরজাফরের মতোই মায়াবতীও এক্ষেত্রে কোনও উত্তর দেননি। মিরজাফর যেমন ব্রিটিশের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন। মায়াবতী এক্ষেত্রে বিজেপির সঙ্গে। কার্যত এমনটাই বোঝাতে চেয়ে রাহুলের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলোর চাপেই চুপ থাকতে বাধ্য হয়েছিলেন মায়া।
রাহুলের কথায়, 'আপনারা নিশ্চয়ই দেখেছেন যে মায়াবতী ভোটে লড়েননি। আমরা মায়াবতীর কাছে একটা বার্তা পাঠিয়েছিলাম, জোটের বার্তা, বলেছিলাম, আপনিই মুখ্যমন্ত্রী হবেন। তিনি কথা পর্যন্ত বলেননি। কাঁসিরামের মতো মানুষদের মতো আমিও তাঁকে ভীষণ শ্রদ্ধা করি। তাঁরা উত্তরপ্রদেশে দলিত শ্রেণিকে জাগানোর জন্য রক্ত, ঘাম ফেলেছেন। এটা অন্য কথা যে কংগ্রেস হেরে গেছে। কিন্তু, আজ মায়াবতী বলছেন, তিনি দলিতদের কণ্ঠস্বরের জন্য লড়াই করবেন না।' দিল্লির জওহর ভবনে 'দি দলিত ট্রুথ' নামে এক বই প্রকাশের অনুষ্ঠানে রাহুল এই গোপন তথ্য ফাঁস করে দেন।
তবে, রাহুল একথা বললেও, উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের সময় কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক তথা উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢড়া বারবার বলেছিলেন, তাঁরা নির্বাচনে একা লড়বেন। ফলে, রাহুলের দাবি ঘিরে স্বভাবতই নতুন ধন্দ তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন মহলের অভিযোগ, ক্ষয়িষ্ণু কংগ্রেস। তারপরও নির্বাচনে হারের দায় নিতে নারাজ গান্ধী পরিবারের সদস্যরা। তাই মায়াবতীর ঘাড়ে চাপিয়ে এখন হারের দায় এড়ানোর চেষ্টা চালালেন গান্ধী পরিবারের উত্তরসূরি।
Read story in English