পদ্মের পাখির চোখ ২০২৪-য়ের সভা। উত্তরের রাজ্যগুলিতে আগামী লোকসভায় দলের ভাল ফল হবে বলে একপ্রকার নিশ্চিৎ বিজেপির শীর্ষ নেতারা। তবে ভাবাচ্ছে দেশের দক্ষিণের পাঁচ রাজ্য। কিন্তু, হাল ছাড়তে নারাজ মোদী, শাহ, নাড্ডারা। তামিলনাড়ু, কেরল, কর্ণাটক, তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশ দলের বিস্তারে ২০১৯-য়ের দু'বছর আগে থেকেই একটি কৌশল তৈরি করেছিলেন 'চাণক্য' অমিত শাহ। মূলত আরএসএসের আদর্শ ও মোদীর ক্যারিশ্মার উপর ভর করেই সেই কৌশল তৈরি হয়েছিল। কিন্তু, সময়ের সঙ্গেই দাক্ষিণাত্য বিজয়ে বিজেপির প্রচার কৌশলে বদল ঘটানোর পরিকল্পনায় গেরুয়া শিবির।
অন্যান্য জাতীয় দল থেকে প্রতিষ্ঠিত নেতাদের বিজেপির অংশ করা, অন্য রাজ্য থেকে দলীয় নেতৃত্বকে দক্ষিণ পরিচয় করিয়ে দেওয়া, জনপ্রিয় চলচ্চিত্র তারকাদের বিজেপিতে অন্তর্ভুক্ত করা এবং আঞ্চলিক দলগুলিতে ফাটল ধরিয়ে পদ্মের ভিত শক্তিশালী করার পরিকল্পনা বছর তিনেক আগে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু, এর সবকটিতে এখনও সাফল্য আসেনি। ফলে, ২৪-য়ের লোকসভার কথা ভেবেই কৌশল বদলানোর পথে বিজেপি।
উত্তরের কৌশলে ভর করে দক্ষিণের রাজনৈতিক ময়দানে খেললে দল ভাল ফল করবে না বলে স্বীকার করেছেন গেরুয়া নেতারা। প্রচারে হিন্দুত্ব থাকবে, কিন্তু দেশের দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে প্রচারে উন্নয়নকেই প্রকাশ্যে হাতিয়ার করতে চাইছে বিজেপি।
'কংগ্রেসমুক্ত ভারত'- বিজেপির এডেন্ডা। এর সঙ্গেই চলতি বছর দলের প্রতিষ্ঠা দিবস থেকে রাজনৈতিক দলে 'পরিবারতন্ত্র'কে নিশানা করেছে গেরুয়া বাহিনী। এক্ষেত্রে বিজেপির নজরে কংগ্রেস হলেও, এক ঢিলে দুই পাখি মারার মত দক্ষিণের আঞ্চলিক দলগুলিকেও আক্রমণ করা যাচ্ছে বলে মনে করছে দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গের নেতৃত্ব।
তবে, শুধু এতেই চিঁড়ে নাও ভিজতে পারে। আঙ্কায় বিজেপি। তাই, হায়দ্রাবাদ কনক্লেভে মোদীর মুখে সংখ্যালঘু মুসলমান, খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের পিছিয়ে পড়াদের উন্নয়নের কথাও শোনা গিয়েছে, যা মূলত দক্ষিণের রাজ্যগুলির কথা মাথায় রেকেই।
পাশাপাশি দক্ষিণের রাজ্যগুলির ভোট টানতে আরও বেশকিছু পদক্ষেপের পরিকল্পনা করেছে বিজেপি। যেমন, কর্ণাটক ছাড়া বাকি চার রাজ্যে (কেরল, তেলেঙ্গানা, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ) এলাকাভিত্তিকভাবে (বিশেষ করে যেখানে বিজেপির শক্তি বেশি)প্রচারে জোর দেওয়া হবে। নিশ্চিৎ করা হবে যাতে কেন্দ্রের উন্নয়ন প্রকল্পগুলির সুবিধা মানুষের কাছ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। এক্ষেত্রে লোকসভাভিত্তিকভাবে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে দলের মন্ত্রীদের।
উদাহরণস্বরূপ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, অশ্বিনী কুমার চৌবে এবং শোভা করন্দলাজে কেরলের লোকসভা কেন্দ্রগুলির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যেখানে গত বছরের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থীরা তুলনামূলকভাবে ভাল ফল করেছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশীকে তেলেঙ্গানার নির্বাচনী এলাকার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তামিলনাড়ুতে, বিজেপি প্রভাবশালী ব্যেনে সম্প্রদায়কে আরও কাছে টানার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে। নয়া কৌশলে প্রায় ১৫০টি দুর্বল নির্বাচনী এলাকায় 'প্রবাস' প্রচারাভিযান চলবে। সহযোগী দল বাছার ক্ষেত্রেও আরও মনযোগী হতে হবে বলে মনে করা হচ্ছে। গুরুত্ব দিতে হবে মহিলাদের ভোট জয়েও। দক্ষিণ রাজ্যগুলিতে আরও বেশি পোক্ত সংগঠন ও আরও বেশি আসন জয়ে মরিয়া বিজেপি।
দক্ষিণের প্রতি বিজেপির আগ্রহ বোঝাতে কেন্দ্র সম্প্রতি রাজ্যসভায় মনোনীত করেছে খ্যাতনামা ক্রীড়াবিদ পিটি ঊষা (কেরালা), সঙ্গীত শিল্পী ইলাইয়ারাজা (তামিলনাড়ু), জনহিতৈষী বীরেন্দ্র হেগগড়ে এবং চিত্রনাট্যকার কে ভি বিজয়েন্দ্র প্রসাদকে (অন্ধ্রপ্রদেশ)।