ইউক্রেনে হামলা ঠেকাতে রাশিয়ার ওপর চাপ সৃষ্টি করুন। কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের ওপর এই ইস্যুতে এবার চাপ তৈরি করল বিজেপির পরামর্শদাতা সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ। এই ব্যাপারে সংঘের জাতীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ইন্দ্রেশ কুমার শুক্রবার মোদী সরকারের কাছে আবেদন করেছেন। তাঁর আবেদন, অন্য দেশগুলো যেমন রাশিয়ায় হামলা ঠেকাতে চেষ্টা করছে, সেই চেষ্টায় শামিল হোক কেন্দ্রও। জরুরি ভিত্তিতে ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন বন্ধ করুক করুক। আর, সেজন্য হস্তক্ষেপ করুন প্রধানমন্ত্রী।
ইউক্রেন পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠার মধ্যেই ভারতের ভূমিকার প্রশংসা করেছিল রাশিয়া। রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ইউক্রেন ইস্যুতে ভারতের অবস্থানকেও প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আর, এই কারণে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি সাহায্য চেয়েছিলেন ভারতের। নয়াদিল্লিতে ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত সেই সাহায্যের আবেদন পৌঁছে দিয়েছিলেন বিদেশ মন্ত্রকের কাছে। কিন্তু, ভারত তাতে আলাদা করে সাড়া দেয়নি। এটা ইউক্রেন এবং রাশিয়ার পারস্পরিক বিষয় বলেই ভারত মনে করে।
অতীতে পরমাণু শক্তিধর আমেরিকা এবং রাশিয়ার দ্বিমেরু বিশ্বেও ভারত তার নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রেখেছিল। সঙ্গে, শান্তির বার্তাও বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দিয়েছে। ইউক্রেন ইস্যুতেও নয়াদিল্লি যে সেই অবস্থান বজায় রাখায় বিশ্বাসী, তা স্পষ্ট করে দিয়েছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে এই কঠিন এবং কঠোর পরিস্থিতির মধ্যেই ফোনালাপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ভারত এবং রাশিয়ার অতীত এবং সুদৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ অবস্থান যেন আগামী দিনেও বজায় থাকে, সেই বার্তা তিনি ফোনালাপে দিয়েছেন। সঙ্গে, ভারত যে শান্তি এবং আর্থিক সমৃদ্ধি দৃঢ় করতে বদ্ধপরিকর, তার বার্তাও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
কীভাবে ইউক্রেন পরিস্থিতির উন্নতি হবে, শান্তি ফিরবে, বর্তমানে সেই প্রশ্ন গোটা বিশ্বের। প্রায় সমগ্র বিশ্ব এখন চায় রাশিয়া তার সামরিক আগ্রাসন থামাক। বিশ্ববাসীর সেই সুরে সুর মিলিয়ে সংঘ পরিবার তাই ইউক্রেনে শান্তি দেখতে আগ্রহী। আর, এজন্যই সংঘের অন্যতম শীর্ষনেতা এই রুশ আগ্রাসন থামানোর ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।
বিশেষ করে, শুক্রবার হামলার দ্বিতীয় দিনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমের জেলেনস্কির টুইটের পর সেই দাবি অত্যন্ত জোরালো মনে হয়েছে সংঘের কাছে। জেলেনস্কি টুইট করেছেন, ন্যাটোর ওপর থেকে আস্থা হারিয়েছে ইউক্রেন। তাঁরা চান নিরপেক্ষ দেশ হিসেবে টিকে থাকতে। এজন্য কোনও দেশ যাতে মধ্যস্থতা করে, সেই আবেদনও জানিয়েছেন জেলেনস্কি।
সংঘও সেই মতামতে বিশ্বাস করে। সংঘ নেতৃত্বের ধারণা, যুদ্ধ কোনও কিছুর সমাধান হতে পারে না। যুদ্ধ কেবলমাত্র মানবতার ওপর আঘাতই হেনে থাকে। আর, সেই কথা মাথায় রেখে শুধু মোদীই নন। বিশ্বের তাবড় রাষ্ট্রনেতাদের কাছেও সংঘ নেতৃত্বের তরফে ইন্দ্রেশ কুমার ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি দ্রুত মেটানোর আবেদন জানিয়েছেন। সংঘের রাষ্ট্রীয় মুসলিম মঞ্চ এবং রাষ্ট্রীয় খ্রিস্টান মঞ্চেরও প্রতিষ্ঠাতা ইন্দ্রেশ কুমার। সেই সূত্রে তিনি মুসলিম এবং খ্রিস্টান নেতাদের কাছেও আবেদন জানিয়েছেন, তাঁরা যাতে ইউক্রেনের পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করেন। আর শান্তি, সম্প্রীতি এবং সৌভ্রাতৃত্ব বজায় রাখার জন্য পুতিনের কাছে আবেদন জানান।