কংগ্রেস, এনসিপি-র সঙ্গে জোট গড়ে মহারাষ্ট্রের আড়াই বছর সরকার চালিয়েছে শিবসেনা। মএই সময়কালে মহারাষ্ট্রের একজন রাজনীতিবিদের উত্থান হয় উল্কার গতিতে। গোটা মেয়াদজুড়ে সংবাদ শিরোনামে থেকেছেন শিবসেনার জাতীয় মুখপাত্র তথা সামনার সম্পাদক সঞ্জয় রাউত। আপাতত সেনাপ্রধান উদ্ধবের থেকেই দলের বিদ্রোহীদের মূল নিশানায় তিনিই। সেনার অন্দরে গুঞ্জন, সঞ্জয় রাউতের জেদের জেরেই বিজেপির সঙ্গে ২৫ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন উদ্ধব ঠাকরে। গড়ে ওঠে একদা বিরোধী নিয়ে মহা বিকাশ আগাড়ি সরকার।
সঞ্জয় রাউত দলের মুখপত্র ও সামনার দীর্ঘদিনের সহযোগী সম্পাদক হিসাবে কাজ সামলেছেন। ২০১৯ সাল পর্যন্ত বেশিরভাগ সময়ই সামনার সম্পাদকীতে প্রকাশিত লেখার জন্য তাঁকে চিনত মানুষ। কিন্তু সেই বছর বিধানসভা নির্বাচনের পরেই লাইমলাইটে আসেন উদ্ধব ঘনিষ্ঠ এই নেতা। এরপর পরের আড়াই বছর সসমই খবরে থেকেছেন তিনি।
রাউত প্রথম ২০০৪ সালের জুলাই মাসে রাজ্যসভায় নির্বাচিত হন। তার পরেই, সর্বসম্মতিক্রমে উচ্চকক্ষে দলের প্রধান হুইপ হিসাবে নির্বাচিত হন। রাজ্যসভায় তাঁর বক্তৃতার জন্য নিজের দলের নেতাদের তো বটেই, প্রতিপক্ষ দলগুলির নেতৃত্বেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন।
সঞ্জয় এনসিপি-কংগ্রেসের সঙ্গে ২০১৯ সালে জোট গঠনে একটি বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন বলে জানা যায়। অনেকের দাবি ছিল যে, এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে এটি সম্ভব হয়েছিল।
নির্বাচনের পর প্রায় এক মাসের টানাপোড়ের শেষে মহারাষ্ট্রে সরকার গঠন হয়। শিবসেনার বিধায়ক, কর্মীদের পাশাপাশি অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কাছে মূলত সঞ্জয় রাউতই বার্তা পাঠান যে, মহারাষ্ট্রের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হবেন শিবসেনা থেকেই। বারবার এই দাবি করে নিজের দাবি বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতেও সফল হয়েছিলেন তিনি। সেই সময় ক্রমাগত রাউত বলতেন, "মহারাষ্ট্রে সরকার গঠিত হবে এবং সেনা তার নেতৃত্ব দেবে।"
পরে উদ্ধব ঠাকরে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিলে রাউত শেষ হাসি হাসেন।
এরপর আরও উত্থান হয় রাউতের প্রতিপত্তির। উদ্ধবের পর শিবসেনায় যে তিনিই সেকেন্ড-ইন-কমান্ড তা ক্রমেই প্রতিষ্ঠা পায়। যা একনাথ শিণ্ডের কাছে ছিল অন্যতম ধাক্কা। বিদ্রোহী ৪০ জন সেনা বিধায়কদের মধ্যে অন্তত ১২ জনই রাউতের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন। কেউ কেউ দাবি করেছেন যে, ৃ "সঞ্জয় রাউত এনসিপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে দলকে শেষ করছে।"
রাউতের শব্দ চয়নে আপত্তি জানিয়ে শিন্দে শিবিরের মুখপাত্র দীপক কেসারকার বলেছিলেন, “তিনি তাঁর মুখ বন্ধ করে দলের ক্ষতি করছেন। কোনও দলের সঞ্জয় রাউতের মতো মুখপাত্র থাকা উচিত নয়। তিনি দল শেষ করার মিশনে রয়েছেন। সমস্ত বিধায়ক তাঁর বক্তব্যে বিরক্ত এবং আরও অনেকে আমাদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন।
সে আমাদের লাশ, মহিষ বলে মনে করে। তাঁকে মনে রাখতে হবে যে তিনি আমাদের ভোটের মাধ্যমে এ মাসের শুরুতে রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছেন। আমরা যদি মহিষ এবং মৃতদেহ-ই হই, তবে তাঁর কিছু আত্মসম্মান থাকা উচিত এবং সাংসদ পদ থেকে পদত্যাগ করা উচিত।”
বিদ্রোহী বিধায়ক সঞ্জয় রাঠোর এর আগে অভিযোগ করেছিলেন যে ঠাকরে তাদের সাথে আলোচনার জন্য প্রস্তুত ছিলেন কিন্তু রাউত পরিকল্পনাটি "চলান" করেছিলেন।
অবশ্যই পড়ুন |কয়েকদিন আগে, একনাথ শিন্ডে এমএলসি নির্বাচনে কংগ্রেসের পক্ষে ভোট নিয়ে সঞ্জয় রাউত এবং আদিত্য ঠাকরের সাথে তর্ক করেছিলেন
এই অভিযোগের জবাবে রাউতের দাবি ছিল, "বিদ্রোহীরা কেবল তাঁদের পদক্ষেপকে ন্যায্যতা দেওয়ার চেষ্টা করছে। প্রথম দিকে তারা বলেছিল যে তাঁরা হিন্দুত্বের জন্য বিদ্রোহ করেছিল, তারপরে তাঁরা বলেছিল যে তহবিলের সমস্যা হচ্ছিল। এরপর বললেন, এনসিপি তাদের হয়রানি করছে। এখন তাঁরা বলছে, বিদ্রোহ আমার কারণে। আমি মনে করি তাঁদের প্রথমে একসঙ্গে বসে একটি কারণ নির্ধারণ করা উচিত এবং আমাদের বলা উচিত।"
রাউত, যাঁর পরিবার মহারাষ্ট্রের রায়গড় জেলার আলিবাগের বাসিন্দা। মুম্বাইয়ের দাদরে বেড়ে ওঠেন উদ্ধাব ঘনিষ্ঠ এই শিবসেনা নেতা।
গত মাসে, সঞ্জয় রাউত একটি জমি কেলেঙ্কারিতে ইডি-র নজরদারিতে আসেন। তাঁকে 10 ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
রাউত ১৯৮০ সালে মুম্বাই-ভিত্তিক মারাঠি সাপ্তাহিক 'মারমিক'-তে সাংবাদিক হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৮১ সালে, তিনি দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস গ্রুপের মারাঠি সাপ্তাহিক লোকপ্রভা-এর সম্পাদকীয় বোর্ডে যোগদান করেন, যেখানে তিনি মুম্বাইয়ের আন্ডারওয়ার্ল্ডের উপর অনুসন্ধানমূলক কাহিনীর একটি সিরিজ লিখেছিলেন।
1991 সালে তার ত্রিশের দশকে, সেনার প্রতিষ্ঠাতা বাল ঠাকরে তাকে হাতে তুলে নেন এবং 'সামনা'-এর নির্বাহী সম্পাদক হন। এখানেই বাল ঠাকরের সাথে এবং পরবর্তীকালে উদ্ধব এবং রাজ ঠাকরের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে।