একনাথ শিণ্ডে নাকি উদ্ধব ঠাকরে- শিবসেনার রাশ থাকবে কার হাতে? তার নিষ্পত্তি হতে পারে সুপ্রিম কোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে। বুধবার এই সংক্রান্ত একটি মামলাতে প্রধান বিচারপতি এনভি রামানার নেতৃত্বাধীন কৃষ্ণ মুরারি ও হিমা কোহলির বেঞ্চ জানিয়েছে যে, একনাথ শিণ্ডে এবং উদ্ধব ঠাকরের নেতৃত্বে শিবসেনার গোষ্ঠী বিরোধ সম্পর্কিত মামলা বৃহত্তর বেঞ্চে পাঠানো হতে পারে। ঘর গুছোতে উভয় শিবিরকেই ২৭ জুলাই পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। এই সম্পর্কিত মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ১ অগাস্ট।
উদ্ধব ঠাকতে মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন শিবসেনার ১৬ জন বিধায়ককে বরখাস্ত, পরিষদীয় দলনেতা বদল, দল পরিচালনার রাশ, একনাথ সরকারের বৈধতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মোট পাঁচটি মামলা হয়েছিল। একটি মামলা করেছিল শিণ্ডে শিবির। সেইসব নিয়ে এদিন শুনানি ছিল দেশের শীর্ষ আদালতে।
বালাসাহেব পুত্র উদ্ধবের হয়ে আদালতে লড়ছেন আইনজীবী কপিল সিবাল। তিনি ডিভিশন বেঞ্চের সামনে বলেন, 'শিবসেনার চিফ হুইপ হিসাবে শিণ্ডে শিবির দ্বারা মনোনীত ব্যক্তিকে স্বীকৃতি দেওয়ায় মহারাষ্ট্র বিধানসভার স্পিকারের ভূমিকা চ্যালেঞ্জের মুখে। দলের দ্বারা মনোনীত সরকারি হুইপ ছাড়া অন্য কাউকে হুইপরূপে স্পীকারের স্বীকৃতি খুবই খারাপ।' সিবালের যুক্তি, মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল ভগত সিং কোশিয়ারি কীসের ভিত্তিতে নতুন মুখ্যমন্ত্রীকে সরকার গড়তে শপথবাক্য পাঠ করালেন? কারণ বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন।
সিবাল আরও বলেছিলেন যে, 'সংবিধানের দশম তফসিলের রক্ষাকবচ থাকলেও যে কোনও রাজ্যের সরকারকে ফেলে দেওয়া গণতন্ত্রের বিপদ। দশম তফসিল অনুসারে, ৪০ জন সেনা বিধায়ক যাঁরা শিণ্ডে শিবিরে চলে গিয়েছিলেন তাঁদের দলীয় সদস্যপদ চলে গিয়েছে। ফলে তাঁরা আর শিবসেনার বিধায়ক হওয়ার যোগ্য নন। এছাড়াও বিদ্রোহীরা দলের হুইপ লঙ্ঘন করে বিজেপির স্পিকার প্রার্থীকে ভোট দিয়েছে।'
উদ্ধব ঠাকরে শিবিরের অভিযোগ, 'জনগণের রায়ে কী হবে? দলত্যাগ রোধে যে তফসিলটি ব্যবহার করা হয়েছে তা দলত্যাগকে উস্কে দেওয়ার জন্যই। এছাড়া, দশম তফসিলটি কার্যত ওলোটপালট হয়ে গিয়েছে।'
সিনিয়র অ্যাডভোকেট অভিষেক মনু সিঙ্ঘভিও ঠাকরে শিবিরের পক্ষেও আদালতে হাজির হয়েছিলেন। বলেন, 'দশম তফসিলের শর্ত হল যে, দলত্যাগী বিধায়কদের কেবল দুই-তৃতীয়াংশ গেলেই হবে না, দুই-তৃতীয়াংশ বিধায়ককে অন্য দলের সঙ্গে যুক্ত হতে হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে শিবসেনার বিদ্রোহী বিধায়করা অন্য দলের সঙ্গে একীভূত হননি। তাঁরা নিজেদের বিজেপি বলছে না'
এছাড়াও উদ্ধব শিবিরের পক্ষে যুক্তি দিয়ে, সিনিয়র অ্যাডভোকেট মহেশ জেঠমালানি বলেছিলেন, 'বিধায়কদের পদ খারিজের বিষয়টি রাজ্যপালের দেখা উচিত নয়।'
একনাথ শিণ্ডেদের পক্ষে সওয়ালকারী আইনজীবী হরিশ সালভের যুক্তি, 'একটি দলের অধিকাংশ বিধায়ক, নেতা যদি মনে করেন যে অন্যজনের নেতৃত্ব দেওয়া উচিত তবে সেটা ভুল নয়। যে মুহুর্তে আপনি দলের মধ্যে যথেষ্ট শক্তি সংগ্রহ করবেন এবং দল ত্যাগ না করে নেতাকে প্রশ্ন করার জন্য পার্টির মধ্যে থাকবেন, এবং বলবেন যে আমরা আপনাকে পরাজিত করব, তাহলে সেটি দলত্যাগ নয়।'
উভয়পক্ষের সওয়াল জবাব শোনার পরই তিন সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চ মনে করছে, এই মামলার নিষ্পত্তি বৃহত্তর বেঞ্চে হতে পারে।