অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণের সুপ্রিম রায়ের পর গত দুবছরে জমি কেলেঙ্কারির খবর দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত হতেই একের পর এক বিরোধী দল নিশানা করেছে বিজেপিকে। এবার শিবসেনা তাদের দলীয় মুখপত্রে বিজেপি এবং তাঁর হিন্দুত্ব এজেন্ডাকে আক্রমণ করল। জমি কেলেঙ্কারি নিয়ে বিজেপিকে চোরবাজার বলে তোপ দেগেছে শিবসেনা।
বৃহস্পতিবার মুখপত্র সামনা-তে সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে, বিজেপির হিন্দুত্ব হল চোরবাজারের সমান। এটা দিন দিন পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। আর অযোধ্যার জমি কেলেঙ্কারি সেই চোরবাজারের অংশ। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে ৯ নভেম্বর ঐতিহাসিক রায়ে অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণের অনুমতি দেয় সুপ্রিম কোর্ট। তার পর থেকে রাম জন্মভূমির জমি মহার্ঘ হয়ে উঠেছে। কার্যত রিয়েল এস্টেটের ব্যবসার জায়গা হয়ে উঠেছে অযোধ্যা। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শ্রী রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্ট গঠিত হয়। এখনও পর্যন্ত যা ৭০ একর জমি অধিগ্রহণ করেছে।
কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, ব্যক্তিগত মালিকানায় জমি কেনার ধুম পড়ে যায় অযোধ্যায়। সেই দলে বিধায়ক থেকে মেয়র, উপ জেলাশাসক, পুলিশ কর্তা, সরকারি আধিকারিকরাও রয়েছেন। বিধায়কদের আত্মীয়, আমলা এবং তাঁদের স্বজন, স্থানীয় সরকারি আধিকারিকরাও জমি কিনেছেন অযোধ্যায়। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের তদন্তে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
বিধায়ক, মেয়র, ওবিসি কমিশনের সদস্য নিজেদের নামে জমি কিনে আত্মীয়দের দিয়েছেন। এমন ১৪টি কেস সামনে এসেছে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের তদন্তে। দেখা গিয়েছে, শীর্ষ আদালতের রায়ের পর আধিকারিকদের পরিবারের সদস্যরা প্রস্তাবিত রাম মন্দির নির্মাণের ৫ কিমির মধ্যে একের পর এক জমি কিনেছেন।
স্বার্থের সংঘাতের অভিযোগ উঠেছে মহর্ষি রামায়ণ বিদ্যাপীঠ ট্রাস্টের বিরুদ্ধে। কারণ, পাঁচটি কেসের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, জমির বিক্রেতা এই ট্রাস্ট। দলিত গ্রামবাসীদের কাছ থেকে জমি কিনেছেন ওই সরকারি আধিকারিকরা, তার পর তা আত্মীয়দের দিয়ে দিয়েছেন। অযোধ্যায় জমির রেকর্ড, প্লটে গিয়ে খতিয়ে দেখে আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস তদন্ত করে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে।
আরও পড়ুন রাম মন্দির নিয়ে সুপ্রিম-রায়ের পরেই তৎকালীন DM-র বাবার নামে অযোধ্যায় জমি
এই কেলেঙ্কারির খবর প্রকাশিত হতেই গতকালই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। কিন্তু বিরোধীরা ছাড়বার পাত্র নয়। শিবসেনা সামনা-তে লিখেছে, অযোধ্যা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর বিজেপি নেতা, বিধায়ক এবং মেয়র অযোধ্যায় আইনি-বেআইনি ভাবে জমি কিনেছে। সবকটি লেনদেন সন্দেহজনক এবং বিস্ময়কর বটে।
এতে আরও লেখা হয়েছে, "প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, আরএসএস প্রধান মোহগন ভাগবত এবং মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের উপস্থিতিতে মন্দিরের ভূমিপুজো হয়েছিল। আর সেই মুহূর্ত থেকেই বিজেপিতে থাকা ব্যবসায়ীরা মন্দির চত্বরের জমি বিক্রি করা শুরু করে দেয়। মন্দির ট্রাস্ট ৭০ একর জমি অধিগ্রহণ করেছে আর একইসঙ্গে বিজেপি বিধায়ক, কাউন্সিলর, পুলিশ আধিকারিক যাঁরা দলের ঘনিষ্ঠ তাঁরা মোটা টাকায় জমি কিনেছেন।"
আরও পড়ুন অযোধ্যায় বিরাট জমি কেলেঙ্কারি, রাম জন্মভূমিতে বিধায়ক থেকে মেয়রের নামে একাধিক প্লট
আরও লেখা হয়েছে, "দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বিষয়টি গোচরে এনেছে। মন্দির চত্বরের জমি কীভাবে মন্দির তৈরির আগেই বিক্রি করা হয়েছে। মন্দির তৈরি হলে গোটা এলাকা পাল্টে যাবে। জমির দামও অনেক বেড়ে যাবে। ধর্মের নামে এইভাবে ব্যবসা চলছে। কে আন্দোলনের জন্য রক্ত দিল আর কে মরল আর এখন কে লাভের গুড় খাচ্ছে? এটা দুর্নীতি নয়তো আর কী?"
সবশেষে বিজেপিকে তোপ দেগে লেখা হয়েছে, "অযোধ্যার মেয়র একটুকরো জমি কিনে কয়েক মিনিটের মধ্যে রাম জন্মভূমি ট্রাস্টকে ১৬ কোটি টাকায় বিক্রি করে দেন। ওই মেয়র বিজেপির লোক। ভগবান রামের নামে চোরবাজার হল বিজেপি। যদি কেউ একে হিন্দুত্ব বলে, তাহলে তাঁর সামনে আমাদের হাতজোড় করা উচিত।"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন