উত্তরপ্রদেশে যোগীর হাত ধরেই সাফল্য পেয়েছে পদ্ম বাহিনী। ২০২৩ সালের নভেম্বরের আগেই ভোট হবে হিন্দি বলয়ের আরও দুই গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড়ে। ২৪-এর লোকসভার আগে এই দুই রাজ্য জয় গেরুয়া শিবিরের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফলে এখন থেকেই নির্বাচনে ঝাঁপানোর প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন জেপি নাড্ডারা। চলছে 'কাপ্তান' খোঁজার পালা।
মধ্যপ্রদেশে বহু কাণ্ডের শেষে ক্ষমতা হাতে পেয়েছিল বিজেপি। পোক্ত হাতে রাশ ধরতে অভিজ্ঞ শিবরাজ সিং চৌহানেই ভরসা রেখেছিলেন মোদী-শাহরা। বড় অদলবদল না হলে চারবারের এই মুখ্যমন্ত্রীকেই মুখ করে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে ঝাঁপাবে বিজেপি। কিন্তু, ছত্তিশগড়ে দল বিরোধী বেঞ্চে। সঙ্গে রয়েছে গোষ্ঠী কোন্দল। তাই আপাতত, কাউকে মুখ করে ভোটে ঝাঁপানোর বদলে ধীরে চলো নীতিতে নাড্ডা অ্যান্ড কোম্পানি।
গত বৃহস্পতিবার, বিজেপির কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতৃত্ব দিল্লিতে দলের মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তিশগড়ের কোর গ্রুপের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
মধ্যপ্রদেশ সম্পর্কিত বৈঠকে, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা, সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বি এল সন্তোষ এবং রাজ্যের নেতাদের ছাড়াও দলের রাজ্য ইনচার্জ পি মুরলীধর রাও উপস্থিত ছিলেন। ভোটের দিকে লক্ষ্য রেখে, রাজ্যে কাউন্সিলের শূন্যপদ পূরণের মতো প্রস্তুতিমূলক কাজগুলিকে ত্বরান্বিত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। মন্ত্রীদের কাজ, রাজ্য-চালিত বোর্ড এবং বুথ স্তরের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড জোরদার করানির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
জানা গিয়েছে, রাজ্যস্তরে নেতা বদলের কোনও পরিকল্পা বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নেই। এ নিয়ে আলোচনাও হয়নি। শিবরাজেই শাসক দলের দিল্লি নেতৃত্বের আস্থা রয়েছে।
ভোপালে সাম্প্রতিক সফরের সময়, দলের সিনিয়র নেতা এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক সূচিত কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলি যেভাবে বাস্তবায়ন করছে তার জন্য মুখ্যমন্ত্রী চৌহানের প্রশংসা করেছিলেন। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে খবর যে, মধ্যপ্রদেশে চৌহানের নেতৃত্বে দলের জেলা থেকে বুথ স্তরে কর্মীরা উৎসাহিত।
তবে ছত্তিশগড়ের পরিস্থিতি ঠিক উল্টো এই রাজ্যে বিরোধী দল বিজেপি। গত কয়েক বছর ধরেই গোষ্ঠী কোন্দলে জীর্ন গেরুয়া শিবির। আপাতত তা মেটারও কোনও লক্ষ্ণ নেই। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংয়ের বিরুদ্ধে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার বিস্তর অভিযোগ দলেরই অপর গোষ্ঠীর।
বিজেপির এক সর্বভারতীয় সহ-সভাপতির কথায়, 'রমন সিং ছত্তিগড়ের বড় নেতা। তাঁর অনুগামী বা ঘনিষ্ঠরাই দলরে নানা পদে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় রয়েছে। যেমন প্রদেশ বিজেপির সভাপতি বিষ্ণু দেও সাই এবং বিরোধী দলনেতা ধর্মলাল কৌশিক, উভয়কেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত।' রাজ্যের এক দলীয় নেতার মতে, 'ছত্তিশগড়ে বিজেপির সচিব (সংগঠন) পবন কুমার সাইও সিংকে কার্যত নিজের দিকে টেনে নিয়েছেন সিং।'
চলতি মাসের গোড়ায় খয়রাগড় উপনির্বাচনে হয়েছিল। যাকে মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল বিধানসভা নির্বাচনের সেমিফাইনাল হিসাবে দেগে দিয়েছিলেন। এই উপনির্বাচনেও বড় ব্যবধানে হেরেছে পদ্ম প্রার্থী। ফলে নেতৃত্ব নিয়ে দলের অন্দরেই প্রশ্ন উঠেছে।
ছত্তিশগড়ের এক বিজেপি নেতার দাবি, 'বর্তমান নেতৃত্বে আমলে একটি নির্বাচনেও বিজেপি জয়ী হয়নি। মণ্ডল পর্যায় পর্যন্ত দলের নেতারা কেই দাবি করবে না যে, এই নেতৃত্ব বিজেপিকে জয়ের পথ দেখাতে পারে। বিজেপি- রাজ্যের কংগ্রেস সরকার ও তাদের অভ্যন্তরীণ বিরোধ শাসনব্যবস্থার ব্যর্থতাকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ।' বিজেপির প্রদেশ নেতারা বর্তমানে শুধু ভোটারদের আস্থা ফেরাতেই ব্যর্থ হচ্ছে না, পাশাপাশি সংগঠনের সকলকে নিয়ে চলতেও অপারগ।
গত কয়েকদিন ধরে, ছত্তিশগড়ের দায়িত্বে থাকা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক ডি পুরন্দেশ্বরী রাজ্যের পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রদেশ নেতৃত্বের প্রতিক্রিয়া জানাতে তাঁদের সঙ্গে দেখা করেছেন। পুরন্দেশ্বরী সেই রিপোর্ট বিজেপির জাতীয় নেতৃত্বের কাছে জমা করবেন।
বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব খয়রাগড় উপনির্বাচনে পরাজয়কে যথেষ্ঠ গুরুত্ব দিচ্ছে। রাজ্যের এক গুরু্বপূর্ণ নেতার কথায়, 'পরপর তিনবার ক্ষমতায় ছিল বিজেপি। ৯০ আসনের বিধানসভা শেষ বার শাসক দল হিসাবে গেরুয়া শিবিরের বিধায়ক সংখ্যা ছিল ৪৯। ২০১৮ সালের ভোটে তা কমে হয়েছিল ১৫। পরে দান্তেওড়াতেও হেরেথে বিজেপি।
ছত্তিশগড়ের প্রাক্তন মন্ত্রী ব্রিজমোহন আগরওয়াল, রমন সিংকে কড়া চ্যালেঞ্জের সামনে ফেলতে পারে বলে মনে করছেন দলের অনেকে।
Read in English