যাদব পরিবারে মুষলপর্ব ঠেকাতে মহাভারতে শ্রীকৃষ্ণকে ছুটে আসতে হয়েছিল যুদ্ধরত পরিবারের সদস্যদের কাছে। কিন্তু, তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। লালুপ্রসাদ যাদব মহাভারত পড়েছেন। রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (আরজেডি) যাদব কুলপতি তাই আর মহাভারতের ভুল করতে নারাজ। তাঁর ছোট ছেলে তেজস্বী যাদব এখন বিহারের বিরোধী দলনেতা। আরজেডির সর্বভারতীয় সভাপতি হওয়াও প্রায় ঠিকই হয়ে গিয়েছিল।
কিন্তু, মহাভারতের মতো মুষলপর্ব ঠেকাতে সেই জল্পনায় জল ঢেলে দিলেন খোদ লালুপ্রসাদই। দিল্লিতে চিকিৎসাধীন লালু জানালেন, আগের মতো তিনিই সামলাবেন দলের ভার। ঘরে ভাঙন ঠেকাতেই কি উত্তরাধিকার হস্তান্তর পিছোলেন? সাংবাদিকদের এই প্রশ্নে নিজস্ব ভঙ্গীতে লালুর জবাব, 'ঝুটা খবর চল রহা হ্যায়'। মানে ফেক নিউজ। তবে, ফেক না-সঠিক, সে প্রশ্ন না-হয় তোলা থাকল ভবিষ্যতের জন্য। কিন্তু, এনিয়ে যে একটা কথা রটেছে, তা কিন্তু, 'ঝুটা খবর চল রহা হ্যায়' বলার মধ্যে দিয়ে প্রকারান্তরে স্বীকার করে নিয়েছেন যাদব দলপতি।
আসলে, যাদব পরিবারে বহুদিন ধরেই বড় ছেলে তেজপ্রতাপের সঙ্গে ছোট তেজস্বীর তেমন একটা বনিবনা নেই। বড় ভাইকে কার্যত কোনও গুরুত্বই দেন না তেজস্বী। এমনই অভিযোগ তেজপ্রতাপের। আরজেডি সূত্রে খবর, তেজপ্রতাপ অবশ্য তেজস্বীর সঙ্গে সুসম্পর্কই রাখতে চান। কিন্তু, ভাইয়ের কাছে তেমন একটা পাত্তা না-পেয়ে আলাদা মঞ্চ গড়েছিলেন। স্রেফ নিজের রাজনৈতিক পরিচয় বাঁচাতে। তবে, খুব একটা সফল হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে ব্যবসায় মন দিয়েছেন। এই তো গত সপ্তাহেই চাল এবং মাল্টিগ্রেন ব্যবসা শুরু করে সংবাদ শিরোনামে এসেছিলেন।
আরও পড়ুন যোগীর বিরুদ্ধে প্রার্থী বিজেপি নেতার স্ত্রী, চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিল সমাজবাদী পার্টি
আরজেডি সূত্রে খবর, ভাই তেজস্বীর আচরণ দেখে তেজপ্রতাপ নাকি বুঝে গিয়েছেন, যতদিন লালু, আরজেডিতে তাঁর যেটুকু গুরুত্বও আছে স্রেফ ততদিনই। ভাইয়ের দৌলতে তারপর আর কোনও ভবিষ্যৎ নেই তাঁর। মা রাবড়ি দেবী অবশ্য তাঁর পক্ষেই আছেন। কিন্তু, বাবা লালুপ্রসাদ যাদবও বড় ছেলের রাজনৈতিক বিচারবুদ্ধির ওপর তেমন একটা ভরসা নাকি রাখেন না।
এই যেমন, বিহারে এনডিএর অভ্যন্তরে গোলমাল জমতেই তেজ আগ বাড়িয়ে বিক্ষুব্ধদের আরজেডির হাত ধরার কথা বলেছিলেন। এমনকী, উপেন্দ্র কুশওয়াহা, নীতীশ কুমারদেরকে আরজেডির সঙ্গে একমঞ্চে দাঁড় করাতে জোটবার্তাও দিয়েছেন। কিন্তু, লালু নাকি ছেলের প্রস্তাব শুনে দলের নেতাদের বলে দিয়েছেন, তেজের কথাকে তেমন একটা গুরুত্ব না-দিতে। তবে, বাবা তো! তাই বড় ছেলেকেও একটু রাজনীতি শিখিয়ে ছোট ছেলের সঙ্গে মিলমিশ করানোর তালে আছেন আধুনিক বিহার রাজনীতির 'কৃষ্ণ'। আর, ততদিন দলের রাশটা তিনি নিজের হাতেই রাখতে চান।