অত্রি মিত্র
উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে কী মোহভঙ্গ হল তৃণমূলের? আপাতত তুঙ্গে এই চর্চাই। বিজেপি বিরোধী একাধিক দলের নেতৃত্ব অবশ্য এই নীরবতাকে অন্য ইঙ্গিত বলে দাবি করেছেন।
জগদীপ ধনকড় উপরাষ্ট্রপতি ভোটে প্রার্থী করেছে এনডিএ। বিরোধীদের বাজি মার্গারেট আলভা। কিন্তু, রবিবারের বিরোধী বৈঠকে আশ্চর্যজনকভাবে তৃণমূলের কোনও প্রতিনিধি হাজির ছিলেন না। শরদ পাওয়ার শেষে জানিয়েছেন যে, কনফারেন্সে ব্যস্ত থাকায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। অর্থাৎ, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রার্থী বাছাইয়ে বিরোধী ঐক্যের যে উদ্যোগ খোদ তৃণমূল সুপ্রিম করেছিলেন উপরাষ্ট্রপতি ভোটের আগে তা উধাও।
উপরাষ্ট্রপতি ভোটে কী অবস্থান তৃণমূলের? জোড়া-ফুলের ভোট কী বাংলার প্রাক্তন রাজ্যপালের পক্ষেই পড়বে? নাকি বিরোধী জোট প্রার্থীর দিকেই যাবে? শনিবার জগদীপ ধনকড়ের নাম ঘোষণার পরই তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেছিলেন, '২১ জুলাই শহিদ সমাবেশের পর তৃণমূলের সাংসদদের নিয়ে নেত্রী বৈঠক করবেন। ওই বৈঠকেই দিক-নির্দেশ করবেন তিনি।'
রাজ্যের শাসক দলের একজন শীর্ষ নেতার মতে, বাস্তব রাজনীতির কারণেই তৃণমূল উপরাষ্ট্রপতি ভোটের প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়ায় ততটা সক্রিয় ছিল না। তবে, জগদীপ ধনকড় উপরাষ্ট্রপতি হলে রাজ্যের শাসক দল তার অন্যতম সোচ্চার সমালোচকদের হাত থেকে মুক্তি পাবে। তিনি বলেছেন, 'আমাদের দলের সুপ্রিমো রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে উদ্যোগ নিয়েছিলেন কারণ বিজেপিকে পরাজিত করার কিছু সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে ওলোটপালট সবকিছু বদলে দিয়েছে।'
তৃণমূলের এক নেতার কথায়, 'উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ফলাফল প্রায় স্পষ্ট। আমাদের দলের সুপ্রিমো কৌশলী অবস্থান নিচ্ছেন। ধনকড় যদি উপরাষ্ট্রপতি হন, তবে তা রাজ্য সরকারের জন্য স্বস্তির। তাই, আমরা খুশি। এছাড়াও, আমরা প্রতিটি ইস্যুতে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে লড়তে পারি না। কখনও কখনও, পার্টিকে ধীরগতির নীতি গ্রহণ করতে হয় এবং এখন সেটারই দরকার।'
তবে প্রকাশ্যে অন্যকথা বলেছেন জোড়া-ফুল নেতৃত্ব। তৃণমূলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায় বলেছেন, 'জগদীপ ধনকড় তৃণমূলের বিরোধিতা করেছিলেন। পুরস্কার হিসাবে তাঁকে উপরাষ্ট্রপতি প্রার্থী হিসাবে মনোনীত করা হয়েছে।'
তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায় বলেছেন, 'রাজ্যপাল হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন বিষয়ে রাজ্য সরকারের বিরোধিতা করেছেন জগদীপ ধনকড়। তিনি অনেক বিষয়ে আমাদের দল ও সরকারের বিরুদ্ধে এমন কথা বলেছেন যা রাজ্যপাল হিসেবে তার বলা উচিত হয়নি। আমি আশা করি যে এবার যিনি রাজ্যপাল হবেন তিনি আমাদের সরকারকে সমর্থন করবেন।'
আরও পড়ুন- বাংলার নতুন রাজ্যপাল লা গণেশন, স্বাগত জানালেন শুভেন্দু
তবে উপরাষ্ট্রপতি ভোট নিয়ে এখনও তৃণমূল নেত্রীর অবস্থানকে কটূক্তি করেছেন বিজেপি বিরোধী বেশ কয়েকটি দল। সেইসব দলের নেতাদের অভিযোগ, এক্ষেত্রে বিজেপির সঙ্গে গোপন আঁতাঁত রয়েছে তৃণমূলের। পুরো বিষয়টি খোলসা করতে এইসব দলগুলো দার্জিলিংয়ে ধনখড়ের এবং অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাম্প্রতিক বৈঠককে ইঙ্গিত করেছেন।
প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেছেন, 'আমার অনুমান, বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের একটি গোপন জোট রয়েছে। তারা বিজেপি নেতৃত্বকে অসন্তুষ্ট করতে চায় না। জগদীপ ধনখড় এবং হিমন্ত বিশ্বশর্মার সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠক এবং তার পরে উপরাষ্ট্রপতি পদের জন্য তাঁর নাম ঘোষণা এবং তৃণমূলের নীরবতা সেদিকেই ইঙ্গিত করে।'
সিপিআই(এম) নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, 'যখন বিরোধীদের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রার্থী বাছাই করার কথা ছিল, তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সক্রিয় ছিলেন। উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে, তিনি ধনকড় এবং শর্মার সঙ্গে দেখা করার পর থেকেই মুখে কুলুর এঁটেছেন। সবাই বুঝছেন এখন তিনি এখন চুপ কেন।'
রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের আশা, তৃণমূল এবার জগদীপ ধনকড়কে সমর্থন করবে। তিনি দাবি, ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন রাজ্যপাল দ্রৌপদী মুর্মুকে এনডিএ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের পর মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন বিজেপি আগে বললে সমর্থনের বিষয়ে ভেবে দেখতাম। বালুরঘাটের সাংসদের কথায়, 'ধনকড় আমাদের রাজ্যপাল ছিলেন এবং সেই খুবই সফল। উপ-রাষ্ট্রপতি প্রার্থীর ক্ষেত্রে, বিজেপি প্রার্থীর নাম আগেই ঘোষণা করেছে। তাই, আমি আশা করি তৃণমূল জগদীপ ধনকড়কেই সমর্থন করবে।'