ত্রিপুরায় তৃণমূল কংগ্রেসের পুর্নাঙ্গ রাজ্য কমিটি ঘোষিত হয়েছে। পুরসভা নির্বাচনের আগে পরশি রাজ্যে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। ২০২৩ বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে এই কমিটি কাজ করবে। এরপর জেলা, ব্লক ও বুথ স্তরের কমিটি গঠন করা হবে। ত্রিপুরা তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুবল ভৌমিকের সঙ্গে একান্তে কথা বলেছেন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার প্রতিনিধি জয়প্রকাশ দাস। ত্রিপুরায় পরিবর্তনের আশা দেখছে তৃণমূল কংগ্রেস।
প্রশ্ন: বিজেপির শাসন কেমন দেখছেন?
সুবল ভৌমিক: এখানকার শাসকদল বুঝতে পারছে তৃণমূল ত্রিপুরার সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক পছন্দ। তৃণমূলকে আটকাতে হবে তার জন্য আমাদের দলকে টার্গেট করে। সমস্ত আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু তৃণমূল। বিশেষ করে এএমসি ও পুর নির্বাচনে তৃণমূলকে টার্গেট করেই ওরা সন্ত্রাস করেছে। এখানে বিজেপির শাসনে মানুষের নাভিশ্বাস উঠে গিয়েছে।
প্রশ্ন: কেন ত্রিপুরায় পরিবর্তন আশা করছেন?
সুবল ভৌমিক: মানুষ পরিবর্তন চাইছে। একমাত্র পরিবর্তন তৃণমূল কংগ্রেস দিতে পারবে। এখানকার মানুষের বিশ্বাস মা-মাটি-মানুষের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গে গত তিন-তিনটে সরকার উপহার দিয়েছেন। সমস্ত মানুষকে সরকারি সুযোগ সুবিধার আওতায় নিয়ে এসেছেন। ৭০ এর অধীক সামাজিক প্রকল্পের মাধ্যমে মানুষকে পরিষেবা দিচ্ছেন। এখানকার মানুষ বিশ্বাস করে ত্রিপুরায় তৃণমূলের সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে এখানেও মানুষের আর্থিক, সামাজিক, রাজনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন আসবে। এটাকে সামনে রেখে তৃণমূল সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করেছে। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে বলতে পারি ২০২৩-এর নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস জিতবে। দলের সাংগঠনিক শক্তি ও জনগণের আস্থার ওপর ভিত্তি করে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসছে।
প্রশ্ন: কীভাবে সংগঠন সাজানোর কাজ চলছে?
সুবল ভৌমিক: আমাদের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় গতবছর ২ অগস্ট এসেছেন। তখন থেকে পুর্নাঙ্গ কাজ শুরু হয়েছে। আমাকে কনভেনর করে ১৯জনের কমিটি করা হয়েছিল। এবার পুর্নাঙ্গ কমিটি পেয়েছি। আগামি ১৫দিনের মধ্যে জেলা কমিটি গঠন করা হবে। আগামী ১ মাসের মধ্য়ে ব্লক স্তরে কমিটি ঘোষণা করা হবে। পাশাপাশি চারটে শাখা সংগঠনের কমিটি সম্পূর্ণ হবে। আগামি ২ মাসের মধ্যে সমস্ত বুথ কমিটি সম্পূর্ণ করব। আমরা সংগঠনের ওপর ভিত্তি করেই লড়াই করব। মাটি কামড়ে ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে লড়ব। জেলা সফর শেষ করে আমারা পরবর্তী কর্মসূচি নেব। ৫-১০ মে জেলা সফরে যাব।
প্রশ্ন: ২০১৪ সালে তৃণমূল কংগ্রেস ত্রিপুরায় দুটি লোকসভা আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তৃতীয় স্থান পায়। পরে আবার নানা ভোটগুলিতে দলের ভোট কমে যায়। একমাত্র কাউন্সিলর বিজেপিতে যোগ দেয়। কি বলবেন?
সুবল ভৌমিক: আমরা পুরভোটে দ্বিতীয় স্থানে আছি। আমরা নিশ্চিত একটা ছোট্ট জায়গা। ছোট্ট ওয়ার্ড। সুমনের ভাইয়ের সমস্ত কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল। আর্থ-সামাজিক অবস্থা অত্যন্ত দুর্বল। কাউন্সিলরকে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, রাজ্য সভাপতি ফটো সেশন করেছেন। এতই গুরুত্ব! কিন্তু গত চারবছরে বিজেপির তিন জন বিধায়ক চলে গিয়েছে। সহযোগী আইপিএফটির ১ বিধায়ক দল ছেড়েছেন। লক্ষ লক্ষ জনজাতির সমর্থন চলে গিয়েছে। বিজেপির সমস্ত নেতৃত্ব চলে যাচ্ছে। বিজেপির সমস্ত ঘর ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। এখন কয়েকটা হাতে গোনা মাফিয়া বিজেপিতে। যাঁরা দিনের বেলায় দুর্বৃত্তায়ন করে।
প্রশ্ন: আপনাদের লক্ষ্য কি?
সুবল ভৌমিক: আমরা লড়াই করে জিতব। বিধায়ক ভাঙিয়ে জিতব না। জনগণের ভোটের ওপর আস্থা আছে। সাধারণ মানুষের ওপর ভরসা আছে।
প্রশ্ন: তৃণমূল কি একা লড়াই করবে না জোট?
সুবল ভৌমিক: আমদের ৬০টি আসনে লড়াই করার সম্পূর্ণ প্রস্তুতি আছে। তবে কেউ যদি আমাদের সঙ্গে কথা বলতে চায় আমাদের দরজা খোলা আছে।
প্রশ্ন: তিপ্রা মথা তো দারুন সাড়া ফেলেছে ত্রিপুরায়…
সুবল ভৌমিক: আপনি দেখতে থাকুন। আরও কিছু দিন সময় লাগবে। কেউ যদি আমাদের সঙ্গে কথা বলতে চায় আমাদের দরজা খোলা।
প্রশ্ন: ত্রিপুরা সিপিএম সম্পর্কে তৃণমূল কি ভাবছে? লড়াইতে আছে?
সুবল ভৌমিক: সিপিএম পশ্চিমবঙ্গের লাইনেই হাঁটছে। কংগ্রেস, সিপিএম ব্রিগেডে ১০ লক্ষ লোক করার পরও ২৯৪-এ একটা আসনও পায়নি। ত্রিপুরায়ও ওদের একটা স্ট্রাকচার আছে। কয়েকজন বিধায়ক আছে। কিন্তু জনগণের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। ভোটারের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। সিপিএম এখন ক্ষয়িষ্ণু শক্তি। সিপিএম আর উঠে দাঁড়াতে পারবে না।
প্রশ্ন: বিজেপি থেকে কী তৃণমূলে আসছে…
সুবল ভৌমিক: এখনও লোক আসছে। আর একটু অপেক্ষা করুন। দেখতে পাবেন।
প্রশ্ন: বিজয় রাংখাল বলছেন, তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন তৃণমূলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি আশিসলাল সিং। প্রাক্তন বিধায়ক তৃণমূলের কোর কমিটির সদস্য আশিস দাস বলছেন এই কমিটি প্রার্থী খুঁজে পাবে না। এঁরা কী দলে থাকবে?
সুবল ভৌমিক: ব্যক্তিগত সম্পর্কের খাতিরে ওনাদের মধ্যে যোগাযোগ থাকতে পারে। আমার কাছে এ বিষয়ে কোনও তথ্য নেই। আমি মন্তব্য করতে চাই না। এঁরা কোনও অফিসিয়াল কিছু জানায়নি। তবে আমি ওনাদের সঙ্গে কথা বলব। তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল কংগ্রেস কারও প্রতি নির্ভরশীল নয়। তৃণমূল কংগ্রেস এখানকার মানুষের হৃদয়ে আছে। মনে আছে।
প্রশ্ন: ত্রিপুরায় তৃণমূল কংগ্রেসর লড়াইয়ের মুখ কে?
সুবল ভৌমিক: আমাকে সভাপতি করেছে। বাকিটা নেতৃত্ব বলবে।
প্রশ্ন: ত্রিপুরায় একটা পালস আছে। কি পরিকল্পনা….
সুবল ভৌমিক: এই পলিসি ডিসিশন সম্পূর্ণ কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব করবে।
প্রশ্ন: কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
সুবল ভৌমিক: নিশ্চিত থাকুন আমরা সরকার গড়ছি। ৫০-এর বেশি আসন পাচ্ছি।
প্রশ্ন: লড়াই কার সঙ্গে?
সুবল ভৌমিক: বিজেপি ক্ষমতায় আছে। তাই বিজেপির সঙ্গে লড়াই। তবে কোনও কোনও ক্ষেত্রে বিজেপিকে খুঁজেই পাওয়া যাবে না। মানুষের মন থেকে বিজেপি অনেক দূরে চলে গিয়েছে। একইসঙ্গে রাজ্যে, কেন্দ্রে আছে। দিনের পর দিন বিজেপি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে।
প্রশ্ন: পাহাড়ী এলাকায় সংগঠনের হাল কি?
সুবল ভৌমিক: পাহাড়ী এলাকায় আমাদের সংগঠন খুব ভাল। কিছু দিন আগে মিছিল করেছি। সেখানে ৫০ শতাংশ হাজিরা ছিল জনজাতির।
প্রশ্ন: প্রচারে কি হাতিয়ার করবেন?
সুবল ভৌমিক: বিজেপি সরকারের জনবিরোধীমূলক কাজকর্ম, দুর্নীতি, গণতন্ত্র হত্যা, সন্ত্রাস এগুলিকে প্রচার করে আমরা এগোচ্ছি। আগামিদিনে এখানে সরকার হলে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ন্যায় বিভিন্ন জনমুখী প্রকল্পের মাধ্যমে মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে আমরা কাজ করব। স্বাস্থ্য সাথী, সবুজ সাথী, কন্যাশ্রী হবে। জনগণের প্রতি আমাদের বিশ্বাস-ভরসা আছে।