'ওরা জিন্নার উপাসক, আমরা সর্দার প্যাটেলের। ওদের কাছে পাকিস্তান প্রিয়, আমরা মা ভারতীর জন্য আমাদের জীবন উৎসর্গ করি।' বিতর্ক উস্কে শুক্রবার উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এই টুইট করেছেন। একদিন আগেই গাজিয়াবাদের মোদীনদগরে প্রাচারে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী তথা প্রবীণ বিজেপি নেতা রাজনাথ সিং বলেছিলেন যে, 'রাজ্য রাজনীতির জাতীয় রাজনীতির আলোচনায় মহম্মদ আলি জিন্নার নাম নেওয়া ঠিক নয়। রাজ্য বা জাতীয় রানীতির পরিশরে কৃষকদের কথা উত্থাপনই শ্রেয়।' কিন্তু বিরোধীদের আক্রমণে মুখ্যমন্ত্রীর টুইটে ফের উঠল জিন্না প্রসঙ্গ, উপেক্ষিত হল রাজনাথের পরামর্শ।
পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে গাজিয়াবাদ জেলার মোদীনগরে গিয়ে প্রচারে রাজনাথ সিং বলেছিলেন, 'আমি জানি না কেন নির্বাচন এলেই জিন্নার নাম উঠে আসে। উত্তরপ্রদেশের ভোটে জিন্নার নাম নেওয়া ঠিক নয়। বদলে আমরা কৃষকদের আখেড়ে কীসে লাভ তা নিয়ে বিতর্ক করা উচিত।'
যোগীর রেশ ধরেই ভোট আবহে বেশ কয়েকজন বিজেপি নেতা তাদের বক্তৃতায় বিরোধীদের জিন্নার সমর্থক বলেকটাক্ষ করেছেন।
উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে জিন্নার গুরুত্ব বোধতে হলে কয়েক মাস পিছিয়ে যেতে হবে। সমাজবাদী পার্টি প্রধান অখিলেশ যাদব মাস কয়েক আগেই, মহাত্মা গান্ধী, সর্দার বল্লভাই প্যাটেল, জওহরলাল নেহেরু এবং মহম্মদ আলি জিন্নাকে ভারতের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করা নেতা হিসেবে একসূত্রে গেঁথেছিলেন।
অখিলেশ বলেছিলেন যে, 'সর্দার প্যাটেলজি, জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহেরু এবং জিন্না একই প্রতিষ্ঠানে পড়ার পর ব্যারিস্টার হয়েছিলেন। তাঁরা একই জায়গায় পড়াশোনা করেছেন। তাঁরা ব্যারিস্টার হয়েছেন, আমারা স্বাধীনতা পেয়েছে। তাঁরা কোনও ধরনের সংগ্রাম থেকে পিছপা হননি।'
মুলায়ম-পুত্রের এই বক্তব্যেই শোরগোল পড়ে যায়। অখিসেকে নিশানা করেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তিনি বলেছিলেন, প্যাটেলের সঙ্গে জিন্নার তুলনা অত্যন্ত 'লজ্জাজনক' এবং এটি 'তালিবানী মানসিকতা'। বিএসপি প্রধান মায়াবতী বলেছেন, 'জিন্না সম্পর্কে যাদবের মন্তব্য এবং তার প্রেক্ষিতে বিজেপির প্রতিক্রিয়া বিধানসভা নির্বাচনের আগে হিন্দু-মুসলিমে বিভেদ ধরিয়ে পরিবেশকে দূষিত করার দু'টি দলের একটি সুচিন্তিত কৌশল।'
গত বছর নভেম্বরের আগে ২০১৮ সালেও জিন্নকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ পরিস্থিতি হয় উত্তরপ্রদেশের আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেই সময় বিজেপি সাংসদ সতীষ গৌতম বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে থেকে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা জিন্নার ছবি সরিয়ে দেওয়ার দাবি তুলেছিলেন। এরপরই আরএসএস অনুমোদিত হিন্দু জাগরণ মঞ্চের কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করার চেষ্টা করে। প্রতিবাদে মিছিল বের করতে মরিয়া ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। তাদের পুলিশ রুখলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়। পুলিশ ও পড়য়াদের সংঘর্ষে ২ ডজনেরর উপর পড়ুয়া জখম হন। বাতিল করতে হয় তৎকালীন উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারিকে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের আজীবন সম্মাননা জ্ঞাপণ অনুষ্ঠান। ফলে আনসারি দিল্লি ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন।
এছাড়া, কায়রানা লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের আগেও জিন্নাকে কেন্দ্র করে বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়েছিল। উপনির্বাচনের কয়েকদিন আগে একটি বক্তৃতায় যোগী আদিত্যনাথ বলেছিলেন, 'কিছু লোক স্লোগানে বলছে আখ নাকি জিন্না। আমি বলতে পারি, আখ আমাদের জন্য একটি ইস্যু কিন্তু আমরা জিন্নার প্রতিকৃতির অনুমতি দেব না।'
Read in English