ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি) সভাপতি শরদ পাওয়ার হিন্দুদের সামাজিক বৈষম্য তথা জাতিভেদ প্রথা অবসানের জন্য আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের আবেদনকে স্বাগত জানিয়েছেন।
এই বিষয়ে সাহসী অবস্থান নেওয়ার জন্য ভাগবতের প্রশংসা করে, পাওয়ার বলেন, 'এই ধরনের বিবৃতি বাস্তবে প্রয়োগ করা উচিত। শুধু একটি ইস্যুতে উদ্বেগ প্রকাশ করাই সমাধান নয়। এটি কার্যকরও হওয়া উচিত। না-হলে, এটা স্রেফ কথার কথা থেকে যাবে।'
সূত্রের খবর, ভাগবতের বক্তব্য নিয়ে পাওয়ারের এই আশঙ্কার কারণ, মুসলিম সংগঠন পিএফআইয়ের বিরুদ্ধে এনআইএর অভিযানের দিন ভাগবত আচমকা মৌলবীদের প্রধানের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। বিভিন্ন মহলের অভিযোগ, ভাগবতের এই দেখা করার মূল লক্ষ্য ছিল, নজর ঘুরিয়ে এনআইএর অভিযান নিয়ে মুসলিম সমাজের ক্ষোভ ধামাচাপা দেওয়া।
এবার মুসলিম এবং খ্রিস্টান সংগঠনগুলো দলিতের স্বীকৃতির দাবিতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে। কিন্তু, মোদী সরকার মুসলিম ও খ্রিস্টান সংগঠনগুলোর দাবি মানা দূর, বৌদ্ধ ও শিখদের যাঁরা দলিত রয়েছেন, তাঁদের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য কমিশন গঠন করেছে। বিভিন্ন মহলের অভিযোগ, এই নিয়ে মুসলিম ও খ্রিস্টান সমাজের ক্ষোভ থেকে নজর ঘোরাতেই ভাগবত এখন বর্ণহীন হিন্দু সমাজের আহ্বান জানাচ্ছেন।
নাগপুরে এক বইপ্রকাশ অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) প্রধান হিন্দুদের বর্ণভেদ নিয়ে মন্তব্য করেছেন। যা নিয়ে সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিতর্ক শুরু হয়েছে। ভাগবত বলেছেন, একবিংশ শতাব্দীতে বর্ণপ্রথার কোনও প্রাসঙ্গিকতা নেই। তিনি ভারতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষার স্বার্থে হিন্দুদের বর্ণহীন সমাজ গঠনের পক্ষে জোর দেন।
আরও পড়ুন- শিবসেনার প্রতীক কেন পেলেন না উদ্ধব? এবার কী হবে !
ভাগবত দাবি করেন, অতীতেও হিন্দু সমাজে ‘বর্ণ’ ও ‘জাতি’ প্রথার কোনও ধারণা ছিল না। তাঁর দাবি, হিন্দুদের পুরোনো বৈদিক গ্রন্থ এবং সমস্ত আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় প্রধানরা সর্বদা অসমতাকে পরিহার করতে বলেছেন। একতার কথা বলেছেন। তাই, হিন্দু সমাজে অস্পৃশ্যতার ধারণা কখনও ধর্মীয় পাঠ্য বা অনুশীলনের অংশ ছিল না। এই ব্যাপারে ভাগবত বলেন, 'আজ, কেউ যদি হিন্দুদের বর্ণপ্রথা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, তবে আমাদের উত্তর হওয়া উচিত, এটা অতীত। আসুন, আমরা ভুলে যাই।'
কীভাবে হিন্দু সমাজে জাতিভেদ প্রথা তৈরি হয়েছিল, সেই ব্যাপারে অবশ্য ভাগবত বিশেষ কিছুই জানাননি। শুধু জানিয়েছেন, এতে হিন্দু সমাজের সমাজের মেরুকরণ বেড়েছে। তাই হিন্দু সমাজের ঐক্যের জন্য যা ক্ষতিকর, তা দূর করা উচিত। হিন্দুদের সামাজিক ঐক্যের জন্য বৈষম্যমূলক সব কিছু ত্যাগ করা উচিত। ভাগবত বলেন, 'শুধু ভারতেই না। গোটা বিশ্বেই অতীত প্রজন্ম ভুল করেছে। সেই ভুলগুলো মেনে নেওয়ার ব্যাপারে আমাদের দ্বিধা করা উচিত না। যদি কেউ মনে করেন যে আমাদের পূর্বপুরুষরা সেই ভুল স্বীকার করলে নিকৃষ্ট হয়ে যাবেন, তা হবেন না। কারণ, আমরা সবাই মানুষ।'
Read full story in English