"নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাঁর ওপর উত্তর ভারত ও পশ্চিম ভারতীয়দের চাপ ছিল। নেতাজিকে কোনঠাসা করা হয়েছিল।" বিজেপির বহিরাগত তত্ব খাড়া করতে গিয়ে এমনই যুক্তি দিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তার এই তত্বকথায় ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন নেতাজি পরিবারের সদস্য চন্দ্র বসু। একেবারে ইতিহাস না জেনেই এমন কথা কেন বললেন মন্ত্রী তা খুঁজে পাচ্ছেন না নেতাজির প্রপৌত্র। এমনকী তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে আজাদ হিন্দ ফৌজের তুলনা নিয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে ভিন্ন মত পোষণ করেছেন সুভাষচন্দ্রের বংশধর।
নির্বাচনী রণকৌশলে বিজেপি এরাজ্যে পাঁচটি সাংগঠনিক জোনে পাঁচ কেন্দ্রীয় নেতাকে নিয়োগ করেছে। তাঁরা সকলেই অবাঙালী। এরাজ্যে দলের পর্যবেক্ষক ও সহপর্যবেক্ষক দুজনও বাঙালী নয়। এই নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস অভিযোগ করে আসছে বাঙালীর মাথায় অবাঙালীদের চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এমনকী বাইরের রাজ্য থেকে মুখ্যমন্ত্রী করার চেষ্টা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন ব্রাত্য বসু। রাজ্যের বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর উদাহরণ টেনে আনেন।
কী বলেছেন ব্রাত্য বসু?
"আমি মনে করি ৩৯ সালে সুভাষ বোস ত্রিপুরী কংগ্রেসে হেরে গেলেন। সেই থেকে উত্তর ভারতীয় ও পশ্চিম ভারতীয়রা বাঙালীদের ওপর চটে বসে রইল। আপনারা ভেবে দেখুন গান্ধী ভারতে আসার আগে বাঙালীদের হাতে স্বাধীনতা সংগ্রাম ছিল। পরে সুভাষ বসুর ওঠার কথা ছিল। নতুন দল করলেন ফরোয়ার্ড ব্লক। তাঁকে নানা ভাবে কোনঠাসা করা হল। উনি অন্তরীণ হলেন। ত্রিপুরী কংগ্রেসের পর সুভাষ বসুর সঙ্গে যা করা হয়েছিল তা কী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে করা হয়নি? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ফের উত্তর ভারত ও পশ্চিম ভারত থেকে লোককে পাঠানো হচ্ছে। যে ভাবে সুভাষ বসুকে কোনঠাসা করা হয়েছিল। সুভাষ বসুকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। আমি বলব তাড়িয়ে দোওয়া হয়েছিল।"
রাজ্যের মন্ত্রীর এই বক্তব্য মানতে নারাজ নেতাজির পরিবারের সদস্য চন্দ্র বসু। তিনি মনে করেন, "গান্ধীজির সঙ্গে নেতাজির বিরোধ মতাদর্শগত ছিল।" চন্দ্র বসু মন্ত্রীর বক্তব্যের বিরোধিতায় বলেছেন,
"নেতাজির উদাহরণটা ঠিক নয়। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে বাঙালী হিসাবে এক ঘরে করা হয়েছিল তা তো নয়। সেটা হচ্ছে আদর্শের ওপর ভিত্তি করে। নেতাজি বলেছিলেন সশস্ত্র আন্দোলন না করলে অহিংসার মাধ্যমে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদকে ভারতবর্ষ থেকে তাড়নো সম্ভব নয়। গান্ধীজি, নেহরু বা সর্দার প্যটেলের সঙ্গে ব্যক্তিগত ভাবে খুব ভাল সম্পর্ক ছিল। সৌজন্য ছিল। ব্যক্তিগত ভাবে তাড়ানোর বিষয় ছিল না। লড়াইটা ছিল মতাদর্শেরর। মতের পার্থক্য হয়েছিল। দ্বিতীয় বার সভাপতি হওয়ার পর তিনি বুঝেছিলেন কংগ্রেসে থেকে ব্রিটিশকে সরাতে পারবেন না, তাই তিনি ছেড়ে ছিলেন। আমার মনে হয় না বাঙালি বা অবাঙালি ইস্যুটা এই ভাবে ছিল। অনেকে বলেন হিন্দীভাষী লোকেরা বাঙালির বিরোধিতা করে। কিন্তু নেতাজির সঙ্গে তা হয়নি। নেতাজি একমাত্র নেতা যিনি সকল ভারতবাসীকে ভারতীয় হিসাবে প্রতিষ্টা করতে চেয়েছেন। এটা আজাদ হিন্দ ফৌজে প্রতিষ্টা করতে পেরেছিলেন। নেতাজীর যা ভাবমূর্তি ছিল তাতে ওনাকে তাড়িয়ে দেওয়া সম্ভব ছিল না। তিনি গান্ধীর সঙ্গে আলোচনা করে মিটমাট করতেই পারতেন। দেশের স্বাধীনতার তাগিদে কংগ্রেস ছেড়েছেন। দেশ ছেড়ে আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন করেছেন।"
ব্রাত্য বসুর উপলব্ধি, "নেতাজির আজাদ হিন্দ ফৌজের মতো তৃণমূল কংগ্রেস গঠন করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।" এই তুলনাও মানতে চাননি চন্দ্র বসু। তাঁর কথায়, "আজাদ হিন্দ ফৌজের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের এই তুলনা করাটা ঠিক নয়। আজাদ হিন্দ ফৌজে ৭০ হাজার সৈন্যের মধ্যে ২৬ হাজার প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন। সব প্রদেশের লোক ছিল আজাদ হিন্দ ফৌজে। দেশের জন্য তৃণমূলের কতজন প্রাণ বিসর্জন দেবে।"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন