সর্দার বল্লভ ভাই প্য়াটেল। এবার নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। তারপর মহাত্মা গান্ধি। রবিবার লালকেল্লায় জাতীয় পতাকা তুলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নাম করেছেন বাবা সাহেব আম্বেদকরেরও। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের আগে এভাবেই জাতীয়তাবাদী মুখকে তুলে ধরতে তৎপর হয়েছে গেরুয়া শিবির। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গকে টার্গেট করেছে বিজেপি, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। ফরওয়ার্ড ব্লক নেতৃত্ব বিজেপির নেতাজী প্রেম নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। অবশ্য় বিজেপি রাজ্য় সভাপতি স্পষ্ট করে দিয়েছেন নেতাজী, বিবেকানন্দ, গান্ধিজী সবই এখন তাঁদের হেফাজতে থাকবে।
লোকসভা নির্বাচনের আগে ব্রিগেডে জনসভা করবে বিজেপি। ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে ব্রিগেড সমাবেশের কথা ঘোষণা করেছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ও। বছর শুরু হতেই ১৯ জানুয়ারি ব্রিগেডে সভা তৃণমূলের। তারপর তড়িঘড়ি বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক রাহুল সিনহা ঘোষণা করেন, ২৩ জানুয়ারি ব্রিগেডে সভা করবে দল। কিন্তু তারপরই সংশয় দেখা দেয় ওই তারিখ নিয়ে। ওই দিন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্ম দিন। নেতাজিকে সামনে রেখে গেরুয়া বাহিনী বাজিমাত করতে চায় তা ওই সিদ্ধান্তে অনেকটাই স্পষ্ট বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
এর আগে নেতাজির কিছু ফাইল প্রকাশ করেছে মোদি সরকার। যদিও তার মধ্য়ে তেমন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য় ছিল না। এবার একেবারে আজাদ হিন্দ সরকারের প্রতিষ্ঠা দিবসকে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে নিজেদের উদ্দেশ্য স্পষ্ট করে দিয়েছে তারা। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, সর্দার বল্লভভাই প্য়াটেলকে নিয়ে কর্মসূচি নিয়েছে, তাঁর বিশাল মূর্তি বসেছে গুজরাটে। কিন্তু নেতাজির ভাবমূর্তি বাংলা তথা সারা ভারতেই বেশ উজ্জ্বল। তাই গেরুয়া শিবির মনে করেছে জাতীয়তাবাদী নেতা হিসাবে আরও বেশি গ্রহণযোগ্য় নেতাজি। বিশেষ করে বাংলায় তো বটেই।
বিজেপির এই নেতাজি প্রেমে বেজায় চটেছে তাঁর হাতে গড়া দল ফরওয়ার্ড ব্লক নেতৃত্ব। রাশ কি তাঁদের হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে! ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য় নেতা নরেন চট্টোপাধ্য়ায় বলেন, “সমস্য়া হল ওদের কাছে জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের মুখ নেই। সর্দার বল্লভভাই প্য়াটেলকে ধরেছিল। কিন্তু কংগ্রেস ফের তাদের নেতাকে হাইজ্য়াক করে নিয়েছে। নেতাজির প্রতি সকলেই দুর্বল, তাই তাঁকে ধরেছে। ট্রাম্পকার্ড হিসাবে নেতাজিকে ব্য়বহার করতে চায়। বিজেপি প্রমাণ করতে চাইছে তাদের জাতীয়তাবাদের ঐতিহ্য় আছে।’’ নরেনবাবুর মতে, “এদেশে কংগ্রেস, ফরওয়ার্ড ব্লক ও সোস্য়ালিস্টরা জাতীয়তাবাদী দল। আর কেউ নেই।’’ তাঁর ক্ষোভ, নেতাজির নামাঙ্কিত আন্দামানের শহীদ স্বরাজ দ্বীপ নাম তুলে দিয়ে সাভারকারের নাম করেছে, আর সেই দ্বীপে এবার পতাকা তুলতে যাবেন মোদি।
তবে নেতাজীকে নিয়ে বিজেপি সম্বন্ধে কে কী বলল তা নিয়ে কোনও আসে যায় না বিজেপির। দলের রাজ্য় সভাপতির কথায় তা পরিস্কার। বরং তীব্র আক্রমণাত্মক দিলীপ ঘোষ। এমনকী গান্ধিজিকে নিয়েও যে অনেক কর্মসূচি নেবে বিজেপি তাও স্পষ্ট করেছেন তিনি। দিলীপবাবু বলেন, “ফরওয়ার্ড ব্লক বা অন্য়রা নেতাজীর জন্য় কী করেছে? এই প্রথম কোনও ভারত সরকার নেতাজীর আজাদ হিন্দ সরকারকে স্বীকৃতি দিল। সবাই তো এতদিন দোকান চালিয়েছে নেতাজিকে নিয়ে। সম্মান দিয়েছি আমরা। ওই ধান্দা তো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, আমাদের দোকান খোলার জন্য়। আমরা সবাইকে ছিনিয়ে নেব, নেতাজি, বিবেকানন্দ, গান্ধিজি।’’