scorecardresearch

মধ্যপ্রদেশ বিজেপিতে কোন্দল তুঙ্গে, শিবরাজের সরকারের বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগে সরব পদ্ম-নেতারা

মধ্যপ্রদেশের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী মহেন্দ্র সিং সিসোদিয়া যখন তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনছেন, সেই সময় কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান তাঁর ঘনিষ্ঠ জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া বা কৈলাস বিজয়বর্গীয়র মধ্যে কাউকেই পাশে পাননি।

shivraj singh chowhan
শিবরাজ সিং চৌহান

মধ্যপ্রদেশে বিজেপির রাজনৈতিক চাকা ঘুরতে শুরু করেছে। শুরু হয়েছে মন্থন। আর, সেটা সেদিনই শুরু হয়েছে, যেদিন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানকে বিজেপির সংসদীয় বোর্ড (সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী স্তর) থেকে বাদ দেওয়া হয়। বিজেপির শীর্ষ নেতাদের এই পদক্ষেপেই স্পষ্ট যে চারবারের মুখ্যমন্ত্রী, অদূর ভবিষ্যতে রাজ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবেন। মধ্যপ্রদেশ বিজেপি একাধিক উপদলে বিভক্ত। আর, সেই কারণে বিপর্যস্ত। অভিযোগ, এই গোষ্ঠীকোন্দলের প্রভাব পড়ছে মধ্যপ্রদেশের প্রশাসনেও। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে এই পরিস্থিতি থেকে দল ঘুরে দাঁড়াক। এখন সেটাই চান বিজেপির সর্বভারতীয় নেতৃত্ব।

কীরকম গোষ্ঠীকোন্দল চলছে মধ্যপ্রদেশ বিজেপিতে? গত ২৯ আগস্ট, মধ্যপ্রদেশের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী মহেন্দ্র সিং সিসোদিয়া পুলিশ সুপার রাজেশ সিং চান্দেলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। কারণ, তাঁর অভিযোগ, অনুমোদন ছাড়াই পুলিশ পরিদর্শকদের বদলি করা হয়েছে। পরবর্তীতে সিসোদিয়া মধ্যপ্রদেশের “অনিয়ন্ত্রিত” আমলাতন্ত্রের জন্য মুখ্যসচিব ইকবাল সিং বেইনসকেও দায়ী করেন। সিসোদিয়া যখন এভাবে মধ্যপ্রদেশ সরকারকে আক্রমণের নিশানা করছেন, সেই সময় কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান তাঁর ঘনিষ্ঠ জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া বা কৈলাস বিজয়বর্গীয়র মধ্যে কাউকেই পাশে পাননি।

মধ্যপ্রদেশ বিজেপির এই ধরনের উপদলের আরেকটি উদাহরণ স্পষ্ট করে দিয়েছে ইন্দোরে রাজ্যের ক্রিকেট বোর্ডের বার্ষিক অনুষ্ঠান। ইন্দোর বিজয়বর্গীয়র এলাকা। সেই কারণে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া নিজেই হেঁটে বিজয়বর্গীয়র কাছে যান। তাঁকে মঞ্চে আসার অনুরোধ করেন। শুধু তাই নয়। কয়েকদিন আগে, উজ্জয়িনী সফরে যাওয়ার সময়, সিন্ধিয়া তাঁর ছেলে মহাআর্যমান সিন্ধিয়ার সঙ্গে ইন্দোরে বিজয়বর্গীয়র বাড়িতেও গিয়েছিলেন। যা প্রমাণ করেছে সিন্ধিয়া আর কৈলাস বিজয়বর্গীয় এখন একদলে রয়েছেন।

এই উপদলের আরেক নেতা হলেন মধ্যপ্রদেশের জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি মন্ত্রী বিজেন্দ্র সিং যাদব। তিনি সম্প্রতি “নিযুক্তিতে অনিয়ম” নিয়ে অশোকনগর জেলা কালেক্টরেটের বিরুদ্ধে তদন্ত চেয়ে রাজ্য সমবায় সমিতি কমিশনারের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন। রাজ্য সরকারের আধিকারিকের বিরুদ্ধে বেনিয়ম করার অভিযোগ এনেছেন এই মন্ত্রী আবার সিন্ধিয়া অনুগত বলে পরিচিত। বিজেন্দ্র সিং যাদব, সেই ২২ জনের অন্যতম, যাঁরা ২০২০ সালে সিন্ধিয়ার অনুগত হিসেবে কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছে। আর, মধ্যপ্রদেশের কংগ্রেস সরকারের পতন ঘটিয়েছে।

সম্প্রতি মধ্যপ্রদেশের একটি সাধারণ অডিট রিপোর্ট “ফাঁস” হয়েছে। এই রিপোর্ট, সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে থাকা মহিলা ও শিশু উন্নয়ন দফতরের জালিয়াতিকে তুলে ধরেছে বলেই অভিযোগ। সেই রিপোর্ট ফাঁসের পিছনেও সিন্ধিয়া ঘনিষ্ঠদের হাত রয়েছে বলে বিজেপির একাংশের অভিযোগ। দলের মধ্যে থেকেই এমনভাবে পিছনে ছুরি খাওয়ার পরও শিবরাজ সিং চৌহান কিন্তু লড়াই ছাড়েননি। দলে সংসদীয় বোর্ড থেকে বাদ যাওয়ার পরে তিনি ভোপালে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন।

সেই সময় চৌহান সাংবাদিকদের বলেন, “আমি যোগ্য কিনা (বোর্ডে থাকার যোগ্য) কি না, তা নিয়ে মোটেও চিন্তা করি না। দল যদি আমাকে কার্পেট বিছোনোর কাজ দেয়, আমি জাতির স্বার্থে তা-ও করব। যদি জাইতে (তাঁর গ্রামের বাড়ি) থাকতে বলা হয়, আমি তাই করব। আর দল যদি আমাকে ভোপালে থাকতে বলে, আমি সেই নির্দেশও মেনে চলব। রাজনীতিতে কোনও ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষা থাকা উচিত নয়।”

আরও পড়ুন- কিংসওয়ে থেকে রাজপথ অথবা সেন্ট্রাল ভিস্তার কর্তব্যপথ: দিল্লির শতাব্দীপ্রাচীন রাস্তার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

এসব বললেও, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব তাঁর ওপর থেকে আস্থা হারাচ্ছেন, একথা মানতে নারাজ চৌহান। তিনি জানিয়েছেন, ২০২০ সালে কংগ্রেসের পতনের পর মধ্যপ্রদেশে দলের কুর্সি সামলেছেন। আবার, ২০২৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও তিনি মুখ্যমন্ত্রী পদে মধ্যপ্রদেশে দলের প্রার্থী হবেন। চৌহানের মন্তব্যের প্রতিধ্বনি করতে শুরু করেছেন তাঁর অনুগামীরাও। মধ্যপ্রদেশ বিজেপির চৌহানের অনুগত বলে পরিচিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নরোত্তম মিশ্রও সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ২০২৩-এ রাজ্যে দলের মুখের কোনও পরিবর্তন হবে না।

এই প্রসঙ্গে মিশ্র বলেন, “চৌহান নিয়মিতভাবে রাজ্যে বাস্তবায়িত সমস্ত কেন্দ্রীয় প্রকল্পের আপডেট দিল্লিতে পাঠান। এতে মধ্যপ্রদেশের অবস্থানের উন্নতি ঘটেছে। গত দুই বছরে তা-ও প্রমাণিত হয়েছে। মধ্যপ্রদেশ বিজেপির একাংশের আবার দাবি, দল এখন শিবরাজ সিং চৌহানকে মুখ্যমন্ত্রীর বদলে মধ্যপ্রদেশ বিজেপির সভাপতি হিসেবেই দেখতে ইচ্ছুক। চৌহান ঘনিষ্ঠ এই সব নেতাদের যুক্তি, দেশের বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলোর মুখ্যমন্ত্রীদের মধ্যে একমাত্র শিবরাজ সিং চৌহানই সংসদীয় বোর্ডে ছিলেন। এটা দৃষ্টিকটূ। তাই, তাই সংসদীয় বোর্ডের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। কার দাবি ঠিক, কে-ই বা ভুল, এই উত্তর এখন দিতে পারে আগামী দিনই।

Read full story in English

Stay updated with the latest news headlines and all the latest Politics news download Indian Express Bengali App.

Web Title: New friends and tensions in mp bjp