বিহারে রাজনৈতিক অস্থিরতা তুঙ্গে। মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার আবারও এনডিএ জোটে যোগ দেবেন বলে জল্পনা। মাত্র দুবছর আগে, তিনি এনডিএ-র সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন এবং লালু প্রসাদ যাদবের দল আরজেডির সঙ্গে জোট সরকার গঠন করেছিলেন। নীতীশ কুমার আবারও এনডিএ-তে যোগ দিলে, পঞ্চমবার তিনি এই বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক হবেন।
কেন ২০২২ সালে এনডিএ থেকে আলাদা হয়েছিলেন নীতীশ?
২০২২ সালে, যখন নীতীশ কুমার এনডিএ জোট থেকে আলাদা হয়েছিলেন, তিনি বলেছিলেন যে বিজেপি তার দলে বিভাজন তৈরি করছে এবং দলকে 'ধ্বংস' করতে চায়। ২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জেডিইউ-এর আসন ৭১ থেকে ৪৩-এ নেমে আসে। অন্যদিকে, একই নির্বাচনে, বিজেপির আসন ৫৩ থেকে বেড়ে ৭৪ হয় এবং আরজেডির একই নির্বাচনে ৭৫ আসনে জয় পায়।
২০২০ সালের নির্বাচনের পরে, নীতীশ কুমার বলতে শুরু করেছিলেন যে বিজেপি ইচ্ছাকৃতভাবে চিরাগ পাসওয়ানের নেতৃত্বাধীন লোক জনশক্তি পার্টি (এলজেপি) প্রার্থীদের সেই আসনে প্রার্থী করেছিল যেখানে তার দলের প্রার্থীরা শক্তিশালী ছিল। অনেক জেডিইউ নেতা বলেছিলেন যে সেই নির্বাচনে বিজেপি চিরাগ পাসওয়ানকে 'প্রক্সি' হিসাবে ব্যবহার করেছিল এবং যার ফল ভুগতে হয়েছে নীতীশের দলকে। ২০২০ বিধানসভা নির্বাচনে, এলজেপি মাত্র একটি আসন পেয়েছিল, তবে এটি নীতীশের দলের যথেষ্ট ক্ষতি করেছে বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা।
তাহলে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে কী ঘটেছে যে নীতীশ কুমার এনডিএ-তে ফিরতে চান? সবচেয়ে বড় কারণ কংগ্রেস, আরজেডি ও ইণ্ডিয়া জোটের সঙ্গে ফাটল। নীতীশ কুমার এমন একজন নেতা যিনি বিরোধী জোটকে একত্রিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং তাঁর কারণেই ইণ্ডিয়া জোট গঠন হয়। যদিও কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি এবং টিএমসির মতো দলগুলির কারণে তিনি এই জোটে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে পারেননি। এতে ভীষণ ক্ষুব্ধ হন নীতীশ কুমার।
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে অন্তত ৭ জন JDU সাংসদ বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। এই সাংসদরা ২০১৯ সালের নির্বাচনে এনডিএ জোট সমীকরণের কারণে জিতেছিলেন এবং বর্তমানে আরজেডি, কংগ্রেস এবং বাম সমীকরণ নিয়ে গঠিত বর্তমান জোটে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা কম তাঁদের। এই সকল নেতারা বিজেপির সঙ্গে জোট করতে চেয়েছিলেন, অন্যদিকে দলের প্রাক্তন সভাপতি রাজীব রঞ্জন সিং এর বিরুদ্ধে ছিলেন।
নীতীশ কুমার বুঝতে পেরেছিলেন যে তিনি দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে দল দুটি ভাগে বিভক্ত হতে পারে। গত মাসেই তিনি রাজীব রঞ্জন সিং ওরফে লল্লান সিংকে সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন।২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে, জেডিইউ, এনডিএ জোটে থাকাকালীন ১৭ টি আসনের মধ্যে ১৬ টি জিতেছিল। নীতীশ মনে করেন, নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে তাঁর দল এনডিএ ব্যানারে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
RJD থেকে নীতীশের বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণ হল লালুর কন্যা রোহিণী আচার্যের একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট, যেখানে তিনি নীতীশের রাজবংশীয় রাজনীতির উপর একটি বিবৃতি দিয়ে একটি তীক্ষ্ণ মন্তব্য করেছিলেন। পরে কিছু জেডিইউ নেতা এর বিরোধিতা করলে রোহিণী তার পোস্টটি মুছে দেন।
কার্পুরী ঠাকুরের ভারতরত্ন পাওয়া নীতীশের এনডিএ জোটে ফিরে আসার একটি বড় কারণ হতে পারে। নীতীশ কুমার ক্রমাগত বলে আসছেন যে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কার্পুরী ঠাকুরকে ক্রমাগত উপেক্ষা করেছে। তাকে তার প্রাপ্য সম্মান দেওয়া হয়নি। যেখানে নীতীশের ইচ্ছা অনুযায়ী সম্প্রতি মোদী সরকার কর্পুরী ঠাকুরকে ভারতরত্ন দেওয়ার কথা ঘোষণা করে।
সকলের নজর আজ পটনায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিহারের মহানাটকের অবসান হতে চলেছে। NDA-তে ঘরওয়াপসি না কি জোটের সঙ্গেই থাকছেন নীতীশ কিছু সময়ের মধ্যেই চিত্রটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চেয়েছেন তিনি। বেলা ১২টা নাগাদ রাজভবনে যেতে পারেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী।
বিহারের রাজনীতিতে চলছে টালমাটাল পরিস্থিতি। RJD এবং JDU-জোটের ভবিষ্যৎ ঝুলে রয়েছে নীতীশ কুমারের সিদ্ধান্তের উপর। সকলেই মনে করছেন রবিবার দুপুরের মধ্যেই সমস্ত জল্পনার অবসান হতে চলেছে। সূত্রের খবর, NDA জোটের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর সুশীল মোদীকেই নিজের ডেপুটি পদে বসাতে চলেছেন নীতীশ।
সনিয়া গান্ধী থেকে শুরু করে খাড়গে নীতীশ কুমারকে একাধিকবার ফোন করার চেষ্টা করলেও তিনি ধরেননি। জয়রাম রমেশ জানিয়েছে, কংগ্রেস সভাপতি কোনওভাবেই নীতীশ কুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। এদিকে, মল্লিকার্জুন খাড়গে জানিয়েছেন, গোটা বিষয়টি নিয়ে তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, লালু প্রসাদ যাদব এবং সীতারাম ইয়েচুরির সঙ্গে কথা বলেছেন। তবে নীতীশের মাথায় কী চলছে তা তিনি বুঝে উঠতে পারছেন না। সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী সম্ভবত তাঁর দলের বিধায়কদের একটি বৈঠকে ভাষণ দেবেন। রবিবার সকাল ১০টা নাগাদ রাজভবনে যাওয়ার আগে তাঁর পদত্যাগপত্র জমা দেবেন।
এক প্রবীণ আরজেডি নেতা দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন: "আমরা নীতীশ কুমারকে কোনও অজুহাত দেব না। তিনি আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। আমরা কোনও কিছুর জন্য দোষ দিচ্ছি না। আমরা সরকার গঠনের দাবি করতে যাচ্ছি না। আমরা নীতীশের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করব।"
এসবের মধ্যেই বিজেপি সভাপতি জগৎ প্রকাশ নাড্ডার আজই পাটনা সফরের যাচ্ছেন। ২৮ জানুয়ারি বিকেল তিনটের একটি বিশেষ ফ্লাইটে পাটনায় পৌঁছাবেন। এরপর সাড়ে চার ঘণ্টা পাটনায় থাকবেন জেপি নাড্ডা। এরপর সন্ধ্যা ৭.৩০ মিনিটে একই বিশেষ বিমানে দিল্লির উদ্দেশে রওনা হবেন জেপি নাড্ডা।