বিরাট সংকটের মুখে ইন্ডিয়া জোট। নীতীশ কুমার জোট ছেড়ে এনডিএ শিবিরে যোগ দিতে পারেন যে কোন মুহূর্তেই। আর যদি সত্যি এমন ঘটনা ঘটে তাহলে লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে এটাই হবে জোটের সবচেয়ে বড় বিপর্যয়। নীতীশ এনডিতে ফিরলে বিহারে নরেন্দ্র মোদী সরকারের জয় প্রায় নিশ্চিত। গত লোকসভা নির্বাচনে এনডিএ জোট ৪০টির মধ্যে ৩৯টি আসনে জয়লাভ করেছিল।
এরই মাঝে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বৃহস্পতিবার তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রাজ্যে আসন ভাগাভাগি নিয়ে অচলাবস্থা কাটাতে বিশেষ ভাবে উদ্যোগ নিয়েছেন।
বুধবার মমতার ঘোষণায় কংগ্রেসের রক্তচাপ বাড়িয়েছিল। মমতা সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, বাংলায় ভারতের কোনো আসন ভাগাভাগি নিয়ে কোন আলোচনা চান না তিনি। পাশাপাশি তিনি এও ঘোষণা করেন টিএমসি রাজ্যে লোকসভা নির্বাচনে এককভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।
কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা জয়রাম রমেশ দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন যে 'আসন ভাগাভাগির বিষয়ে বিকল্প পথ খুঁজতে বৃহস্পতিবার খড়গে মমতার সঙ্গে কথা বলেন। যদিও এনিয়ে বিশদে কিছু বলতে চান নি কংগ্রেসের এই সিনিয়ার নেতা। তিনি কেবল জানিয়েছেন, "মমতার পাশাপাশি ইন্ডিয়া জোটের উদ্দেশ্য একই! "বাংলায় এবং বাংলার বাইরে বিজেপিকে পরাজিত করা"।
সূত্রের খবর, খড়গে মমতাকে একটি চিঠিও দেন। যাতে তাকে রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রায় যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। বৃহস্পতিবার তৃণমূলের তরফে অধীর রঞ্জন চৌধুরীকে আসন ভাগাভাগি আলোচনার ব্যর্থতার জন্য এককভাবে দায়ি করা হয়েছে। সিনিয়র টিএমসি নেতা তথা রাজ্য সভার সাংসদ ডেরেক ও'ব্রায়েন সাংবাদিকদের বলেন, "বাংলায় জোট না হওয়ার তিনটি কারণ - অধীর রঞ্জন চৌধুরী, অধীর রঞ্জন চৌধুরী এবং অধীর রঞ্জন চৌধুরী,"….!
এসবের মাঝে বিহারের মুখ্যমন্ত্রীকে জোট থেকে হারানো হবে ইণ্ডিয়া জোটের সব চেয়ে বড় ধাক্কা। নীতীশের পৃষ্ঠপোষকতায়, জোটের ভিত্তি গত বছরের ২৩ জুন গড়ে উঠে। ১৫ টি বিরোধী দলের নেতারা পাটনায় নীতীশের সরকারি বাসভবনে বৈঠক করেছিলেন এবং বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য একটি জোট গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
সাত মাস ধরে, নীতিশ, যিনি বিরোধী ফ্রন্টে একটি মুখ্য ভূমিকা পালন করে চলেছেন। সাম্প্রতিক কালে তিনি জোটের সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়েছেন। তারই সাম্প্রতিক উদাহরণ হল জোটের আহ্বায়ক হওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা। যদিও কংগ্রেস নেতাদের একটি অংশ আশাবাদী আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব সহানুভূতি দেখিয়ে কিছুটা ফায়দা তুলতে পারেন। এছাড়াও, নীতীশের জাত শুমারি বিজপির বিরুদ্ধে একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলেছিল। রাহুল গান্ধীও নির্বাচনের প্রচারের জাত শুমারি নিয়ে বিজেপিকে নিশানা করেন এবং সেই সঙ্গে প্রতিশ্রুতি দেন জোট সরকার ক্ষমতায় এলে জাত শুমারি করা হবে। এমন এক সময়ে নীতীশকে হারানো জোটের কাছে নিঃসন্দেহে এক বড় ধাক্কা। অন্যদিকে বিজেপির জয়ের এক নিশ্চিত গ্যারান্টি।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর এবার I.N.D.I.A জোটকে বড় ধাক্কা দিলেন পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান। লোকসভা নির্বাচনে একাই লড়বেন বলে ঘোষণা করেছেন ভগবন্ত মান। ভগবন্ত মান জানিয়েছেন, তিনি পাঞ্জাবের ১৩টি আসনে একাই লড়বেন। তিনি কোনো দলের সঙ্গে জোট করবেন না। AAP পাঞ্জাবের ১৩টি আসনে প্রার্থী দেবে। এদিকে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার বিহারের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে এনডিএ-তে যোগ দিতে পারেন বলে রাজনৈতিক মহলে জোর আলোচনা চলছে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কংগ্রেস ভয় পাচ্ছে যে, নীতীশ কুমার দল ছাড়লে জোটের নির্বাচনী প্রস্তুতি একেবারে ভেস্তে যাবে এবং লোকসভা নির্বাচনের জন্য কংগ্রেসকে আবার নতুন পরিকল্পনা করতে হবে। অল্প সময়ে নতুন কৌশল নিয়ে এগিয়ে যাওয়া কংগ্রেসের পক্ষে সহজ হবে না।