ভোটে হার, স্বপ্নভঙ্গ। তারপর ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসের অভিযোগ শাসক দলের বিরুদ্ধে। নেতৃত্বকে পাশে না পাওয়ার বেদনা কর্মীদের। এখানেই শেষ নয়, পরাজয়ের ধাক্কা কাটতে না কাটতেই দলীয় বিধায়ক, নেতাদের ঘরওয়াপসি। উপনির্বাচনগুলিতেও একের পর এক হার। গোষ্ঠী কোন্দলে জর্জরিত সংগঠন। সবমিলিয়ে একুশের ভোটের আগে বাংলায় যে সাড়া বিজেপি পেয়েছিল, তা বর্তমানে তলানীতে। এই প্রেক্ষাপটে ২০২৪-কে বিবেচনা করে বঙ্গ বিজেপি নেতা, কর্মীদের চাঙ্গা করতে মরিয়া অমিত শাহ।
শুক্রবার নিউটাইনের এক হোটেলে বঙ্গ বিজেপি সাংসদ, বিধায়ক ও নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন অমিত শাহ। দলের সংগঠনের বর্তমান হাল বুঝে নেন তিনি। তারপরই, একদিকে ভোকালটনিক দিয়ে এ রাজ্যের দলীয় নেতা, কর্মীদের মনোবল বৃদ্ধির চেষ্টা, অন্যদিকে কড়া নির্দেশে দলকে ফের আন্দোলনমুখী করে তোলার কথা বলেছেন শাহ। আশ্বস্ত করেছেন যে, এবার থেকে তিনি নিয়মিত বাংলায় আসবেন।
একুশে ভোটের হারের পর থেকে হতদ্যম বিজেপি নেতা, কর্মীরা। মাঝে মধ্যে সরকার বিরোধী আন্দোলন দেখা গেলেও তা মানুষের নজর কাড়তে ব্যর্থ। সে কথাই এ দিনের বৈঠকে বলেছেন শাহ। জানা গিয়েছে গেরুয়া 'চাণক্য' বলেছেন, 'বাংলার নেতাদের কর্ম উদ্যোম, তৎপরতার অভাব রয়েছে। কেন্দ্রীয় প্রকল্পের কথা মমতার সরকার নিজেদের বলে চালাচ্ছে, কিন্তু বিজেপি জনপ্রতিনিধি, নেতা, কর্মীরা মানুষের কাছে তা পৌঁছে দিতে পারছে না। কেন এমন হবে?' দলীয় সূত্রে খবর, শাহের সাফ কথা, 'হতাশার কোনও জায়গা নেই। বিরোধী দল করলে মার খেতে হবে। মামলা হবে। কিন্তু আন্দোলন থেকে সরে গেলে চলবে না।'
বঙ্গ বিজেপির নেতাদের উদ্যোমী করতে বিরোধী হিসাবে নিজের ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আন্দোলনের কথাও তুলে ধরেন অমিত শাহ। বিজেপি সূত্রে খবর শাহ বলেছেন যে, 'সিপিএমের বিরুদ্ধে যখন মমতা দেবী আন্দোলন করেছিলেন তিনি প্রচুর মার খেয়েছেন। তবুও দমে যাননি। এটা অন্য কথা যে ক্ষমতায় এসে তিনি সিপিএমের হিংসার নীতিই অনুসরণ করেছেন। আমিও বিরোধী নেতা হিসাবে লড়ে গিয়েছি। মার খেয়েছি। আমার শরীরের একাধিক হাড় ভাঙা। ৫০টার বেশি মামলা, তার মধ্যে ৬টি খুনের। কিন্তু হাল ছাড়িনি। লড়ে গিয়েছি। মানুষের ভরসা বেড়েছে। তারপর জয় পেয়েছে বিজেপি।'
বৈঠকের এক ফাঁকে বিজেপির এক রাজ্য নেতা কড়া সিবিআই তদন্তের কথা, ৩৫৬ ধারা জারির দাবি করেন। সেই সময়ই কিছুটা মেজাজ হারান শাহ। জানা গিয়েছে দলীয় নেতার দাবির প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, 'কেবল সিবিআই দাবি করলেই কাজ শেষ হবে না। সিবিআই অপরাধীদের ধরবে। এমন নয় যে তৃণমূল নেতা, কর্মীদের জেলে ভরবে। আর বিপুল জয় পেয়ে আসা রাজ্য সরকারকে বাতিল করে হঠাৎ ৩৫৬ জারি গণতন্ত্র বিরোধী। তৃণমূল গণতন্ত্র মানে না, কিন্তু বিজেপি মানে। সেটা ভুলে যাবেন না। তাই সিবিআই তদন্ত বা ৩৫৬-র দাবি ছেড়ে রাজনৈতিক সংগ্রাম করুন। মাঠে নেমে আন্দোলন করুন। মানুষের আস্থা হয়ে ওঠার চেষ্টা করুন।'
তাঁর নির্দেশ এখন থেকে মেনে চললে ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে বাংলা থেকে বিজেপি বালো ফল করবে বলে দাবি করেছেন পদ্ম 'চাণক্য'।
জানা গিয়েছে, এ দিনের সভায় উপস্থিত বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা বি এল সন্তোষ বঙ্গ নেতৃত্বকে একযোগে কাজের নির্দেশ দিয়েছেন।