তিন দশকে প্রথমবার একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে ক্ষমতায় আসার পর, কাল অর্থাৎ শুক্রবার, ২০ জুলাই, নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁর মন্ত্রীসভার সামনে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ হতে চলেছে। তেলুগু দেশম পার্টির সাংসদ কেসিনেনি শ্রীনিবাসের আনা প্রস্তাব বুধবার গ্রহণ করেন লোকসভা অধ্যক্ষ সুমিত্রা মহাজন। শেষবার লোকসভায় যেবার অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়, সেবারও কাঠগড়ায় ছিল আরেক এনডিএ সরকার, নেতৃত্বে অটল বিহারী বাজপেয়ী। বস্তুত, প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন বাজপেয়ীর বিরুদ্ধে দুবার অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়।
মজার কথা হলো, অনাস্থা প্রস্তাবের কোনো সংস্থান কিন্তু সংবিধানে নেই। সাংবিধানিক অনুচ্ছেদ (আর্টিকল) ৭৫-এ বলা আছে, মন্ত্রীসভা সামগ্রিকভাবে লোকসভার কাছে দায়বদ্ধ। এর মানে এই যে লোকসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন থাকবে প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর মন্ত্রীসভার প্রতি। লোকসভার নিয়মাবলীর ১৯৮ ধারায় অনাস্থা প্রস্তাবের সংস্থান রয়েছে, এবং ৫০ বা তার বেশি সংখ্যক সাংসদের সমর্থন থাকলে অধ্যক্ষ সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেন।
আরও পড়ুন: Narendra Modi in Bengal: মেদিনীপুর কার্যত ২০১৯ নির্বাচনী প্রচারের ড্রেস রিহার্সাল
১৯৯৯ সালে আনা অনাস্থা প্রস্তাব বাজপেয়ী হেরে যান এক ভোটের ব্যবধানে, সৌজন্যে বহুজন সমাজ পার্টি, যারা সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েও শেষ পর্যন্ত লোকসভায় সরকারের বিপক্ষে ভোট দেয়। কিন্তু সরকারের পতনের মূল কারণ ছিল ন্যাশনাল কনফারেন্সের সাংসদ সইফুদ্দিন সোজের আচমকা বিদ্রোহ, এবং উড়িষ্যার মুখ্যমন্ত্রী গিরিধর গামাংয়ের আকস্মিক প্রবেশ। সোজ নিজের দলের নির্দেশের বিরুদ্ধে গিয়ে প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন, এবং কংগ্রেসের গামাং মুখ্যমন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও সাংসদ হিসেবে নিজের অধিকার প্রয়োগ করতে উপস্থিত হন।
২০০৩ সালে কংগ্রেস ফের একবার অনাস্থা প্রস্তাব আনে বাজপেয়ী সরকারের বিরুদ্ধে। বিষয় ছিল প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে জর্জ ফার্নান্ডেজের বিতর্কিত পুনরাগমন। ফার্নান্ডেজ এর আগে দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করেন, সংসদে কার্যত একঘরে তখন তিনি। বাজপেয়ী তাঁকে ফেরৎ অানার প্রতিবাদে বিরোধী দলগুলি অনাস্থা প্রস্তাব আনে এই বলে যে তেহেলকা কমিশনের কাছ থেকে কোনরকম ছাড়পত্র না পেয়ে তিনি ফেরৎ আসতে পারেন না।
টানা দুদিন আলোচনার পর বাজপেয়ী সরকার দাপটের সঙ্গে সেই প্রস্তাব ৩১২ টি ভোট পেয়ে পরাজিত করে। বিপক্ষে পড়ে ১৮৬ টি ভোট।
আজ ১৫ বছর পর আবার একবার এনডিএ সরকারের সামনে সেই একই পরীক্ষা। মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বাধীন দুই ইউপিএ সরকারকে এর সম্মুখীন হতে হয় নি। অবশ্য ২০০৮ সালে একবার আস্থা ভোটে জেতার দরকার পড়েছিল, যখন ভারত-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু চুক্তির প্রতিবাদে বাম দলগুলি তাদের সমর্থন তুলে নেয়।
অঙ্কের হিসেব করলে মোদী সরকারের উচিৎ সহজেই এই প্রস্তাবকে পরাজিত করা। বিজেপির দাবী, সরকারের পক্ষে রয়েছেন ৩১৪ জন সদস্য। এনডিএ লোকসভা সাংসদের সংখ্যা ৩১৩, বিপক্ষে রয়েছেন ২২২ জন বিরোধী সদস্য।