সংবাদমাধ্যমকে ‘দলিত’ শব্দ ব্য়বহার করতে নিষেধ করল তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রক। তার পরিবর্তে মন্ত্রকের তরফে সংবিধানসম্মত পরিভাষা ‘তফশিলি জাতি’ ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।
তথ্য সম্প্রচারমন্ত্রকের এই নির্দেশের বিরোধিতা করেছে দলিত অধিকাররক্ষা সংগঠনগুলি। তাদের বক্তব্য দলিত শব্দটির রাজনৈতিক তাৎপর্যবহনকারী এবং একটি পরিচয়বাহকও বটে।
গতবছর মার্চ মাসে ন্যায়বিচার ও সামাজিক ক্ষমতায়ন মন্ত্রকের তরফ থেকে সমস্ত রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে একটি একই ধরনের নিদেশনামা জারি করা হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, সমস্ত সরকারি নথিতে তফশিলি জাতি পরিভাষাটি ব্যবহার করতে হবে। সেখানে একই সঙ্গে বলা হয়েছিল সংবিধান বা এ ধরনের কোনও নথিতে দলিত শব্দটির কোনও উল্লেখ নেই।
গত ৭ অগাস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক যে নির্দেশনামা জারি করেছে, তাতে বম্বে হাইকোর্টের নাগপুর বেঞ্চের একটি আদেশকে উদ্ধৃত করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশে বলা হয়েছে, ‘‘এরকম কোনও নির্দেশ সংবাদমাধ্যমের উপর জারি করা যায় কি না, তা ভেবে দেখতে এবং আগামী ৬ মাসের মধ্যে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে।’’ আবেদনকারী ন্যাবিচার মন্ত্রকের সার্কুলারের পরিপ্রেক্ষিতে আবেদন করেছিলেন, দলিত শব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমের উপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা উচিত।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রকের জারি করা নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ‘‘সংবাদমাধ্যমকে তফশিলি জাতিভুক্তদের সম্পর্কে উল্লেখ করার সময়ে 'দলিত' নামক পরিভাষাটি ব্যবহার করায় বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এর বদলে ইংরেজিতে সাংবিধানিক পরিভাষা শিডিউলড কাস্ট এবং অন্যান্য ভারতীয় ভাষায় তার যথাযথ অনুবাদ সমস্ত ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে হবে।’’
এ ব্যাপারে বম্বে হাইকোর্টের আদেশ ছাড়াও আরও একটি আদালতের নির্দেশ উদ্ধৃত করেছে সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রক। সে মামলাটি হল মধ্যপ্রদেশে গোয়ালিয়র বেঞ্চের ডক্টর মোহনলাল মেহর বনাম ভারত সরকার মামলা।
এ ব্যাপারে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে কথা বলেছেন সামাজিক ন্যায় মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী রামদাস অটোয়ালে। তিনি মহারাষ্ট্রে দলিত প্যান্থার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। এই আন্দোলনই দলিত নামক পরিভাষাটিকে রাজনৈতিক পরিচয়ের সত্তা হিসেবে জনপ্রিয় করে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘দলিত শব্দটি একটা অহংকারের বোধ সূচিত করে।’’
তিনি জানিয়েছেন, ‘‘এই আবেদন করেছিলেন এক বৌদ্ধ। সরকারি রেকর্ডে শিডিউল্ড কাস্ট ব্যবহার করতে হবে, সে ঠিক আছে। কিন্তু সংবাদ মাধ্যম কেন দলিত শব্দটি ব্যবহার করতে পারবে না, তার কোনও কারণ দেখতে পাচ্ছি না। অধিকাংশ দলিত গোষ্ঠীরই এই শব্দ ব্যবহার নিয়ে আপত্তি নেই, এবং এ পরিভাষা ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের অপমান করা হচ্ছে এমনটাও নয়। বস্তুত, অবিচারে মুখে পড়লে বিপ্লবীদের যা প্রয়োজন, এই শব্দ আম্বেদকরপন্থীদের মধ্যে সেই ধরনের জঙ্গি মনোভাবেরই জন্ম দেয়।’’
ইউজিসি-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান অধ্যাপক সুখদেও থোরাট বলেছেন মারাঠিতে দলিত মানে নিপীড়িত, বহির্ভূত। তিনি বলেছেন। ‘‘দলিত শব্দের মধ্যে কোনও অপমানজনক কিছু নেই। ছয় ও সাতের দশকে দলিত সাহিত্য ও দলত প্যান্থার আন্দোলনের জেরে এই পরিভাষাটি মান্যতা পায়।’’
আশা কোতোয়াল, দলিত মানবাধিকারের জাতীয় প্রচার কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত। তাঁর মতে এই পরিভাষা নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে দীর্ঘদিনের অর্জিত পরিচয়কে অস্বীকার করা হল। আশা বলেছেন, ‘‘সরকারের এই ভূমিকা আসলে সংরক্ষণ বিরোধিতারই অংশ। আমাদের পরিচয়কে ক্রমশ মুছে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা প্রয়োজনে এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করব।’’