দার্জিলিং এবং কালিম্পং জেলার উন্নয়নের ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করে শুক্রবার হিল এরিয়া ডেভেলপমেন্ট কমিটির (HADC) সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দিলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার (GNLF) প্রধান মান ঘিসিং। এমনকি সরকারের দেওয়া রাজ্যের মন্ত্রীত্বও ছেড়ে দেন তিনি। নিজের পদত্যাগ পত্রে ঘিসিং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে লেখেন, "দার্জিলিং এবং কালিম্পং জেলার উন্নয়নের স্বার্থে তৈরি হয়েছিল HADC, তবে বিভিন্ন কারণ ও পরিস্থিতির চাপে সেই উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়েছে। তাই বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এবং পাহাড়ি এলাকায় জনপ্রিয়তার কারণে আমি হিল এরিয়া ডেভেলপমেন্ট কমিটির সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করছি। সেই সঙ্গে ছাড়ছি সরকারের দেওয়া রাজ্য মন্ত্রীর পদও।"
জিটিএ-এর উপর পাহাড়ের মানুষের কোনো ভরসা নেই। পাহাড় জিটিএ চায়না। তাই পাহাড়ে রাজ্যসরকার জিটিএ নির্বাচন ঘোষণা করলে আমরা স্থগিতাদেশের জন্যে আদালতে যাবো। জিএনএলএফ সুপ্রিমো মন ঘিষিং হিল এরিয়া ডেভেলপমেন্ট কমিটি থেকে পদত্যাগ করার পরই জিটিএ নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন জিএনএলএফের মুখপাত্র নীরজ জীম্বা।
আরও পড়ুন: জঙ্গলমহল উদ্ধারে মরিয়া তৃণমূল কংগ্রেস
গত বছর গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে আন্দোলনের পর এই প্রথমবার পাহাড়ে বিপত্তির মুখে পড়ল তৃণমূল কংগ্রেস। জিএনএলএফ প্রধান নীরজ জিম্বা 'দ্য সানডে এক্সপ্রেসকে' বলেন, ২০১৭-য় তৈরি হওয়া HADC বর্তমানে রাজনৈতিক গোষ্ঠীর উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল - বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছিল পাহাড়ী এলাকায় ষষ্ঠ তফসিল রূপায়নও।
ঘিষিংয়ের ইস্তফার পর জিএনএলএফ সূত্রে খবর, বাস্তবে কোনো কাজই ছিলনা HADC-র। যা কাজ হবে তা Gorkhaland Territorial Administration বা জিটিএ-র মাধ্যমেই হবে। পাহাড়ে কোন উন্নয়নে টাকা বরাদ্দ করতে হলে তাও জিটিএ-র মাধ্যমেই হবে। ফলে একপ্রকার গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছিল HADC। অন্যদিকে, জিটিএ-তে প্রশাসক বসিয়ে এবং ঘিষিংকে মন্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে পাহাড়ে গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনকে দমাতে চাইছে রাজ্য বলে মনে করতে শুরু করে জিএনএলএফের একাংশ। পাশাপাশি, একমাত্র ষষ্ঠ তফসিলের মাধ্যমেই পাহাড়ের উন্নয়ন সম্ভব বলে মনে করে দলের এই অংশ। এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে জিএনএলএফ শিবিরে দ্বন্দ শুরু হতেই তড়িঘড়ি HADC থেকে ঘিষিং ইস্তফা দিয়েছেন বলে মনে করছেন পাহাড়ের রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অনেকেই।
ইতিমধ্যে, পাহাড়ে জিটিএ-র ওপর তাদের কোনো ভরসা নেই বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে জিএনএলএফ। পাহাড়ে জিটিএ-র চেয়ে আরও শক্তিশালি বোর্ড চাই, দাবি তাদের। এদিন জিএনএলএফের মুখপাত্র নীরজ জীম্বা বলেন, "আমরা জিটিএ চাইনা। পাহাড়ের মানুষও জিটিএ চায় না। আমরা জিটিএ-র থেকে আরও শক্তিশালি বোর্ড চাই। রাজ্য সরকার জিটিএ-তে নির্বাচন করতে চাইলে আমরা আদালতে গিয়ে স্থগিতাদেশ নিয়ে আসব।"
জীম্বা বলেন, "HADC তৈরি করা হয়েছিল মূলত অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে। দশ কোটি টাকা ধার্য করা হয়েছিল। দার্জিলিংয়ের ডিএমের কাছে এই তহবিল জমা রয়েছে। তবে এই অর্থনৈতিক সাহায্যই চূড়ান্ত নয়।" তিনি আরও বলেন, "দার্জিলিংয়ের ক্ষেত্রে একটা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক সমাধানে আসতে হবে, যেটা এখনও করা সম্ভব হয়নি। অবশ্যই শেষপর্যন্ত জিএনএলএফ এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের লক্ষ্য পাহাড়ে আলাদা রাজ্য গঠন। কিন্তু এই সময়ে দাঁড়িয়ে সেটা সম্ভব বলে মনে হচ্ছে না। সেই কারণেই আমার ষষ্ঠ তফসিল বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি। রাজনৈতিক সমাধানের উদ্দেশ্য আমরা মুখ্যমন্ত্রীকে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বসতে লিখিত অনুরোধ জানিয়েছি।"