Advertisment

তৃণমূলে শঙ্কা, স্বপ্নপূরণে অতীতের শিক্ষা কাজে লাগাতে মরিয়া মমতা

দলের ভাবমূর্তি বজায় রাখতে তৃণমূলের আসন্ন জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে হিংসা রোধের কড়া বার্তা দিতে পারেন নেত্রী।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
No violence to be Mamata Banerjees message at party meet

তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

জোড়া-ফুলের নজরে ২০২৪। অতীতের শিক্ষা কাজে লাগাতে মরিয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের ভাবমূর্তি বজায় রাখতে তৃণমূলের আসন্ন জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে হিংসা রোধের কড়া বার্তা দিতে পারেন নেত্রী।

Advertisment

২০১৬ সালে বড় ব্যবধানেই জয় পেয়েছিল মমতার দল। তারপর ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে ব্যাপক রিগিং, বুথ দখল, সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠেছিল শাসক দলের বিরুদ্ধে। এরপর ২০১৯ সালের লোকসভায় আশানুরূপ ফল হয়নি তৃণমূলের। রেকর্ড আসন বেড়েছিল বিজেপির। দলের এই বাজে নির্বাচনী ফলাফলের জন্য পঞ্চেয়ত ভোটের হিংসাকেই দায়ী করা হয়েছে তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ণে।

এবার তাই সতর্ক তৃণমূল নেতৃত্ব। গত এক বছর ধরে নানা হিংসাত্মক কার্যকলাপে না জড়িয়েছে শাসক দলের নেতা, কর্মীদের। বাদ যাননি জনপ্রতিনিধিরাও। আগামী বছর পঞ্চায়েত ভোট। হিংসার ঘটনা ঘটলে পের দলের ভাবমূর্তি খারাপ হতে পারে, জনমনে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা থাকে। সাত পাঁত ভেবেই তাই ঝুঁকি নিতে রাজি নন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল সূত্রে খবর, পঞ্চায়েত তো বটেই, ২০২৪-এর লোকভার প্রস্তুতিও এখন থেকে করতে চান নেত্রী। তাই আগামী ৫ মে দলের জাতীয় কর্মসমিতির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করবেন মমতা। সেখান থেকেই হিংসা রোধের বার্তা দেবেন তিনি।

ভোট পরবর্তী হিংসার অভিযোগে এমনিতেই সোচ্চার বিজেপি সহ বিরোধী শিবির। এইসব মামলার তদন্ত করছে সিবিআই। তারমধ্যেই গতমাসে ঘটেছে বগটুই গনহত্যা, হাঁসাখালির গণধর্ষণ ও মৃত্যু। গত ফেব্রুয়ারিতে ঘটেছে আনিস খান হত্যার ঘটনা। এরমধ্যে বগটুই ও হাঁসখালি মামলার তদন্ত করছে সিবিআই। বগটুইয়ের নৃশংস হত্যালীলায় আবার গ্রেফতার করা হয়েছে খোদ তৃণমূলের স্থানীয় নেতাই। যারপরনাই বিব্রত তৃণমূল সরকার। আর যাতে এ ধরণের ঘটনা না ঘটে তাই সজাগ জোড়া-ফুল শিবির।

তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, 'পঞ্চায়েতের ভোটে হিংসা হোক তা দিদি চান না। পঞ্টায়েত ভোটে হিংসা হলে শুধু ওই ভোটেই নয়, লোকসভা নির্বাচনের আগে দলের ভাবমূর্তি খর্ব হতে পারে। ফলে ফল ভোগার আশঙ্কা রয়েছে।'

একদিকে হিংসা রোধের কড়া বার্তা, অন্যদিকে রাজ্য সরকারি নানা প্রকল্পও পুনরায় শুরুর পথে। যার মধ্যে ক্ষতে প্রলেপের এক গভীর কৌশল রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। গত লোকসভা ভোটে বিপর্যের পর 'দিদিকে বলো' কর্মসূচি শুরু হয়েছিল। দলের বহু নেতা, কর্মীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভযোগ উঠে আসে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করেছিল তৃণমূল। এরপতো দুয়ারে সরকার, স্বাস্থ্য সাথী কার্ড, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প-তো রয়েইছে। যার প্রভাব দেখা গিয়েছে একুশের ভোটে। হৈহৈ করে জিতছে তৃণমূল। এবার নয়া মোড়কে ফের 'দিদিকে বলো' কর্মসূচির সূচনা করে ভাবমূর্তি উজ্জ্বলে মরিয়া ঘাস-ফুল নেতৃত্ব।

গত সোমবারই তৃতীয়বার তৃণমূলের রাজ্য জয়ের বর্ষপূর্তি হয়েছে। সেদিনই টুইটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লেখেন, 'গত বছর এই দিনে বাংলার অদম্য সাহসিকতা দেখানোর জন্য আমি আমাদের মা, মাটি, মানুষের কাছে চিরকাল কৃতজ্ঞ থাকবো। আমি এই দিনটিকে এখন থেকে মা, মাটি, মানুষ দিবস হিসাবে পালনের অনুরোধ করছি। জয় হিন্দ, জয় বাংলা।'

বছর দুই আগে থেকেই লোকসভার প্রস্তুতি শুরুরও বার্তা দিয়েছেন মমতা। তিনি জানিয়েছেন, 'আমাদের জনগণ বিশ্বকে দেখিয়েছে যে গণতন্ত্রে জনগণের শক্তির চেয়ে বড় কোনও শক্তি নেই। সত্যিকারের জাতি গঠনে আমাদের প্রতিশ্রুতি অব্যাহত রাখা উচিত, কারণ আরও অনেক যুদ্ধ একসঙ্গে লড়তে হবে এবং একসঙ্গে জয়ী হতে হবে।'

শীর্ষ তৃণমূল নেতার কথায়, 'গতবার, দিদিকে বোলো আমাদের দলকে লোকসভা নির্বাচনের বিপর্যয়কর ফলাফল থেকে পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করেছিল। এবার, আমরা সাংগঠনিকভাবে খারাপ অবস্থানে নেই, নির্বাচনেও ভালো ফলাফল হয়েছে। তবে বগটুই হত্যাকাণ্ড এবং আনিস খান হত্যাকাণ্ডের পরে, আমরা যদি ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করতে চাই তবে, আমাদের জনগণের ক্ষোভ দূর করতে হবে এবং সেটি দিদিকে বোলোর মাধ্যমেই হতে পারে।'

কিন্তু, দলনেত্রীর হিংসা রোধের বার্তা পেয়েই কী চপু করে যাবেন শাসক দলের নেতা, কর্মীরা? সংশয় প্রকাশ করে রাজ্য বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন যে, 'হিংসা এবং টিএমসি এখন সমার্থক শব্দ। মুখ্যমন্ত্রী যদি সৎভাবে হিংসতার বিরুদ্ধে থাকে, তাহলে তিনি খুন হওয়া ৫৬ জন বিজেপি কর্মীর পরিবারকে ন্যায়বিচার দেওয়ার পদক্ষেপ করুন। কিন্তু, তৃণমূলে জো জিতা ওহি সিকান্দার। এখন, হিংসা কমাতে চাইলেও তা সম্ভব নয়।'

সিপিআই(এম) নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, 'পশ্চিমবঙ্গে গত পাঁচ বছর নৈরাজ্য বেড়েছে। আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি এখন তলানীতে। বেকারত্ব বাড়ছে, শিক্ষিত বেকারের হার বেশি। আমরা দেখেছি কীভাবে কর্পোরেশন নির্বাচন হয়েছে এবং তারপরে কীভাবে তোলাবাজি বেড়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই জানেন তিনি কী সিদ্ধান্ত নেবেন, কিন্তু আমরাজানি মানুষ শুয়ে থাকা তোলাবাজি ও অনাচার বরদাস্ত করবে না।'

Read in English

Mamata Government CPIM bjp tmc Mamata Banerjee
Advertisment