গত বিধানসভা নির্বাচনে উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জে বিরাট ব্যবধানে জয় পেয়েছিলেন কংগ্রেস প্রার্থী। বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থীর জয়ের ব্যবধান ছিল ৪৬,৬০২। এর ঠিক তিন বছর পর রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী দেবশ্রী চৌধুরী কালিয়াগঞ্জ থেকে ৫৬,৭৬২ ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন। ফলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে, সহজ অঙ্কের হিসাবে ২৫ নভেম্বরের নির্বাচনে এই মুহূর্তে অনেকটাই এগিয়ে পদ্মশিবির। তবে নির্বাচনে জয়-পরাজয় শুধু অঙ্কের ওপর নির্ভর করে না, রসায়নেরও একটা বিষয় রয়েছে।
২০১৯ লোকসভার সিপিএম প্রার্থী মহম্মদ সেলিম বা কংগ্রেস প্রার্থী দীপা দাসমুন্সিকে এখনও দেখা যায়নি কালিয়াগঞ্জের প্রচারে। এদিকে তৃণমূল প্রার্থী তপন দেব সিংহের সমর্থনে ইতিমধ্যে রাজ্যের দুই মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভেন্দু অধিকারী প্রচার সেরে গিয়েছেন। অন্যদিকে, বিজেপির রাজ্য় পর্যবেক্ষক কৈলাশ বিজয় বর্গীয়, দলের জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য মুকুল রায়, রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ থেকে শুরু করে রাজ্য স্তরের নেতাদের আনাগোনা লেগেই রয়েছে এখানে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, বিধানসভায় আসন বাড়িয়ে নেওয়া যেমন পদ্মশিবিরের লক্ষ্য, তেমনই তিন বিধানসভার আসনে ভাল ফল করে তৃণমূল কংগ্রেসের ওপর রাজনৈতিক চাপ বাড়ানোও অন্যতম উদ্দেশ্য গেরুয়া শিবিরের। কিন্তু অধরা থেকে যাওয়া কালিয়াগঞ্জ এবারও কি খালি হাতে ফেরাবে তৃণমূলকে? এই প্রশ্নই এখন ঘোরাফেরা করছে রাজনৈতিক মহলে।
কংগ্রেস এই কেন্দ্রে প্রার্থী করেছে প্রয়াত বিধায়কের কন্যা ধীতশ্রী রায়কে। বাবা প্রমথনাথবাবু বিশাল ব্যবধানে জয় পেয়েছিলেন গতবার। কিন্তু গত তিন বছরে ব্যাপক রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটে গিয়েছে উত্তরবঙ্গের অন্যান্য বিধানসভার মতো এই কেন্দ্রেরও। গত লোকসভা ভোটের নিরিখে বিজেপি প্রার্থী কমল সরকার কংগ্রেসের থেকে কয়েকগুন এগিয়ে গিয়েছেন। পাশাপাশি, তৃণমূল দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে। ফলে কংগ্রেসের এখন একটাই ভরসা, ২০১৬ সালের মতো ফের বাম-কং মিলিত ভোটব্যাঙ্ক। অন্য দিকে কংগ্রেস থেকে কাউন্সিলর ভাঙিয়ে পুরসভা দখল করলেও ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে পুরসভার একটা আসনেও জয় পায়নি ঘাসফুল শিবির।
২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী পেয়েছিলেন ১,১২,৮৬৮টি অর্থাৎ ৫২.৫৮ শতাংশ ভোট। তৃণমূল প্রার্থীর প্রাপ্য ভোট ছিল ৬৬,২৬৬। আর বিজেপি পেয়েছিল মাত্র ১২.৭ শতাংশ ভোট। ভোটের অঙ্কে ২৭,২৫২। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি এই বিধানসভায় অন্যদের ছাপিয়ে যায়। ভোট যদিও সবসময় পাটিগণিতের নিয়মে হয় না, তবুও ৬ মাসের ব্যবধানে প্রায় ৫৭ হাজারের ব্যবধান কতটা কমানো সম্ভব তাও একটা ফ্যাক্টর। ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৯টি, পুরসভার সবকটি ওয়ার্ডে লোকসভার নিরিখে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি।