ইসলামপুরে ছাত্র পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনায় মৃত্যু হল আরও এক ছাত্রের। মৃতের নাম তাপস বর্মণ। তার বাড়ি দাড়িভিট এলাকায় বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। মৃত তাপস ইসলামপুর কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিল বলে পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে। শুক্রবার ভোর চারটে নাগাদ উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে মৃত্যু হয় তার। তাপসের মৃত্যুর পর কান্নায় ভেঙে পড়ে পরিবার। পুলিশের গুলিতেই তাপসের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তারা।
এদিকে বিজেপির ডাকা ১২ ঘন্টা বনধকে কেন্দ্র করে জায়গায় জায়গায় হিংসার খবর পাওয়া গিয়েছে। জাতীয় সড়কে ভাঙচুর করা হয়েছে সরকারি বাস। জেলা জুড়ে মোতায়েন রয়েছে র্যাফ। ইসলামপুরে মোতায়েন রয়েছে কমব্যাট ফোর্স। অন্যদিকে, ইসলামপুরে গতকাল গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত ছাত্র রাজেশ সরকার তাদের সমর্থক বলে দাবি করেছে এবিভিপি।
প্রসঙ্গত, ইসলামপুর ব্লকের দাড়িভিটা উচ্চ বিদ্যালয়ে উর্দু মাধ্যমের কোনও ছাত্রছাত্রী না থাকলেও সম্প্রতি বিদ্যালয়ে দুজন উর্দু ও একজন সংস্কৃতের শিক্ষককে নিয়োগ করা হয়। বিষয়টি নিয়ে আগে থেকেই ক্ষোভ ছিল ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে। বৃহস্পতিবার সেই শিক্ষকেরা স্কুলে যোগ দিতে এলে রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে ছাত্র-ছাত্রীরা। ইসলামপুর থানার পুলিশ অবরোধ তুলতে গিয়ে তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। অভিযোগ, পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ও পাথর ছোড়া হয়। পুলিশ প্রথমে লাঠিচার্জ করলেও পরে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় এবং রাবার বুলেট চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলিও চালায় বলে অভিযোগ। অভিযোগ রাজেশ সরকার ও তাপস বর্মন সহ বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়। ছাত্রদের ছোড়া ইট ও পাথরের আঘাতে তিনজন পুলিশকর্মীও আহত হন বলে জানা গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জেলা রিজ়ার্ভ ফোর্সের বিশাল বাহিনী ঘটনাস্থলে আসে।
ঘটনার জেরে শুক্রবারও ইসলামপুরের দাড়িভিট গ্রামে উত্তেজনা রয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সকাল থেকেই গ্রামে পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে।
এই ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার ১২ ঘন্টা উত্তর দিনাজপুর বন্ধের ডাক দেয় জেলা বিজেপি। সকাল ৬টা থেকে বনধ শুরু হয় জেলায়। রায়গঞ্জ সহ বিভিন্ন এলাকায় বনধের মিশ্র প্রভাব পড়ে। কিন্তু বনধ উপেক্ষা করেই রাস্তায় নামায় শুক্রবার সকালে রায়গঞ্জ শহরের কসবা এলাকায় একটি সরকারি বাসে ভাঙচুর চালায় বন্ধ সমর্থকরা। রায়গঞ্জ থানার রূপাহার এলাকায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কেও একটি সরকারি বাসে ভাঙচুর করা হয়। । পিকেটিং করে জাতীয় সড়ক অবরোধ করতে দেখা গিয়েছে বিজেপির জেলা নেতৃত্বদের।
এদিকে ঘটনার প্রতিবাদে ২২তারিখ ডাকা ছাত্র ধর্মঘটের প্রচারে এবং সমর্থনে শিলিগুড়িতে মিছিল বের করে এসএফআই। অন্যদিকে মৃত রাজেশকে নিজেদের সদস্য বলে দাবি করেছে এবিভিপি। শুক্রবার শিলিগুড়ি জার্নালিস্টস ক্লাবে এক সাংবাদিক বৈঠক করে এই দাবি জানিয়েছে এবিভিপি শিলিগুড়ি সাংগঠনিক জেলা কমিটি। ইসলামপুরে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনার নিন্দা করেছেন সাংসদ মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেন, "স্কুল কর্তৃপক্ষর উচিত ছিল স্থানীয় মন্ত্রী, বিধায়ক, অভিভাবক, শিক্ষা দপ্তর ও অন্য সবাইকে নিয়ে আলোচনায় বসে সমস্যা মেটানো। এটা ক্ষমাহীন অপরাধ। দোষী পুলিশের শাস্তি চাই।"