পোক্ত-স্থায়ী নেতৃত্বের দাবি তুলে সোনিয়া গান্ধীকে চিঠি দিয়েছিলেন ২৩ কংগ্রেস শীর্ষ নেতা। যা নিয়ে আলোচনা তো দূরঅস্ত। উল্টে পত্র প্রেরকদেরই দলের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে প্রবল আক্রমণের মুখোমুখি হতে হয়। সোনিয়াকে পরবর্তী ৬ মাসের জন্য প্রধান হিসাবে রেখে, নেতৃত্ব বাছাইয়ে সংগঠনে নির্বাচনের প্রতিশ্রুতিতে শতাব্দী প্রাচীন দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল কোন রকমে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হলেও আজদে যে তা ছাই চাপা আগুন হয়েই রয়ে গিয়েছে তা কপিল সিবালের কথাতেই স্পষ্ট। সোনিয়া গান্ধীকে দেওয়া চিঠির অন্যতম সাক্ষরকারী সিবাল। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে তিনি জানিয়েছেন, আমাদের যখন আক্রমণ করা হল তখন যেমন কেউ এগিয়ে এল না- তেমনই আমাদের তোলা একাধিক প্রশ্নের একটিরও সমাধান হয়নি।
Advertisment
কপিল সিবাল বলেন, কংগ্রেস সবসময়ই বিজেপির বিরুদ্ধে সংবিধানের লংঘনের অভিযোগ তোলে। মোদী সরকার গণতন্ত্রের ভিত্তি ধ্বংস করছে বলে অভিযোগ করা হয়। কপিল সিবালের মতে, 'আমরা কী চাইছি? আমরা দলের সংবিধান মেনে চলতে চাই। এতে কেন এত বাধা দেওয়া হচ্ছে।'
সিবাল বলেন, 'এ দেশের দলীয় রাজনীতিতে স্বীকৃতি অন্যতম উপাদন হল আনুগত্য। কিন্তু আমরা আনুগত্যের সঙ্গেও অতিরিক্ত কিছুর দাবি করি। দক্ষতা, সবাইকে নিয়ে চলার ক্ষমতা, দায়দ্ধতা হল সেই অতিরিক্ত উপাদান। এছাড়াও সবার মতামত শোনার ধৈর্য ও আলোচনা করার ক্ষমতাও বড় বিষয়। রাজনৈতিক নেতৃত্বের এইসব গুণাবলী থাকলে রাজনীতি অন্য খাতে বয়ে চলবে।'
Advertisment
চিঠিতে সর্বক্ষণের কার্যকরী নেতৃত্ব যাঁকে বা যাঁদের দেখা যায় নির্বাচনের মাধ্যমে এমন নেতাদের নেতৃত্ব দানের দাবি করা হয়। এছাড়াও দল পরিচালনায় প্রাতিষ্ঠানিক যৌথ নেতৃত্বের আর্জি জানানো হয়েছিল। কিন্তু, ওয়ার্কিং কমিটির আলোচনায় এসব নিয়ে আলোচনা হয়নি. উল্টে পুরো বিতর্কটাই দলের প্রতি কার কেমন দায়বদ্ধতা- সেদিকে মোড় নেয়।
সিবালের কথায়, ওই চিঠিতে যা বলা হয়েছিল ওয়ার্কিং কমিটির গোটা দলকে তা নিয়ে অবহিত করা উচিত ছিল। কংগ্রেসের এই আইনজীবী নেতার কথায়, 'এই মৌলিক কাজটি করা হতেই পারত। তারপর যদি ওই চিঠি থেকে কিছু ভূল পাওয়া যেত তাহলে অবশ্যই ২৩ নেতাকে প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করানো যেত। কিন্তু, চিঠির মূল বিষয় নিয়ে আলোচনা না করে চার সময়কাল নিয়ে বেশি কথা হল- এটাতো প্রকৃত কারণ থেকে বা সমস্যা থেকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা। নেতৃত্বের প্রশ্নে আমরা সময়ের যে দাবি তুলেছিলাম তা নিয়ে কথা বলারই প্রয়োজন কেউ অনুভব করলব না। উল্টে আমরা যাঁরা চিঠি দিয়েছিলাম তাঁদের বিদ্রোহী বলে তকমা দেওয়ার চেষ্টা হল।'
'চিঠিতে ব্যবহার করা শব্দ নিয়ে প্রশ্ন তুললেন নেতৃত্ব, আমাদের বিশ্বাসঘাতক বলা হল। বলা হল এটা কংগ্রেসের সংস্কৃতি নয়। কিন্তু, আমাদের চিঠির ভাষা অত্যন্ত পরিশিলিত ছিল।' দাবি সিবালের।
কেন এখনও পর্যন্ত কোনও কংগ্রেস নেতা পত্র প্রেরক ২৩ নেতাকে সমর্থন করেননি? কপিল সিবালের দাবি, 'রাজনীতিতে লোকজন প্রকাশ্যে কিছু বলেন এবং অন্যথায় গোপনে চিন্তা করেন। বাইরে এক বলেন আবার দলের ভিতরে অন্য কিছু বলেন।' তাঁর সংযোজন, 'দেশবাসী যে যেখানেই তাকুন না কেন, তাঁরা কংগ্রেসের হোক বা অন্য দলের- সবাই আমাদের পদক্ষেপকে সাধুবাদ দিয়েছে। স্পষ্টতই, জনসাধারণের এই অনুভূতি যা কংগ্রেসকে পুনরুজ্জীবিত করার আমাদের আকাঙ্খার প্রশংসা করে। দেশে বিরোধী না থাকলে গণতন্ত্রও বিপন্ন হয়।'