এনআরএসকাণ্ডে এবার নাম না করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই সমালোচনা করলেন ‘বিতর্কিত’ তৃণমূল বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত। ‘‘রাগ করে লাভ নেই, যত দ্রত সম্ভব আলোচনায় বসে সমস্যা মেটানো জরুরি। কেউ এখানে বড় নয়, কেউ এখানে ছোটো নয়। আমি ক্ষমা চাইলে যদি কাজ হয়, তাহলে আমি ক্ষমা চাইতে রাজি আছি’’, এ রকম ভাবেই পরোক্ষে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষের সুরে পরামর্শ দিলেন এই মুহূর্তে বঙ্গ রাজনীতিতে বহুলচর্চিত সব্যসাচী দত্ত। প্রসঙ্গত, জুনিয়র ডাক্তারদের মারধরের ঘটনার প্রতিবাদে গত ৪ দিন ধরে অচলাবস্থা এনআরএস-সহ রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তাররা। অন্যদিকে, জুনিয়র ডাক্তারদের উদ্দেশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হুঁশিয়ারির প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার থেকে রাজ্যের বহু চিকিৎসক গণইস্তফা দিচ্ছেন। অবিলম্বে মুখ্যমন্ত্রীকে ক্ষমা চাইতে হবে। ‘‘এনআরএসে মুখ্যমন্ত্রী না এলে আন্দোলন উঠবে না’’ বলে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। এই প্রেক্ষাপটে দলনেত্রীর ভূমিকা নিয়ে যেভাবে সরব হলেন সব্যসাচী, তা রাজনৈতিক দিক থেকে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
ঠিক কী বলেছেন বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্ত?
এদিন এনআরএস ইস্যুতে বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্ত বলেন, ‘‘এটা মর্মান্তিক হচ্ছে। শুধুমাত্র সরকারি হাসপাতালে নয়, কাল আমার ওখানে সল্টলেকে কয়েকটা নার্সিংহোমের চিকিৎসকরাও কর্মবিরতি করেছেন। আলোচনায় বসে যত দ্রুত সম্ভব সমস্যা মেটানো জরুরি। ডাক্তাররা যদি এরকম বিরূপ প্রতিক্রিয়া করেন। যার উপরই রাগ করে করুন, যদি আমার উপর রাগ করে করেন, আমি কিন্তু অসুস্থ হয়নি। এটার সুষ্ঠু সমাধান করা দরকার। ডাক্তারদের উপর রাগ করে আমরা চোরের উপর রাগ করে মাটিতে ভাত খাওয়ার মতো হচ্ছে...কেউ এখানে বড় নয়, কেউ এখানে ছোটো নয়। আমি ক্ষমা চাইলে যদি কাজ হয়, তাহলে ক্ষমা চাইব’’।
আরও পড়ুন: এনআরএসকাণ্ডে তৃণমূলের জন্য ‘লজ্জিত’ ববি কন্যা
একইসঙ্গে এ প্রসঙ্গে ফিরহাদ হাকিমের মেয়ে শাব্বা হাকিমের বক্তব্য তুলে ধরে সব্যসাচী বলেন, ‘‘কাল আপনারা দেখেছেন ফিরহাদ হাকিমের মেয়ে সরব হয়েছেন। আজ কাকলি ঘোষ দস্তিদারের (তৃণমূল সাংসদ) ছেলে ন্যক্করজনক পোস্ট করেছেন’’। উল্লেখ্য, ডাক্তারদের পাশে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভে সোচ্চার হয়েছেন ফিরহাদ-কন্যা শাব্বা হাকিম।
আরও পড়ুন: মমতার উল্টো মেরুতে দাঁড়িয়ে চিকিৎসক আন্দোলন নিয়ে টুইট দেবের
উল্লেখ্য, লোকসভা নির্বাচনের মুখে সল্টলেকে সব্যসাচীর বাড়িতে মুকুল রায়ের লুচি-আলুর দম খাওয়ার পর থেকেই তৃণমূলে কার্যত ‘ব্রাত্য’ সব্যসাচী দত্ত। একইসঙ্গে সব্যসাচীর বিজেপিতে যোগদানের জল্পনা এই মূহূর্তে রাজ্য রাজনীতিতে বহুলচর্চিত বিষয়। কয়েকদিন আগেই লোকনাথ বাবার পুজোয় মুকুল রায়ের সঙ্গে বসে পাত পেড়ে খিচুড়ি খেতেও দেখা গিয়েছে সব্যসাচীকে। যে ঘটনায় বিধাননগরের মেয়রের বিজেপিতে যোগদানের জল্পনা আরও বেড়েছে। এই প্রেক্ষাপটে এনআরএস ইস্যুতে স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এভাবে নাম না করে সব্যসাচীর বার্তা এ জল্পনা আরও উস্কে দিল বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ।