সন্দেশখালিতে রাজনৈতিক হিংসায় ৩ জনের মৃত্যু ঘিরে উত্তাল হয়ে উঠেছিল রাজ্য রাজনীতি। সেই উত্তেজনার আবহে নয়া সংযোজন এনআরএসে জুনিয়র ডাক্তার নিগ্রহের ঘটনা। নীলরতন সরকার হাসপাতালে জুনিয়র ডাক্তার নিগ্রহ নিয়ে এই মুহূর্তে তোলপাড় বঙ্গ রাজনীতি। পরশু দিন থেকে কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে কার্যত থমকে চিকিৎসা পরিষেবা। যার জেরে চরম হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে রোগীদের। আর এ ঘটনায় এখনও নিশ্চুপ রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সন্দেশখালিকাণ্ডের পর মমতা সরকারকে নিশানা করতে এবার এনআরএসকাণ্ডকেই হাতিয়ার করেছে বিরোধীরা। বুধবার লালবাজার অভিযানের দিনও বিজেপি নেতৃত্বের গলায় শোনা গিয়েছে ডাক্তার নিগ্রহের ঘটনা।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘তোষণের রাজনীতি’ নিয়ে সরব হয়ে লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে নেমেছিল বঙ্গ বিজেপি। এনআরএসের ঘটনায় সেই অস্ত্রেই শান দিতে মরিয়া গেরুয়াবাহিনী। উল্লেখ্য, এনআরএসে ৭৪ বছর বয়সী মহম্মদ সৈয়দের মৃত্যু ঘিরেই গোলমালের সূত্রপাত। চিকিৎসার গাফিলতিতে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। জুনিয়র ডাক্তারদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে নিহত রোগীর পরিজনদের বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন: West Bengal News Live Updates Today: এনআরএসে জারি অচলাবস্থা, অনড় চিকিৎসকরা
এ ঘটনা প্রসঙ্গে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘এ সরকারের আমলে ডাক্তাররাও সুরক্ষিত নন...বাইরে থেকে লোক আনা হচ্ছে। বিজেপির মিছিল আটকাতে তৎপর হয় পুলিশ, অথচ যখন ডাক্তাররা মার খাচ্ছিলেন এনআরএসে, কোথায় ছিল পুলিশ? একটা সম্প্রদায়ের কয়েকজন সমাজবিরোধী পুলিশি নিরাপত্তায় এসব করছেন’’। উল্লেখ্য, সন্দেশখালিকাণ্ডের প্রতিবাদে বুধবার বিজেপির লালবাজার অভিযান ঘিরে ধুন্ধুমার কাণ্ড ঘটে। জলকামান, কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ।
কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘বিক্ষোভরত ডাক্তারদের সঙ্গে অবিলম্বে কথা বলে সমাধান করা উচিত মুখ্যমন্ত্রীর। ডাক্তারদের নিরাপত্তা একটা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। পাশাপাশি সাধারণ মানুষের চিকিৎসাও খুব জরুরি’’। এসএফআই, সিপিএমের ছাত্র সংগঠনও এদিন ডাক্তারদের পাশে দাঁড়িয়ে সরকারের বিরুদ্ধে মিছিল বের করে।
চিকিৎসার গাফিলতিতে রোগী মৃত্যুর অভিযোগ ঘিরে রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছিল এনআরএস। নিহত রোগীর পরিজনদের হাতে ‘মার’ খেয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দুই জুনিয়র ডাক্তার যশ টেকওয়ানি ও পরিবহ মুখোপাধ্যায়। এঁদের মধ্যে পরিবহ গুরুতর আঘাত নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি। এ ঘটনার জেরেই কার্যত আন্দোলনে নেমেছে চিকিৎসক মহল। বুধবার রাজ্যের সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ১২ ঘণ্টা বন্ধ রাখা হয় আউটডোর পরিষেবা। এনআরএস, কলকাতা মেডিক্যালে বন্ধ থাকে জরুরি পরিষেবাও। পাশাপাশি ন্যাশনাল মেডিক্যাল, আর জি কর, এসএসকেম, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল, মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল, মেদিনীপুর মেডিক্যাল, বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজেও এর প্রভাব পড়েছে। যার জেরে কার্যত রোগীদের হাহাকার পড়ে গিয়েছে। এ ঘটনায় ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন বিক্ষোভকারীরা। কিন্তু এ নিয়ে মুখ খোলেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন: ‘চ্যালেঞ্জ! পশ্চিমবঙ্গকে গুজরাট বানাবই’
জট কাটাতে এনআরএসে ছুটে গিয়েছিলেন মমতার ডেপুটি স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। কিন্তু চিড়ে ভেজেনি। চিকিৎসকদের সঙ্গে সরকারপক্ষের দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে কিন্তু রফা মেলেনি। বুধবার সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পাশে থাকার’ আশ্বাসও কাজে আসেনি।
অন্যদিকে, এনআরএসের ঘটনায় ৩টি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে এন্টালি থানায়। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪ এ ধারায় (গাফিলতিতে মৃত্যু) জুনিয়র ডাক্তারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন সৈয়দের পরিজনরা। সৈয়দের প্রতিবেশীরাও জুনিয়র ডাক্তারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে সৈয়দের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে আরেকটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত এ ঘটনায় ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতরা সকলেই নিহত রোগীর পরিজন।
Read the full story in English