বিজেপি নেতা ও কর্মীরা ঘরোয়া আলোচনায় একবাক্যে স্বীকার করে নেন, সংঘ পরিবারের সদস্য হিসেবে বিজেপি আরএসএসের নির্দেশেই চলে। বিজেপির সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদকরা হলেন আরএসএসের প্রতিনিধি। তাঁদের মাধ্যমেই বিজেপিকে নিয়ন্ত্রণ করে আরএসএস।
আর, এই সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদকদের নির্দেশ দেন আরএসএস নেতৃত্ব। গত ২ জুন, নাগপুরে আরএসএসের তৃতীয় বর্ষের প্রশিক্ষণ শেষে সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত জানিয়েছেন, 'প্রতিটি মসজিদে শিবলিঙ্গ খোঁজার দরকার নেই।'
বিজেপি সূত্রে খবর, এর অর্থই হল হিন্দুত্ববাদী আন্দোলনের পথে আপাতত যাওয়ার কোনও পরিকল্পনা নেই সংঘ পরিবারের। কারণ, ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচন। সেই নির্বাচনে জিততে হলে প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেসকে হারাতে হবে বিজেপিকে। কংগ্রেস বর্তমানে অত্যন্ত দুর্বল।
এই পরিস্থিতিতে নির্বাচনে জয়ের জন্য বিজেপির হিন্দুত্ববাদের আবেগে সওয়ার হওয়ার প্রয়োজন দেখছে না সংঘ পরিবার। বদলে, উন্নয়নের রথে চেপেই আসন্ন কয়েকটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন এবং ২০২৪ সালের লোকসভা উতরোতে চান সংঘ নেতৃত্ব।
এমনিতে রাজনীতি সচেতন সামাজিক সংগঠন হলেও সংঘ পরিবারের সদস্যদের প্রতিটি লোকসভা নির্বাচনে হিন্দুত্ববাদের হয়ে প্রচার চালাতে দেখা যায়। যা কার্যত নির্বাচনে বিজেপিকে মাইলেজ পাইয়ে দেয় বলেই সংঘ পরিবারের দাবি। কিন্তু, বর্তমান পরিস্থিতি অনুকূল হওয়ায় হিন্দুত্ববাদ নিয়ে বাড়াবাড়ি চাইছে না সংঘ। কারণ, ইতিমধ্যেই বিভিন্ন আরব দেশের সঙ্গে সখ্যতা বাড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
তার জেরে, ওই সব দেশের সঙ্গে ভারতের ভালো পরিমাণ আর্থিক লেনদেন হচ্ছে। এসব কথা মাথায় রেখেই নুপুর শর্মাদের মতো দলের কট্টর হিন্দুত্ববাদী নেতাদের বক্তব্য রাখার ক্ষেত্রে সাবধান করেছিল বিজেপি। কিন্তু, বরাবর যে ধাঁচে তৈরি, সেই কট্টর হিন্দুত্ববাদের ধাঁচ অগ্রাহ্য করতে পারেননি নুপুর। আর, তার জেরেই তাঁকে সাসপেন্ড করতে দল বাধ্য হয়েছে। এমনই মনে করছেন বিজেপি নেতারা।
আরও পড়ুন- নবীকে নিয়ে মন্তব্যের পরও দমতে নারাজ নুপুর শর্মা, হুমকির পাশাপাশি পাচ্ছেন সমর্থনও
শুধু নুপুর শর্মা এবং নবীন জিন্দলদের সাসপেন্ড করাই নয়। বিজেপি সূত্রে খবর, কার্যত আরএসএসের দেখানো পথেই এবার বিজেপির মিডিয়া সেল করা হচ্ছে। বিভিন্ন টিভি বিতর্কে কারা প্যানেলিস্ট হবে তা স্থির করে দেবে মিডিয়া সেল। তাঁরা যাতে বিতর্কের সময় সীমা লঙ্ঘন না-করেন, সেই ব্যাপারেও তাঁদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। তবে, বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছেন, ইতিমধ্যেই অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। বেশ কয়েকটি মুসলিম দেশ ভারতের পণ্য ব্যবহার করতে চাইছে না।
এই পরিস্থিতিতে মুসলিম সংগঠনগুলোর একাংশের অভিযোগ, গত কয়েক বছরে বারেবারে দেখা গিয়েছে, ইজরায়েলের কায়দায় ভারতেও মুসলিমদের সম্পত্তির ওপর বুলডোজার চালাচ্ছে বিজেপির সরকার। নুপুর শর্মাদের সাসপেন্ড করে, সেই ক্ষতে প্রলেপ দেওয়া যাবে কি? সেই প্রশ্নই তুলেছে ওই সংগঠনগুলো।
Read full story in English