সামনেই লোকসভা নির্বাচন। নির্বাচনের আগে ফের UCC ইস্যুতে বিরোধীদের নিশানা করলেন মোদী বিভাজনমূলক রাজনীতি এবং মুসলিম সম্প্রদায়কে উসকানি দেওয়ার অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তিনি আরও বলেন, সংবিধানেও নাগরিকদের সমান অধিকারের উল্লেখ রয়েছে। বিরোধীরা ইউনিফর্ম সিভিল কোডের বিষয়টি নিয়ে ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি করছেন। মোদীর এই ভাষণের পরই মঙ্গলবার গভীর রাতে জরুরি বৈঠক ডাকল ‘অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড’।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মঙ্গলবার (২৭ জুন) ইউনিফর্ম সিভিল কোডের (ইউসিসি) পক্ষে কথা বলার সময় বিরোধী দলগুলির উপর তীব্র আক্রমণ করেছেন। মোদী এদিন বিরোধী দলগুলিকে প্রশ্ন করেছিলেন যে কীভাবে ‘দ্বৈত ব্যবস্থা’ নিয়ে দেশ চলবে। এই ইস্যুতে মুসলমানদের উসকানি দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এই বক্তব্যের পর দেশে রাজনৈতিক তোলপাড় শুরু হয়েছে। বিজেপির দাবি ইউনিফর্ম সিভিল কোড দেশে কার্যকর হলে লিঙ্গবৈষম্য দূর হবে, সামাজিক সম্প্রীতি বজায় থাকার পাশাপাশি মহিলাদের ক্ষমতায়ন বাড়বে।
মধ্যপ্রদেশের ভোপালে দলীয় কর্মীদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিচ্ছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। এ সময় তিনি ইউসিসি ইস্যু নিয়ে তাঁর বক্তব্য রাখেন। মোদী বলেন, ‘আমরা দেখছি ইউনিফর্ম সিভিল কোডের নামে মানুষকে উসকানি দেওয়া হচ্ছে। একটি বাড়িতে একজন সদস্যের জন্য একটি আইন এবং অন্য সদস্যের জন্য অন্য আইন থাকলে, বাড়িটি চলতে পারবে কি? তাহলে এমন দ্বৈত ব্যবস্থা নিয়ে দেশ চলবে কী করে’।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুপ্রিম কোর্ট বারবার ' ইউনিফর্ম সিভিল কোডের’ পক্ষে কথা বলেছে। কিন্তু যারা ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি করছে তারা এর বিরোধিতা করছে। এক দেশে কিভাবে দুই ব্যবস্থা থাকতে পারে তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মোদী। বিজেপি সিদ্ধান্ত নিয়েছে তুষ্টি ও ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির পরিবর্তে সন্তুষ্টির পথে হাঁটবে। মোদী এদিন বলেন, ‘ভারতীয় মুসলমানদের বুঝতে হবে কোন রাজনৈতিক দল তাদের উস্কানি দিয়ে তাদের সুবিধা থেকে বঞ্চিত করছে’। তিনি বলেছিলেন যে ‘বিরোধীরা আমাদেরকে দোষারোপ করে, তারা মুসলিম ভোটব্যাঙ্কের লক্ষ্যে মুসলমানদের যোগ্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত করছেন। তারা যদি সত্যিকার অর্থে মুসলমানদের স্বার্থে কাজ করতেন তাহলে মুসলিম পরিবারগুলো শিক্ষা ও চাকরিতে পিছিয়ে থাকত না। প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছেন যে কিছু লোকের তুষ্টির নীতি দেশের জন্য ধ্বংসাত্মক’। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু হলে দেশের সব ধর্মের মানুষ বিয়ে এবং সম্পত্তির উত্তরাধিকার বিষয়ে একই আইন মানতে বাধ্য হবে।
আরও পড়ুন: < হিংসার ঘটনায় মোদীকে তুলোধোনা, দু’দিনের রাজ্য সফরে রাহুল, জোর চর্চা >
‘মেরা বুথ, সবসে মজবুত’ কর্মসূচিতে বক্তৃতা করতে গিয়ে মোদী তিন তালাক ও অভিন্ন দেওয়ানি বিধির প্রসঙ্গ টানেন। তিনি বলেন, ‘আজ আমরা দেখছি কীভাবে মানুষ অভিন্ন দেওয়ানি বিধির নামে অন্যদের উসকে দেওয়ার চেষ্টা করছে। একটি পরিবারের একজন সদস্যের জন্য একটি আইন এবং একটি পরিবারের অন্য সদস্যের জন্য অন্য আইন থাকলে, সেই পরিবারটি কি সুচারুভাবে চলতে পারে? কীভাবে একটি দেশ এই ধরনের দ্বৈত ব্যবস্থায় কাজ করবে? আমাদের মনে রাখতে হবে যে ভারতীয় সংবিধানও নাগরিকদের সমান অধিকারের কথা বলে।’
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর বিরোধী দলের নেতাদের আক্রমণের মুখে পড়েন তিনি। এআইএমআইএম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়াইসি সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেছেন যে প্রধানমন্ত্রীকে বুঝতে হবে সংবিধানের ২৯ ধারা একটি মৌলিক অধিকার, আমি মনে করি প্রধানমন্ত্রী এটি বুঝতে পারেননি। সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা আছে। আমরা সবসময় চাই আইনের মাধ্যমে সমাজ সংস্কার করা হোক। তিনি বলেছেন, মোদীজি বলছেন তিন তালাক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তিনি তিন তালাকের বিরুদ্ধে আইন তৈরি করেছেন। কিন্তু গ্রাউন্ড লেভেলে এর কোনও প্রভাব পড়ছে না। সেই জায়গায় নারীদের উপর নির্যাতন ক্রমশই বাড়ছে।
কংগ্রেসের তারিক আনোয়ার সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেছেন যে ‘যখন একটি আইন তৈরি করা হয়, এটি সবার জন্য এবং তাদের এটি অনুসরণ করতে হবে। তাহলে ইতিমধ্যেই পাস হওয়া বিল নিয়ে আলোচনার দরকার কী? প্রধানমন্ত্রী মোদী এটা করছেন কারণ সামনেই মধ্যপ্রদেশে নির্বাচন। তিনি দেশের জন্য কিছুই করেননি সেই দিক থেকে নজর ঘোরাতেই মোদী এই বিষয় নিয়ে ফের সুর চড়াতে শুরু করেছেন’।
কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কেসি ভেনুগোপাল বলেছেন ‘কেন প্রধানমন্ত্রী মোদি বেকারত্ব, দারিদ্র্য, মুদ্রাস্ফীতি, মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলছেন না। মণিপুর ৬০ দিন ধরে জ্বলছে, এমনকি তিনি একবারও শান্তির আবেদন করেননি। এসব বিষয় থেকে দৃষ্টি সরাতে তারা এমন কাজ করছেন মোদী’।
কংগ্রেস নেতা এবং অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের কার্যনির্বাহী সদস্য আরিফ মাসুদ বলেছেন যে ‘প্রধানমন্ত্রীর মনে রাখা উচিত যে তিনি ডঃ বাবাসাহেব আম্বেদকর প্রণীত সংবিধানের উপর শপথ নিয়েছেন। দেশের সব অংশের মানুষের সংবিধানের প্রতি আস্থা রয়েছে এবং তা পরিবর্তন হতে দেবে না’।
ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল প্রশ্ন তোলেন যে ‘এটি বাস্তবায়িত হলে আদিবাসীদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের কী হবে। বিজেপি কেন সবসময় হিন্দু-মুসলিম দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করে? ছত্তিশগড়ে আদিবাসী আছে। তাদের কনভেনশন এবং তাদের নিয়ম সম্পর্কে কি, যার মাধ্যমে তাদের সমাজ কাজ করে। ইউনিফর্ম সিভিল কোড কার্যকর হলে তাদের ঐতিহ্যের কী হবে’ ।
বিরোধী নেতাদের প্রতিবাদের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী মোদীর বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা৷ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভি. মুরালিধরন বলেছেন যে প্রধানমন্ত্রী মোদি বিশেষভাবে বলেছেন যে সংবিধান এটি নির্ধারণ করে এবং আদালত একভাবে বলছে যে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর করা উচিত। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মীনাক্ষী লেখি বলেছেন, ‘দেশে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করা উচিত। তাতে মহিলাদের অধিকার সুরক্ষিত হবে। ভারত সরকার এর জন্য যা করতে হবে তা করবে’।