সবাই একটাই কথা জানতে চায়, এ কী হল! অমিতাভ বচ্চন অভিনীত জনপ্রিয় হিন্দি সিনেমা অগ্নিপথের বিখ্যাত দৃশ্যে দেখানো হয়েছিল, ফোনের ঘণ্টি ঘনঘন বেজেই চলেছে। সঙ্গে সংলাপ ছিল- ফোনে মানুষ ভাবে এক, বলে এক, করে আরেক। ভাইপো অজিত পাওয়ার, ছায়াসঙ্গী ছগন ভুজবলের মহারাষ্ট্র সরকারে যোগদানের পরই শরদ পাওয়ারের বাড়িতে এখন ঘনঘন ফোন বেজে চলেছে। দিল্লি থেকে কলকাতা, দেশের নানা প্রান্ত থেকে ফোন আসছে। সবাই ইনিয়ে-বিনিয়ে একটাই কথা জানতে চায়, হলটা কী?
আর, সেই সব কথার মধ্যে উঁকি দিচ্ছে একটাই প্রশ্ন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে কি এতবড় সংকটে পড়েছেন শরদচন্দ্র গোবিন্দরাও পাওয়ার? মহারাষ্ট্রের চিৎপাবন ব্রাহ্মণ সন্তানের নেতৃত্বে ১৯৯৯ সালে জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টি তৈরি হয়েছে। অনেকে ভেবেছিলেন, কংগ্রেস ভেঙে নিজের দল? অবাস্তব একটা ব্যাপার! সেই সব সমালোচকদের ভুল প্রমাণ করেছেন তিনি। বুঝিয়ে দিয়েছেন, মহারাষ্ট্রের রাজনীতির তিনিই পা-ও-য়া-র। আংশিক হলেও জাতীয় রাজনীতিরও। যাঁকে দুরারোগ্য ব্যাধিও ঘায়েল করে রাজনীতি থেকে দূরে সরাতে পারেনি। কিন্তু, এবার ভাইপো অজিত আর দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত ছগন ভুজবলের কাণ্ড-কারখানা কি তাঁর ওপর ভারতীয় রাজনীতিবিদদের এতটা আস্থা রাখতে দিচ্ছে?
সেটা যে দিচ্ছে না, সেটা কার্যত প্রমাণ করে দিয়ে ফোন করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যিনি বেশ কিছুদিন আগেই পাওয়ারকে সামনে রেখে বিরোধী জোটের কথা বলেছিলেন। ফোন করেছেন মহারাষ্ট্রে কংগ্রেসের জোটসঙ্গী কংগ্রেসের হাইকমান্ডের নেতা রাহুল গান্ধী। অভিজ্ঞতার ভারে ন্যুব্জ হয়ে যাওয়া মারাঠা নেতার সঙ্গী অবশ্য এখনও হার না-মানা আত্মবিশ্বাস। যার ভরসায় তিনি বলছেন, 'এমন বহু বিশ্বাসঘাতকতা বহু দেখেছেন। তাই অবাক হননি।' সেসবের ভরসায় হতাশার মধ্যেও 'ওয়াশিং মেশিন' বলে বিজেপিকে টিপ্পনি কাটছে বিরোধী কংগ্রেস।
আরও পড়ুন- ভাইপোর শিবির বদল, শরদের ফোঁসে তুঙ্গে চাচা-ভাতিজা কিসসা
কিন্তু, অজিত-ছগনদের দলবদল ২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে পাওয়ার অ্যান্ড কোং-কে যে যথেষ্ট দুর্বল করেছে তাতে সন্দেহ নেই। কারণ, এই নেতারা এতদিন এনসিপির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। উদ্ধব জমানায় মহারাষ্ট্র সরকারের মন্ত্রীও ছিলেন। বলা ভালো, এনসিপির প্রথমসারির মুখরাই গিয়ে ভিড়েছেন শিণ্ডে শিবিরে। এনসিপির হাতেগোনা পরিচিত নেতাদের মধ্যে অশীতিপর শরদচন্দ্রই সেখানে এনসিপির দুর্গরক্ষায় একা কুম্ভ।