মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ ও চাকরির শর্তাবলী নিয়ন্ত্রণের জন্য পেশ হওয়া বিল পাশ হয়ে গেল লোকসভায়। এর আগে এই বিল রাজ্যসভায় পাশ হয়। উল্লেখ্য, গত ১০ অগস্ট এই বিলটি সংসদে পেশ করা হয়েছিল। এরপর কিছু সংশোধনী করে ফেল তা পেশ করা এই শীতকালীন অধিবেশনে। প্রসঙ্গত, ১৯৯১ সালের আইন অনুযায়ী এতদিন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ সংক্রান্ত কোনও ধারা ছিল না। সেই আইন বদলাতে ওই বিল পেশ করা হয়। এই মাসের শুরুর দিকে, এটি রাজ্যসভায় পাশ হয়। বিতর্কিত এই বিলকে কেন্দ্র করে এমনকি বিরোধীরা ওয়াকআউট করে।
প্রসঙ্গত, নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে গত মার্চ মাসেই ঐতিহাসিক রায় দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। নির্দেশে বলা হয়েছিল, মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সহ অন্যান্য কমিশনার নিয়োগের দায়িত্বে থাকা কমিটিতে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলনেতার সঙ্গে থাকবেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি। তবে সেই কমিটি থেকে প্রধান বিচারপতির নাম 'কাটতে' অগস্টেই বিল এনেছিল সরকার। সেই বিলে প্রস্তাব দেওয়া হয়, দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের কমিটিতে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার বিরোধী দলনেতা এবং প্রধানমন্ত্রীর মনোনীত একজন মন্ত্রী। কমিটির বৈঠক ডাকবেন প্রধানমন্ত্রীই। সুপ্রিম কোর্টের মার্চের রায়কে নাকচ করতেই এই নয়া বিল আনা হয়েছিল। সেই বিলেই আরও কিছু সংশোধন করে তা সংসদে পেশ করা হয়।
সিইসি (প্রধান নির্বাচন কমিশনার) এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার বিল লোকসভায় পাস হয়েছে। যখন এই বিল সংসদে পাস হয়, তখন বিরোধী দলের দুই-তৃতীয়াংশ সংসদ সদস্য সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। এর আগে, রাজ্যসভা সিইসি এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার (নিযুক্তি, পরিষেবার শর্তাবলী এবং অফিসের মেয়াদ) বিল, 2023 অনুমোদন করেছিল। এখন তা সম্মতির জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে।
উল্লেখ্য, অনেক আপত্তির পর বিলে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়। বিরোধীরা এই বিলের সমালোচনা করে বলেছেন, এটি নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতার সঙ্গে আপস করবে। এই বছরের শুরুতে, সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছিল যে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা এবং ভারতের প্রধান বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত একটি প্যানেলের পরামর্শে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করা উচিত।
এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্য ছিল শীর্ষ নির্বাচনী সংস্থাকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থেকে রক্ষা করা। তবে সরকার আইন না আনা পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে বলে জানিয়েছে আদালত।
নতুন আইনে প্রধান বিচারপতির জায়গায় একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে প্যানেলে তালিকাভুক্ত করেছে সরকার। বিরোধীরা অভিযোগ করেছে যে এই বিলটি শীর্ষ নির্বাচনী আধিকারিকদের নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারকে আরও ক্ষমতা দেবে এবং এই বিল স্পষ্টতই নির্বাচন কমিশনের মত সংস্থার স্বায়ত্তশাসনের সাথে আপস করার সমান।
রাজ্যসভায় বিলের উপর আলোচনার সময়, কংগ্রেস সাংসদ রণদীপ সুরজেওয়ালা মোদী সরকার ভারতের গণতন্ত্রকে আক্রমণ করেছে। ভারতের গণতন্ত্র ও নির্বাচন ব্যবস্থার স্বায়ত্তশাসন, নির্ভীকতা ও নিরপেক্ষতাকে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কংগ্রেস প্রধান মল্লিকার্জুন খাড়গে এই বিল সম্পর্কে ঘোষণা করেছেন “বিরোধী দলের সাংসদদের বরখাস্ত করে গুরুত্বপূর্ণ আইন পাস করা গণতন্ত্র নয়”।
সংসদের শীতকালীন অধিবেশন চলাকালীন ফের উত্তাল লোকসভা এবং রাজ্যসভা। গত কয়েকদিন ধরে সংসদীয় আচরণ লঙ্ঘনের ঘটনায় সাসপেণ্ড করা হয়েছে হাউসের ১৪৩ জন বিরোধী সাংসদকে। সংসদে নিরাপত্তা লঙ্ঘন ইস্যুতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের দাবিতে অনড় বিরোধী সাংসদরা।
এদিকে সংসদের সিড়িতে দেশের উপরাষ্ট্রপতিকে ভেঙাচ্ছেন তৃণমূল সাংসদ কল্যান বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই অঙ্গভঙ্গি মোবাইলে ভিডিও করছেন রাহুল গান্ধী। মঙ্গলবার বারবেলায় এই ভিডিও ভাইরাল হতেই চইচই বাঁধে। এই ধরণের ব্যাঙ্গকে ‘লজ্জাজনক’ বলে রাজ্যসভায় তোপ দাগেন খোদ জগদীপ ধনখড়। চরমে ওঠে বিতর্ক। শেষপর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী মোদী ফোনে উপরাষ্ট্রপতির কাছে দুঃখপ্রকাশ করেন। উপরাষ্ট্রপতির পদের গরিমা রয়েছে। সেই পদে আসীন পদাধিকারীর আচরণ নিয়ে কী এ ধরণের ব্যাঙ্গ করা যায়? প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
এই ধরণের ব্যাঙ্গকে ‘লজ্জাজনক’ বলে উল্লেখ করেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। তিনি বলেন, “বিরোধীদের আচরণ অনেকটা ভাঁড়ের মতই। পাশাপাশি রাহুলকে নিশানা করে তিনি বলেন, রাহুল সাংসদ না হয়ে ক্যামেরাম্যান হলেই বরং ভাল হত” ।
বিরোধী সাংসদদের এদিন তুলোধোনা করে জেপি নাড্ডা বলেছেন “বিরোধী সাংসদরা যেভাবে সাংবিধানিক পদে থাকা উপরাষ্ট্রপতিকে অপমান করেছেন এবং সংসদে অশ্লীল রসিকতা করেছেন তার জন্য দেশ ক্ষমা করবে না। রাহুল গান্ধীকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, রাহুল গান্ধী আজ ক্যামেরাম্যান হয়ে উঠেছেন। বিরোধী সাংসদরা উপরাষ্ট্রপতিকে উপহাস ও অনুকরণ করছিলেন এবং এর বিরোধিতা না করে রাহুল গান্ধী তার ভিডিও তৈরি করছিলেন। যা লজ্জা জনক”।
বিজেপি সভাপতি বলেছেন যে কংগ্রেসের ১০০ বছরের পুরোনো ইতিহাস রয়েছে, সেই রাহুল গান্ধী ভাইস প্রেসিডেন্টকে নিয়ে মজা করার ভিডিও তৈরি করছেন। আমি রাহুল গান্ধীকে জিজ্ঞাসা করতে চাই যে নির্বাচনে তিনি অবিরাম ওবিসি এবং অনগ্রসর শ্রেণী নিয়ে কথা বলেন, কিন্তু যখন আমাদের উপরাষ্ট্রপতি, যিনি ওবিসি মুখ হিসাবে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন, তার সঙ্গে যে খারাপ আচরণ করা হচ্ছে তার প্রতিবাদ করার পরিবর্তে, তিনি এটিকে সমর্থন করলেন কীভাবে’?
রাহুল গান্ধীর উপর আক্রমণ অব্যাহত রেখে নাড্ডা বলেন, “এই ছবি দেখে মনে হচ্ছে রাহুল গান্ধী শুধুমাত্র ওবিসি শ্রেণীকে ভোটভ্যাঙ্ক হিসাবে ব্যবহার করছেন। রাহুল যে ধরণের জঘন্য কাজ করেছেন ভারতের অনগ্রসর শ্রেণী তার জন্য তাকে ক্ষমা করতে পারবে না”। নাড্ডা আরও বলেন, “কংগ্রেস নেতা একজন কৃষকের পুত্র, একজন ওবিসি প্রতিনিধি এবং উপরাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত একজন ব্যক্তিকে অপমান করছেন”।
'গণতন্ত্রের হত্যা': সুপ্রিয়া সুলে
১৪৩ জন বিরোধী সাংসদের সাসপেনশন প্রসঙ্গে এনসিপি সাংসদ সুপ্রিয়া সুলে বলেছেন, "এমন ঘটনা গণতন্ত্রের হত্যা। মনে হচ্ছে দেশে জরুরি অবস্থা চলছে।"
এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ার সাংসদদের সাসপেনশন এবং 'নকল' ইস্যুতে বিবৃতি দিয়েছেন
এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ার বলেছেন, 'আমরা সব সময় গণতান্ত্রিক কাঠামোকে সম্মান করি। সংসদে যা ঘটেছে তা দেশের ইতিহাসে আগে কখনো ঘটেনি। বিরোধীদের স্রেফ একটাই দাবি ছিল। নিরাপত্তা লঙ্ঘনের ঘটনায় জড়িতরা কীভাবে সংসদে প্রবেশ করল এবং কারা তাদের পাস দিয়েছে সে বিষয়ে সরকার পক্ষের বিবৃতি দেওয়া উচিত ছিল। এটা সংসদীয় অধিকার।
স্মৃতি ইরানি 'নকল' করা নিয়ে রাহুল গান্ধীকে নিন্দা করেছেন
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'নকলের' ঘটনা নিয়ে রাহুলকেই নিশানা করেছেন। তিনি বলেছেন, রাহুল গান্ধীর তাকে থামানোর পরিবর্তে তিনি সাংসদের ছবি তুলতে ব্যস্ত ছিলেন। এই ঘটনা আমাকে হতবাক করেছে।
লোকসভায় পেশ হল মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বিল
'প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার বিল, 2023' লোকসভায় বিবেচনা এবং পাস করার জন্য পেশ করা হয়েছে।
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন অভিষেক মনু সিংভি
কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ অভিষেক মনু সিংভি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় বলেন, "প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদে এসে সংসদ লঙ্ঘনের ঘটনার বিষয়ে বিবৃতি দেওয়া উচিত"। পাশাপাশি তিনি বিরোধী সাংসদদের কন্ঠরোধ করার জন্য মোদী সরকারকে নিশানা করেন।
আগামীকাল ইন্ডিয়া জোটের নেতারা প্রতিবাদ জানাবেন
আগামীকাল আমরা দিল্লির যন্তর মন্তরে প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন করবেন ইণ্ডিয়া ব্লকের সমস্ত নেতারা। এমনটাই জানিয়েছেন কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খাড়্গে।
সংসদের বাইরে যা বললেন খড়গে
সংসদের বাইরে সাংবাদিকদের যা বললেন খড়গে- গণতন্ত্র ও জনগণের পক্ষে কথা বলা আমাদের অধিকার। আমরা চেয়েছিলাম সরকার লোকসভার নিরাপত্তা লঙ্ঘনের ঘটনায় বিবৃতি দিক। কারণ এটা জাতীয় নিরাপত্তা লঙ্ঘনের ঘটনা। এটা দুর্ভাগ্যজনক যে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই ঘটনায় কথা বলেননি"। পাশাপাশি বিজেপির সদস্যরা হৈচৈ করে সংসদের কার্যক্রম ব্যাহত করে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।
মল্লিকার্জুন খড়গে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে কটাক্ষ করলেন
সংসদের বাইরে বক্তৃতা দেওয়ার সময় কংগ্রেস প্রধান মল্লিকার্জুন খাড়গে আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নিন্দা করেছেন এবং বলেছেন যে প্রধানমন্ত্রী "পার্লামেন্ট চালাতে চান না।"
সাংসদদের সাসপেনশন নিয়ে কথা বললেন মায়াবতী
বিএসপি প্রধান মায়াবতী সাংসদদের বরখাস্তের বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। মায়াবতী বলেছেন, "রেকর্ড সংখ্যায় বিরোধী সাংসদদের বরখাস্ত করা সরকার এবং বিরোধী উভয়ের জন্যই ভাল নয়। রাজ্যসভার চেয়ারম্যানকেও 'নকল' করাও অনুচিত।
সংসদের নিরাপত্তা লঙ্ঘন নিয়ে আলোচনার দাবি করেছেন শশী থারুর
কংগ্রেস নেতা শশী থারুর বলেছেন, "যতদূর বিরোধীরা উদ্বিগ্ন, আমরা এই অধিবেশনে আলোচনার বিষয়ে সিরিয়াস ছিলাম, আমরা এই কঠোর আইনগুলি যে তারা প্রবর্তন করছে তাতে আমরা কেন অসন্তুষ্ট ছিলাম তার কারণগুলি উপস্থাপন করতে চেয়েছিলাম।"
জেএমএম সাংসদ মহুয়া মাজি বলেছেন 'নকল প্রথম শুরু করেছিল বিজেপি'
জেএমএম সাংসদ মহুয়া মাজি বলেছেন, "প্রথমত, আমি মনে করি 'নকল' করার ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। এটা হওয়া উচিত ছিল না কারণ এটি একটি ভুল নজির স্থাপন করেছে। তবে এই নজিরটি বিজেপি শুরু করেছিল। কয়েকজন সিনিয়র নেতা কংগ্রেসের সিনিয়র নেতাদের নকল করেছিলেন"।