লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গতকাল কংগ্রেস এবং বিরোধী জোট 'ইণ্ডিয়াকে' আক্রমণ করার কয়েক ঘন্টা পরে, কংগ্রেস নির্বাচনী বক্তৃতার মঞ্চ হিসাবে সংসদকে ব্যবহার করার অভিযোগ তুলেছে মোদীর বিরুদ্ধে। সেই সঙ্গে দল আরও বলেছে, প্রধানমন্ত্রী "কংগ্রেস-ফোবিয়া"য় আক্রান্ত হয়েছেন।
কংগ্রেস প্রধান মল্লিকার্জুন খাড়গে মণিপুর নিয়ে সংসদে ভাষণের জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। খড়গে বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী যদি আগে আলোচনায় সম্মত হন, তার "হঠকারীতা এবং ঔদ্ধত্য" ঝেড়ে ফেলে, তাহলে সংসদের মূল্যবান সময় বাঁচানো যেত এবং গুরুত্বপূর্ণ বিলগুলি ভালভাবে আলোচনার পরে পাস করা সম্ভব হত'।।
তিনি বলেন, “আমরা মর্মাহত যে মণিপুর হিংসার মত ইস্যুতে, বিরোধী দলকে অনাস্থা প্রস্তাবের মতো সংসদীয় কৌশল ব্যবহার করতে হয়েছে। মোদী সংসদকে নির্বাচনী সমাবেশের বক্তৃতা মঞ্চে পরিণত করেছেন। ” লোকসভায় কংগ্রেস নেতা গৌরব গগৈ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর "কংগ্রেস-ফোবিয়া"য় আক্রান্ত।
গগৈই বলেছেন, তার পুরো বক্তৃতায়, প্রধানমন্ত্রী কংগ্রেসকে আক্রমণ করে গিয়েছেন। প্রথম ৯০ মিনিটে মণিপুরের কোনও উল্লেখ ছিল না। বিজেপি মণিপুরে "তার ব্যর্থতাগুলি আড়াল করছে" ।
তিনি আরও বলেন, 'মোদী যাই বলুন না কেন, আমরা নিশ্চিত যে আমাদের দলগুলি আমাদের সংবিধানের মূল্যবোধ সংরক্ষণ ও সুরক্ষা, আমাদের সভ্যতার মূল্যবোধ সংরক্ষণ এবং অখণ্ডতা, ভ্রাতৃত্ব, স্বাধীনতা ও সাম্য, অধিকার ও নীতি সংরক্ষণের জন্য একটি অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির জন্য ঐক্যবদ্ধ'। আমরা আত্মবিশ্বাসী ২৪-এর নির্বাচনে 'ইন্ডিয়া' জোট জিতবে'।
ওয়াকআউটের পরে, কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর বলেন, : “আমরা প্রধানমন্ত্রীকে মণিপুরে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে বলেছি। এক ঘণ্টা ৪৫ মিনিট পরও তিনি মণিপুর নিয়ে একটি শব্দ উল্লেখ করেননি। তিনি সম্পূর্ণরূপে রাজনৈতিক বক্তৃতা দিচ্ছিলেন, কংগ্রেস এবং বিরোধীদের ক্রমাগত অপমান করে যাচ্ছিলেন কিন্তু অনাস্থা প্রস্তাবে উত্থাপিত প্রশ্নের কোনও উত্তর উনি দেন নি"।
ডিএমকে সাংসদ টিআর বালু বলেছেন যে বিরোধীরা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে মণিপুর এবং দেশের অন্যান্য অংশে যেখানে হিংসার ঘটনা ঘটেছে সেই পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। "তিনি সংসদে রাজনৈতিক বক্তৃতা পেশ করেছেন। তিনি আরও বলেন, “অনাস্থা প্রস্তাবের উদ্দেশ্য ছিল… মণিপুর ও হরিয়ানা এবং অন্যান্য এলাকায় যেখানে হিংসা চলছে সেই বিষয়ে বিবৃতি। আমরা অনেকবার হস্তক্ষেপ করেছি কিন্তু তিনি সাড়া দেননি,”।
বৃহস্পতিবার তাঁর বক্তব্যে মণিপুরের হিংসার ঘটনায় কংগ্রেসকে দায়ী করেন প্রধানমন্ত্রী। দু’ঘণ্টার বেশি সময় তিনি বক্তৃতা দেন।বৃহস্পতিবার অনাস্থা বিতর্কে অংশ নিয়ে মোদী বলেন, ‘কংগ্রেসের নীতির জন্য আজ মণিপুরের এই দশা। কংগ্রেসের অতীতের নীতিতেই লুকিয়ে রয়েছে মণিপুর সমস্যার মূল কারণ।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা (কংগ্রেস) কখনও উত্তর-পূর্বের আবেগ বোঝার চেষ্টা করেননি। আমি (উত্তর-পূর্ব) ৫০ বার পরিদর্শন করেছি। এটি কেবল একটি তথ্য নয়, এটি উত্তর-পূর্বের প্রতি উত্সর্গ। মণিপুরে কার সরকার ছিল, যখন মহাত্মা গান্ধীর ছবি সরকারি অফিসে লাগানোর অনুমতি ছিল না? কার সরকার ছিল, যখন মণিপুরের স্কুলে জাতীয় সংগীত না-বাজানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল? তাদের (বিরোধীদের) সবকিছুই নির্বাচন ঘিরে। তারা রাজনীতির বাইরে চিন্তা করতে পারে না।’
একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দেন, শীঘ্রই মণিপুরে শান্তি ফিরে আসবে। তিনি বলেন, ‘মণিপুরে আবার শান্তি ফিরে আসবে। আমি মণিপুরের জনগণকে আশ্বস্ত করতে চাই যে রাজ্যটি শীঘ্রই উন্নয়নের পথে ফিরে আসবে। আমরা এর জন্য কোনও চেষ্টাই বাকি রাখব না। মহিলাদের ওপর অত্যাচার থেকে সমস্ত ধরনের অত্যাচারের ক্ষেত্রে দোষীদের কঠোর থেকে কঠোরতম সাজা দেওয়া হবে।’
এরপরই বক্তব্যে নাম না-করে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে নিশানা করেন প্রধানমন্ত্রী। রাহুল গান্ধী বুধবারই অভিযোগ করেছিলেন, মণিপুরে আসলে দেশকে অর্থাৎ ভারতকে হত্যা করেছে বিজেপি। কংগ্রেস সাংসদের সেই অভিযোগে বুধবারই তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। বৃহস্পতিবার সেই প্রসঙ্গ উঠে এল প্রধানমন্ত্রীর গলাতেও। তিনি বলেন, ‘এই সভায় মা ভারতী সম্পর্কে যা বলা হয়েছে, তা দেশের মানুষের অনুভূতিতে আঘাত করেছে। কিছু লোক মা ভারতীর মৃত্যু নিয়ে কথা বলেছেন। এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কী হতে পারে!’