CPM: আন্দোলন-বিমুখ এবং সাংগঠনিক দুর্বলতা বঙ্গ ভোটে সিপিএম-এর বিপর্যয়য়ের কারণ। একুশের ভোট বিপর্যয়ের কারণ বিশ্লেষণে এই পর্যবেক্ষণ উঠে এসেছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের। সেই পর্যবেক্ষণ সাংগঠনিক রিভিউ রিপোর্ট আকারে জমা পড়েছে রাজ্য কমিটিতে। রাজ্যের নানাস্তরে বঞ্চিত অংশকে কাছে টানতে জনসংযোগ কর্মসূচির দিকে ঝুঁকতে, রিপোর্টে সুপারিশ করা হয়েছে। বঙ্গ ভোটের ইতিহাসে এবার প্রথম সিপিএম বিধায়কশূন্য রাজ্য বিধানসভা। সেই অনুপস্থিতি নিয়ে কিছুটা উদ্বেগের সুর শোনা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর গলায়।
এই সেই ভোট বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধানে সাংগঠনিক পর্যালোচনা রিপোর্ট পেশ করল সিপিএম রাজ্য কমিটি। সেই রিপোর্টে উল্লেখ, ‘২০১১-এর পর থেকে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে চলছে দলের সংগঠন এবং কার্যকলাপ।‘ এদিকে, আগামি দিনে দলের একাধিক সংগঠনের সম্মেলন আয়োজিত হবে।সিপিএম রাজ্য কমিটির সম্মেলনও দোরগোড়ায়। এই আবহে সাংগঠনিক দুর্বলতাগুলো ঢেকে পথে নেমে আন্দোলন জোরদার করতে কোমর বাঁধছে সিপিএম। এমনটাই সূত্রের রাজ্য কমিটি সূত্রের খবর।
দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির নেতৃত্বে হওয়া সিপিএম রাজ্য কমিটির বৈঠকে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সেই বৈঠকে পার্টি কনফারেন্সের এজেন্ডা এবং সাংগঠনিক শক্তির মূল্যায়নের দিকে বেশি নজর দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সাংগঠনিক পর্যালোচনা রিপোর্টে নেতৃত্বের দূরদর্শিতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। দলের কর্মী-সমর্থকরা কোন ইস্যুতে পথে নামবেন? সেই ইস্যু নির্বাচনে ব্যর্থতা দেখিয়েছেন দলীয় নেতৃত্ব। এমন কড়া ভাষায় সেই রিপোর্টে সমালোচনা করা হয়েছে। তবে সেই ব্যর্থতা ঢাকতে অবিলম্বে জেলা নেতৃত্বকে অবিলম্বে অনগ্রসর এলাকা খুঁজে সেখানে বেশি সময় অতিবাহিত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
রাজ্য কমিটির সাংগঠনিক পর্যালোচনা রিপোর্টে উল্লেখ, ‘অভিজ্ঞতা বলছে আমরা গত ১০ বছর ক্ষমতায় না থেকেও শাসকের মতো আচরণ করছি। বিরোধী দলে হিসেবে আন্দোলন এবং সংগ্রাম করতে ভুলে গিয়েছি। যতটুকু আন্দোলন গড়ে তোলা হয়েছে, সেটা আমজনতার কাছে যান্ত্রিক মনে হয়েছে। কর্মী আবাসন, বস্তি, শ্রমিক, মধ্যবিত্ত, যতবেশি সম্ভব এই শ্রেণিদের কাছে পৌঁছে তাদের সমস্যা শুনতে হবে। কীভাবে সেই সমস্যার সমাধান চেয়ে আন্দোলন গড়ে তোলা যায়, সে নিয়ে ভাবতে হবে।‘
পাশাপাশি সমাজের পিছিয়ে থাকা দলিত, উপজাতি এবং অনগ্রসর শ্রেণিদের সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন গড়তে উদ্যোগ নিতে হবে। এমন সুপারিশ দেওয়া সেই রিপোর্টে। বঙ্গ ভোটের বিপর্যয় প্রেক্ষিতে রাজ্য কমিটির অনেক নেতা মনে করেন, ‘দলের একাধিক প্রবীণ নেতা এবং প্রথমসারির নেতৃত্ব তিন দশক ক্ষমতার স্বাদ নিয়ে এখন পথে নেমে লড়াইয়ের ইচ্ছা এবং শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন।‘ পাশাপাশি নেতৃত্ব বদলের দিকেও সওয়াল করা হয়েছে সেই রিপোর্টে। প্রবীণদের সরিয়ে যদি তরুণ প্রজন্ম দলের হাল ধরতে চায়, তাহলে অবিলম্বে তাঁদের এগিয়ে দেওয়া উচিত বঙ্গ সিপিএম-এর। এমন প্রস্তাব দেওয়া সেই রিপোর্টে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন