ভাঙড়ের দুটি পঞ্চায়েত সমিতি এবং একাধিক পঞ্চায়েত তৃণমূলের কোন গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে থাকবে তা নিয়ে চলছে ঠান্ডা লড়াই। এর পাশাপাশি, জেলার অন্য প্রান্তে বাসন্তীর পঞ্চায়েত সমিতি এবার দলের, না কী তৃণমূল যুব শাখার নিয়ন্ত্রণে থাকবে, তা নিয়ে জোর তৎপরতা শুরু হয়েছে উভয় শিবিরে। বোর্ড গঠনকে কেন্দ্র করে চড়ছে উত্তেজনার পারদ। বোর্ড গঠনে আমডাঙ্গার পুনরাবৃত্তি যাতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কোথাও না ঘটে সে ব্যাপারে তৎপর জেলা পুলিশও। এ বিষয়ে বারুইপুর পুলিশ জেলা সুপার অরিজিৎ সিনহা বলেন, "বোর্ড গঠনের সময় পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে।"
রাত পোহালেই দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বিভিন্ন পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন শুরু হবে। ভাঙড়, বাসন্তী, ক্যানিংয়ের পাশাপাশি জেলার অন্যান্য প্রান্তে পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির দখল কোন গোষ্ঠীর হাতে থাকবে তা নিয়ে তৎপরতা তুঙ্গে উভয় শিবিরে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রাক্কালে মনোনয়ন জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে বিরোধী শূন্য ভাঙড়, বাসন্তী, ক্যানিং সহ বিভিন্ন এলাকায় যে ভাবে গোষ্ঠী সংঘর্ষ, রক্তপাত, গুলি চালনার ঘটনা দেখা গিয়েছিল, বোর্ড গঠনের সময়ে পঞ্চায়েতের দখল নিয়ে তার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
সূত্রের খবর, বোর্ড গঠনের বিজ্ঞপ্তি জারি হতেই ভাঙড়ের তৃণমূলের একাধিক গোষ্ঠীর নেতৃত্ব পঞ্চায়েতের প্রধান ও উপ প্রধান এবং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও সহ সভাপতি পদে নিজেদের ঘনিষ্ঠদের বসাতে উঠেপড়ে লেগেছেন। এর মধ্যে ভাঙড় ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পদের চেয়েও সহ সভাপতি পদ নিয়ে লড়াই তুঙ্গে। সভাপতি পদ এবার সংরক্ষণের আওতায় তপশিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত। গত বছর এই সমিতির সভাপতি ছিলেন আরাবুল ইসলাম, ভাঙড়ের বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে অশান্তি ও পঞ্চায়েত ভোটের আগে যাঁর কার্যকলাপ নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছিল দল।
ভাঙড়ের প্রাক্তন বিধায়ক তথা বিদায়ী পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আরাবুলকে ঠেকাতে দলের অপর গোষ্ঠী কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে। খোদ দলের ব্লক সভাপতি অহিদুল ইসলামকে সহ সভাপতি নির্বাচিত করার জন্য নাম তুলে ধরা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। অন্য দিকে, ভাঙড় ১ নং পঞ্চায়েত সমিতির দখল কার দিকে থাকবে তা নিয়ে শুরু হয়েছে জোরদার ঠান্ডা লড়াই। দলের নেতা তথা প্রাক্তন জেলা পরিষদ সদস্য কাইজার আহমেদকে ঠেকাতে ক্যানিং পূর্বে বিধায়ক তথা জেলা যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি শওকত মোল্লা ভাঙড় ১ নং পঞ্চায়েত সমিতি নিজের নিয়ন্ত্রণে আনতে তাঁর অনুগামী তৃণমূল নেতা শাহজাহান মোল্লার নাম তুলে ধরেছেন।
আরও পড়ুন, মৃত্যু মিছিলের বিরাম নেই পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনেও, কিন্তু দায় কার!
পঞ্চায়েত সমিতির পাশাপাশি ভাঙড় ২ নং ব্লকের কয়েকটি পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনকে কেন্দ্র করেও তৃণমূলের একাধিক গোষ্ঠীর মধ্যে চলছে লড়াই। এর মধ্যে নিউ টাউন লাগোয়া ভাঙড়ের চারটি পঞ্চায়েত কোন শিবিরের হাতে থাকবে তা নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে। বিশেষ ভাবে ভগবানপুর, ব্যাওতা ১, ব্যাওতা ২, বামনঘাটা এবং পোলেরহাট ২ নং গ্রাম পঞ্চায়েত। এই পঞ্চায়েতগুলিতে আগামী ১৪ তারিখ থেকে বোর্ড গঠন শুরু হবে, এবং ভাঙড় ২ পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠন হবে ২৫ অক্টোবর। পরিস্থিতি যা, তাতে আদৌ পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠন কতটা স্বাভাবিকভাবে হবে তা নিয়ে সন্দিহান অনেকে।
এমনিতে গত কয়েক বছর ধরে ভাঙড় জুড়ে ক্ষমতা দখলকে কেন্দ্র করে শাসকদলের একাধিক গোষ্ঠীর মধ্যে লাগাতার সংঘর্ষ ও খুনোখুনি লেগে রয়েছে। তার উপর ভাঙড়ের বিদ্যুৎ প্রকল্পকে ঘিরে তৈরি হওয়া জমি কমিটি তৃণমূলের ঘাড়ের ওপর নিঃশ্বাস ফেলছে। স্বাভাবিকভাবেই এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠন নিয়ে বড় গোলমাল ও রক্তপাতের আশঙ্কা করছে তৃণমূল কংগ্রেসের একটি অংশ। প্রশাসনও যথেষ্ট চিন্তিত।
এদিকে বাসন্তীর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও সহ-সভাপতি পদে নিজেদের ঘনিষ্ঠকে বসাতে উঠে পড়ে লেগেছে উভয় গোষ্ঠী। বিশেষ করে সভাপতি পদ নিয়ে লড়াই বেশি। বিধায়ক জয়ন্ত নস্কর শিবিরকে ঠেকাতে যুব গোষ্ঠী থেকে সভাপতি পদের জন্য দু’জনের নাম উঠে এসেছে, মান্নান শেখ এবং জালাল মোল্লা। পাল্টা যুব শিবিরের পরিকল্পনা ভেস্তে দিতে কামাল হোসেন লস্করের নাম সামনে নিয়ে এসেছে জয়ন্ত শিবির। তবে দলের পুরাতনপন্থীরা চাইছেন, গোষ্ঠীবিবাদ সরিয়ে বিগত বোর্ডের সভাপতি প্রতিমা মণ্ডলকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হোক, কারণ তিনি গত পাঁচ বছর বিতর্ক ছাড়াই সকলকে নিয়ে সমিতি পরিচালনা করেছেন। অধিকাংশ সদস্যর সায় আছে তাতে।
গত কয়েক বছর ধরে বাসন্তী ব্লক জুড়ে ক্ষমতা দখলকে কেন্দ্র করে শাসকদলের এই দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে লাগাতার সংঘর্ষ, খুনোখুনি লেগে রয়েছে। কিন্তু বাসন্তী এখনও রাজনৈতিকভাবে অভিভাবকহীন। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ও পরে সেই অভিজ্ঞতা বাসন্তীর মানুষের হয়েছে।