রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে গেল। আগামী ১ মে রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট হচ্ছে না। ভোটের নতুন দিন ঘোষণা করতে হবে। পঞ্চায়েত মামলায় রায়ে জানাল কলকাত হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ। একইসঙ্গে রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট প্রক্রিয়ায় আপাতত স্থগিতাদেশ বহাল রাখল কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ।
অন্যদিকে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের মনোনয়নপত্র সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি বাতিলের নির্দেশিকা খারিজ করল হাইকোর্ট। আরও একদিন রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে বলে এদিন জানাল কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ। তবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার অতিরিক্ত দিন কবে ধার্য করা হবে, তা রাজ্য নির্বাচন কমিশনকেই স্থির করতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। যতদিন না মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার অতিরিক্ত দিন কমিশন ঘোষণা করছে, ততদিন পর্যন্ত রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটপ্রক্রিয়ায় স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে। শুক্রবার পঞ্চায়েত মামলায় এমনই নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। এদিকে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে পঞ্চায়েত ভোটের নতুন দিনক্ষণ ঘোষণা করতে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন, ঠুনকো প্রতিশ্রুতি! পঞ্চায়েত ভোট বয়কটের সিদ্ধান্ত ছিটমহলবাসীর
এদিন পঞ্চায়েত মামলায় কার্যত বিরোধীদের দাবিকেই মান্যতা দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়নপত্র দাখিলে শাসকদলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে বারবার সরব হয়েছিল বিরোধীরা। মনোয়নপত্র জমা দেওয়ার সময়সীমা বাড়ানোর আর্জি জানিয়ে এসেছিল বিরোধীরা। এদিকে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর, রাজ্য নির্বাচন কমিশন মনোনয়নপত্র পেশের সময়সীমার মেয়াদ বাড়ানোর বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পরও তা বাতিল করায় ক্ষোভ বেড়েছিল বিরোধীমহলে। এদিন হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ কমিশনের সেই বিজ্ঞপ্তি বাতিলের নির্দেশ খারিজ করে দিয়েছে। উল্টে, মনোনয়নপত্র পেশের জন্য আরও একদিন সময় ধার্য করতে কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন, পঞ্চায়েত ভোটঃ তৃণমূলের নয়া ফরমান, টোল বুথ, বালির খনি বা অন্যান্য সুবিধা নেওয়া যাবে না
এদিনের রায়কে ঐতিহাসিক বলে বর্ণনা করেছেন বিজেপি নেতা প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘গণতন্ত্র রক্ষার জন্য হাইকোর্ট সাহসী ভূমিকা নিয়েছে।’’ পঞ্চায়েত মামলার রায়ে খুশি সিপিএম নেতৃত্বও। রায় ঘোষণার পর সিপিএম নেতা রবীন দেব বলেন, ‘‘আমরা হাইকোর্টের রায়ে খুশি।’’ তিনি আরও বলেন যে, তৃণমূল যেভাবে মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল, আদালত সেই অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে, এটা সবথেকে ভাল। এদিনের রায়কে তৃণমূলের নৈতিক পরাজয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। বাংলার মানুষকে ভোটে অংশ নেওয়ার অধিকারকে এদিন হাইকোর্ট স্বীকৃতি দিল বলেও মন্তব্য করেন অধীর। তবে ভোটের দিন বদল হলেও, তৃণমূল সরকারে থাকলে যে সন্ত্রাস বন্ধ হবে না, সে ব্যাপারে আশঙ্কা প্রকাশ করেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে পঞ্চায়েত ভোটের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
সুষ্ঠু ভাবে পঞ্চায়েত ভোট হবে বলে এদিন পূর্বস্থলীর একটি সভায় আশাপ্রকাশ করেছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
আরও পড়ুন, পঞ্চায়েত ভোট: ২৬ শতাংশ আসনে একলা লড়ছে তৃণমূল, চাঞ্চল্যকর তথ্য কমিশনের
অন্যদিকে বিজেপি, কংগ্রেস , সিপিএমকে ‘জগাই-মাধাই-বিদাই’ বলে কটাক্ষ করেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘যতই জগাই, মাধাই, বিদাই নেত্য করুক না কেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের রথকে রুখতে পারবে না।’’ হাইকোর্টের রায়কে অবশ্য এদিন স্বাগত জানিয়েছেন পার্থ।
এদিকে তৃণমূল সাংসদ-আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন কার্যত বিরোধীদের তোপ দাগেন। তাঁর অভিযোগ, কংগ্রেস, সিপিএম, বিজেপি একযোগে পঞ্চায়েত ভোট বন্ধ করতে চেয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উন্নয়নের কাজ করেছেন। তাই মানুষ তাঁর পাশে থাকবেই।’’ বিরোধীদের একহাত নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেস কোনও কাজ করে থাকলে, মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে জিতে দেখাক।’’ কল্যাণকে কটাক্ষ করে পূর্বস্থলীর একটি সভায় বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘সবাই বলছে বিরোধীরা জিতেছে পঞ্চায়েত মামলায়, আর উনি বলছেন আমরা হেরে গিয়েছি।’’