শান্তুনু চৌধুরী
সাল ২০১১, ৩৪ বছরের বাম শাসনের যবনিকা পতন ঘটিয়ে বাংলার সিংহাসনে বসলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপরই নীল-সাদা ক্যানভাসে সেজে উঠেছিল রাজ্যের সরকারি ভবনগুলি, যে রং আজও বিদ্যমান। শুধু সরকারি ভবনই নয়, রাস্তার রেলিং থেকে উড়ালপুল- সর্বত্রই নীল-সাদার ছটা। ফিরে আসুন ২০১৮ সালে, সবে পঞ্চায়েত ভোট মিটেছে রাজ্যে। শাসকদলের থেকে যোজন দূরত্বে পিছনে থেকেও দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসে এই মুহূর্তে এ বাংলার অন্যতম প্রধান বিরোধী শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে বিজেপি। এবার রং দিয়ে যেন কার্যত দেখনদারির মেজাজে জেলা বিজেপি নেতৃত্ব। নীল-সাদার পাল্টা হিসেবে গেরুয়া রঙে রাঙানোর তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে পদ্মশিবিরে। বিজেপির জেতা গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতির অফিস গেরুয়া রঙে রাঙিয়ে তুলতে মরিয়া হয়ে উঠেছে জেলা বিজেপি নেতৃত্ব। জেলা নেতৃত্বের এই উদ্যোগকে সায় দিয়েছে রাজ্য বিজেপিও। আর গেরুয়া বাহিনীর এমন উদ্যোগকে ঘিরেই এবার শোরগোল পড়েছে রাজ্য রাজনীতিতে।
বিজেপির দখলে থাকা গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির অফিসের রঙ গৈরিকীকরণের প্রস্তাব ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের কাছে। এ প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসু ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, ‘‘আমাদের কোনও আপত্তি নেই, এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।’’ এর পাশাপাশি তিনি আরও বলেন যে, এজন্য রাজ্য সরকারের তরফে অনুদান না মিললে, আমাদের দলের প্রার্থীরাই তার ব্যবস্থা করবেন।
আরও পড়ুন, জঙ্গলমহলে খারাপ হাল কেন, বিশ্লেষণে বসেছে তৃণমূল
বিজেপির এমন প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়ে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছেন রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তাঁর মতে, ‘‘সরকারি ভবনের রং বদলানোর অধিকারী কেবলমাত্র রাজ্য সরকার। গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদ পঞ্চায়েত দফতরের আওতায় পড়ে।’’ এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন যে, সরকারি দফতরের রং বদলানোর কোনও প্রশ্নই ওঠে না। বিজেপির এই ভাবনাকে কটাক্ষ করে তৃণমূল নেতা অরূপ রায় বলেছেন, কয়েকটি আসনে জেতার পর বিজেপি বাড়াবাড়ি শুরু করেছে। "কেন্দ্রীয় সরকার যে পথ নিয়েছে এখানেও তাই অবলম্বন করতে চাইছে ওরা। এ রাজ্যে এসব কৌশল চলবে না।" স্পষ্ট জানিয়েছেন তিনি।"
আরও পড়ুন, শুক্রবার বিশ্বভারতীতে একসঙ্গে মোদি-হাসিনা, তিস্তা-চর্চার সম্ভাবনা
শুধু শাসকদলই নয়, অন্য বিরোধী দলও বিজেপির এই উদ্যোগের সমালোচনায় মুখর হয়েছে। সিপিএম নেতা রবীন দেব বলেছেন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ হারালে তবেই এসব ভাবা যায়। একইসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘তৃণমূল সরকারের পদাঙ্ক অনুসরণ করছে বিজেপি।’’ রবীন দেব আরও বলেন যে, গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি স্থানীয় সরকার, এগুলো দলীয় কার্যালয় নয়। এসব দফতরের রং এভাবে কেউ বদলাতে পারেন না।
দলীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ৫ হাজার ৭৪০ গ্রাম পঞ্চায়েত জিতেছে বিজেপি। অন্যদিকে ৭৬২টি পঞ্চায়েত সমিতি ও ২২টি জেলা পরিষদ দখল করেছে পদ্মবাহিনী।
অনুলিখন: সৌরদীপ সামন্ত