আদানি ইস্যুতে উত্তাল সংসদের বাজেট অধিবেশন। এর মাঝেই কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে রাজ্যসভায় বলেন, অনেক সাংসদ-মন্ত্রী আছেন যারা কেবল ধর্মের রাজনীতি করেন। তফসিলি জাতির মানুষজন মন্দিরে গেলে তাদের মারধর করা হয়। অথচ তারা হিন্দু, সেই নিয়ে সেই সকল সাংসদ মন্ত্রীরা কোন বিবৃতি দেন না, কিন্তু ভোটপ্রচারে সেই আদিবাসি বা দলিত শ্রেণীর মানুষের বাড়ি গিয়েই তাদের হাতে খাবার খেয়ে ফটোসেশনে মেতে ওঠেন, ভোট রাজনীতি করেন।
পাশাপাশি আদনি ইস্যু নিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদীর ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সম্পদ আড়াই বছরে ১৩ গুণ বেড়েছে । ২০১৪ সালে আদানির মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ৫০ হাজার কোটি টাকা ছিল, ২০১৯ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ কোটি টাকায়। দুই বছরে কী জাদু হল যে তার সম্পদ বেড়ে দাঁড়াল ১২ লাখ কোটি টাকা। এটাই কী বন্ধুত্বের ফল? পাশাপাশি আদানি বিতর্কের মধ্যে মোদী সরকারকে বড় আক্রমণ করল আরজেডি সাংসদ মনোজ ঝাঁ। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক রিপোর্ট (হিন্ডেনবার্গ) থেকে মোদী-আদানি আঁতাত একেবারে স্পষ্ট।
মঙ্গলবার আদানি ইস্যুতে সরগরম হয় লোকসভা, প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁর সরকারকে আদানি ইস্যুতে কাঠগড়ায় তুলেছেন। আদানি গ্রুপের দ্রুত সম্প্রসারণ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে প্রশ্ন করেন রাহুল গান্ধী। বুধবার এ নিয়ে সংসদে ফের তোলপাড় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বুধবার সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের জবাব দেবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কংগ্রেস বলেছে যে বেশিরভাগ বিরোধী দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তারা সংসদের অধিবেশনে অংশ নেবে এবং আদানি মামলায় জেপিসির দাবিতে তাদের কঠোর অবস্থান বজায় রাখবে। একই সময়ে, বিআরএস এবং আম আদমি পার্টি জানিয়েছে যে আদানি ছাড়া কোন বিতর্ক ছাড়া সংসদে কোনও আলোচনা হবে না।
রাহুল গান্ধীকে অভিযুক্ত করেছেন বিজেপি সাংসদ
বিশেষাধিকার বিজ্ঞপ্তি লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে, অভিযোগ করা হয়েছে যে প্রধানমন্ত্রী মোদীর বিরুদ্ধে রাহুল গান্ধীর বক্তব্যগুলি নিয়মের পরিপন্থী কারণ তিনি স্পিকার এবং প্রধানমন্ত্রীকে এর জন্য নোটিশ দেননি। নিশিকান্ত দুবে আরও বলেছেন, 'এই বিবৃতিগুলি বিভ্রান্তিকর, অসংসদীয়, অশালীন এবং সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। অভিযোগ প্রমাণের জন্য রাহুল কোন নথি বা লিখিত প্রমাণ দেননি। এটি সরাসরি সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে বিশেষাধিকার লঙ্ঘনের মামলা কারণ হাউসকে অপমান করা হয়েছে। এর সঙ্গে তিনি রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্পিকারকে অনুরোধ জানিয়েছেন।
রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে বিশেষাধিকার লঙ্ঘনের নোটিশ
রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে বিশেষাধিকার লঙ্ঘনের নোটিশ দিয়েছেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে লেখা চিঠিতে তিনি রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে বিধানসভার ২২৩ লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছেন তিনি। এতে বলা হয়েছে যে ৭ ফেব্রুয়ারি হাউসে বিতর্ক চলাকালীন রাহুল গান্ধী প্রধানমন্ত্রী মোদীর বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন ও মানহানিকর অভিযোগ তোলেন।
কেন্দ্রকে নিশানা রাহুল গান্ধীর
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী মঙ্গলবার আদানি ইস্যুতে কেন্দ্রেকে একহাত নেন। তিনি অভিযোগ করেন যে কেন্দ্রীয় সরকার শুধুমাত্র একটি কর্পোরেট সংস্থা আদানি গোষ্ঠীর পক্ষপাতীত্ব করছে। আদানি বিতর্ক নিয়ে কেন্দ্রকে ঘিরে লাগাতার আক্রমণের চেষ্টা করছে বিরোধী দলগুলি। বিরোধী দলগুলি অভিযোগ করেছে যে আদানি গ্রুপের শেয়ারের সাম্প্রতিক পতন একটি 'কেলেঙ্কারি' যা সাধারণ মানুষের স্বার্থে আঘাত হেনেছে। কারণ পাবলিক সেক্টর লাইফ ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া (এলআইসি) এবং স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (এসবিআই)তে সাধারণ মানুষ তাদের কষ্টার্জিত অর্থ বিনিয়োগ করেছে৷
একই সময়ে, আদানি গ্রুপ বলেছে সমস্ত আইন তারা মেনেই চলেছে। সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক অবস্থান নিয়ে কংগ্রেস আদানি ইস্যুতে সংসদে আলোচনার দাবি জানিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে বা যৌথ সংসদীয় কমিটির মাধ্যমে 'হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ'-এর রিপোর্টে যে অভিযোগ উঠেছে তা তদন্তের দাবিও জানিয়েছে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে ।
এসবিআই অফিসের সামনে তৃণমূল সাংসদের বিক্ষোভ
আদানি-হিন্ডেনবার্গ ইস্যু নিয়ে দিল্লিতে এসবিআই অফিসের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শণ টিএমসির। এসবিআই অফিসের সামনে তৃণমূল সাংসদরা বিক্ষোভে সামিল হন। সাংসদ মহুয়া মৈত্র বিজেপি বিরুদ্ধে আদানিকে আড়াল করার অভিযোগ এনেছে।মহুয়া মৈত্র আরও বলেন, “বিজেপি বলছে মহিলা হয়ে আমি কীভাবে এই ধরনের শব্দ ব্যবহার করতে পারি! এর জন্য কী আমার পুরুষ হওয়ার দরকার আছে? আসলে এটাই পিতৃতন্ত্রের পরিচয়। তিনি আরও বলেন, প্রথমবারের মতো আমরা ভারতের জনগণকে আদানি সম্পর্কিত বিষয় সম্পর্কে জানাতে সফল হয়েছি। তিন বছর ধরে তা আড়াল করার চেষ্টা করছে বিজেপি। আমি খুশি যে সব বিরোধী দল একত্রিত হয়েছে"।
অন্যদিকে আদানি বিতর্কে জেপিসি তদন্তের দাবিতে বুধবার সকালে সংসদ কমপ্লেক্সে গান্ধী মূর্তির সামনে বিক্ষোভ করেন বিরোধী সাংসদরা। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে আম আদমি পার্টি, বিআরএস এবং শিবসেনার উদ্ধব ঠাকরে শিবিরের সাংসদরা এই বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেন।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশী লোকসভায় রাহুল গান্ধীর নাম না নিয়েই বলেন, 'কংগ্রেসের এক নেতা গতকাল যে অভিযোগ তুলেছেন তা ভিত্তিহীন। তার বক্তব্য বাতিল করা উচিত এবং তার বিরুদ্ধে একটি বিশেষাধিকার প্রস্তাব উত্থাপন করা উচিত এবং তাকে নোটিশ দেওয়া উচিত'।