অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে/ তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে। তৃণমূলে যখন কাটমানি নিয়ে ধুন্ধুমার চরমে, ঠিক তখনই রবীন্দ্রনাথের 'তোমার ন্যায়ের দন্ড' কবিতার এই বহু চেনা শেষ দুটি পংক্তিই যেন অনুরণিত হল পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গলায়। বৃহস্পতিবার কাটমানি নিয়ে বিধানসভায় মুখ খুললেন তৃণমূল মহাসচিব তথা রাজ্যের শিক্ষা ও পরিষদীয়মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কাটমানি যাঁরা নিয়েছেন এবং দিয়েছেন, উভয়েই আইনের চোখে দোষী বলে এদিন মন্তব্য করেছেন পার্থ। যাঁরা কাটমানি দিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা এ ব্যাপারে কোনও স্পষ্ট বার্তা ছিল না। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের এদিনের বক্তব্যে যাঁরা কাটমানি দিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে? উঠছে প্রশ্ন। অন্যদিকে, নাম না করে বিজেপির উদ্দেশে পার্থ বলেন, কাটমানি নিয়ে যাঁরা হামলা চালাচ্ছেন, তাঁরাও আইনের চোখে দোষী, কেউ ছাড় পাবেন না। কাটমানি প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য ‘অপব্যাখ্যা’ করা হয়েছে বলেও এদিন সরব হয়েছেন তৃণমূল মহাসচিব।
আরও পড়ুন: কাটমানি নিয়ে বিজেপি আমার বক্তব্য বিকৃত করেছে: মমতা
ঠিক কী বলেছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়?
সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার বিধানসভায় কাটমানি প্রসঙ্গে পার্থ বলেন, ‘‘কাটমানির টাকা যাঁরা নিয়েছেন এবং দিয়েছেন, তাঁরা দু’জনই দোষী। আইনের চোখে দু’জনের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে’’। এরপরই নাম না করে কার্যত বিজেপিকে নিশানা করে পার্থের বার্তা, ‘‘যাঁরা হামলা চালাচ্ছেন, তাঁরাও কিন্তু আইনের চোখে দোষী। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে মুখ্যমন্ত্রী কমপ্লেন বক্স চালু করেছেন, সেখানে জানাবেন। প্রশাসন সজাগ রয়েছে’’। কাটমানি নিয়ে তৃণমূল সুপ্রিমোর বক্তব্য অপব্যাখ্যা করা হয়েছে বলেও এদিন দাবি করেন পার্থ। তৃণমূল মহাসচিব বলেন, মুখ্যমন্ত্রী আসলে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব হতে চেয়েছিলেন, তাই এ বার্তা দিয়েছিলেন। কিন্তু তা অপব্যাখ্যা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘কালীঘাটে ১৩টি ফ্ল্যাট, পুরী-গোয়াতে হোটেল, তৃণমূল সুপ্রিমোকে উত্তর দিতে হবে’
ক’দিন আগে দলের বৈঠকে কাটমানি ইস্যুতে তাঁর বক্তব্য বিকৃত করেছে বিজেপি, এমন অভিযোগই করেন তৃণমূল সুপ্রিমো। শুক্রবার দলের বৈঠকে কর্মীদের উদ্দেশে মমতা বলেন, ‘‘কাটমানির কথা এভাবে বলতে চাইনি। বিজেপি বিকৃত করেছে। সরকারি প্রকল্পে উপভোক্তাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। আমার কথার অপব্যাখ্যা করা হয়েছে’’।
প্রসঙ্গত, তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের কাটমানির টাকা ফেরতের নির্দেশ দিয়েছিলেন স্বয়ং তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলনেত্রীর এহেন নির্দেশের পরই বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে কাটমানির টাকা ফেরতের দাবিতে ‘নজিরবিহীন’ ভাবে বিক্ষোভ প্রদর্শন চলে। বহু তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ ইতিমধ্যেই সামনে এসেছে। কাটমানি ইস্যুকে হাতিয়ার করে আসরে নেমেছে বিজেপি। কাটমানি উত্তাপের আঁচ ছড়িয়েছে সংসদেও। এমন আবহেই এদিন তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা দিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও।