দেশের ১৭টি বিরোধী দলের বড় ঘোষণা, ২৪-এর লোকসভা ভোটে বিজেপির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের ডাক। শিমলায় পরবর্তী বৈঠক চূড়ান্ত রণকৌশল নির্ধারণ। দেশের প্রধান ১৭টি বিরোধী দল ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিহারের রাজধানী পাটনায় অনুষ্ঠিত বিরোধীদের এই মেগা বৈঠকে ‘বিরোধী ঐক্যের’ নতুন একটি ‘ নীলনকশা’ তৈরির বিষয়েও ছিল গতকালের এই বৈঠক। মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে ১৭টি দল তাদের পারস্পরিক বিভেদ ভুলে বিজেপির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের ডাক দিয়েছে। শুক্রবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে অধিকাংশ দলের শীর্ষ নেতৃত্বের পাশাপাশি অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এবং উপ-মুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব আয়োজিত বৈঠকে প্রায় ৩০ জন নেতা অংশ নেন।
১৭টি দল ২০২৪ সালের নির্বাচনে একসঙ্গে লড়বে: নীতীশ কুমার
প্রায় ৪ ঘণ্টা ধরে চলে এই মেগা বৈঠক, এরপর যৌথ সংবাদ সম্মেলনেও বক্তব্য রাখেন প্রায় সব দলের নেতারাই। এদিনের বৈঠক শেষে নীতীশ কুমার বলেন, আজকের এই বৈঠক ইতিবাচক হয়েছে। ১৭ টি ২৪-এর নির্বাচনে এক সঙ্গে পদ্মশিবিরের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ডাক দিয়েছে। শিগগিরই আরেকটি বৈঠক হবে, যাতে আসন্ন নির্বাচনের বিষয়ে আরও কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সেই বৈঠকের আয়োজন করবেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে।এর পর খড়গে জানান, ‘আগামী জুলাইয়ে হিমাচল প্রদেশের রাজধানী শিমলায় অনুষ্ঠিত হবে পরবর্তী বৈঠক”।
বিরোধী ঐক্য প্রক্রিয়া এগিয়ে যাবে: রাহুল গান্ধী
প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী বৈঠক শেষে বলেন, “আজ ভারতের গণতন্ত্র বিপন্ন। বিজেপি জনগণের কণ্ঠস্বরকে রোধ করার চেষ্টায় মরিয়া। এটা এখন শুধু ভোটের লড়াই নয় এটা আদর্শের লড়াই! আমাদের মধ্যে মতভেদ থাকতে পারে, কিন্তু আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ময়দানে নামতে প্রস্তুত”। উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব বলেছেন য, ‘পাটনা একটি নতুন রাজনৈতিক নবজাগরণের সাক্ষী হয়ে উঠেছে। দেশকে বাঁচাতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে’।
বিহার থেকে পরিবর্তন শুরু হয়েছে: শরদ পাওয়ার
এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ার, যিনি দেশের অন্যতম প্রবীণ রাজনীতিবিদ, বলেছেন যে “ দেশের ইতিহাসে অনেক আন্দোলন বিহার থেকে শুরু হয়েছিল, এবং যা ভারতীয় রাজনীতিতে পরিবর্তনের সাক্ষী থেকেছে। আজ আবার সেই একই পথ দেখাচ্ছে বিহার। আজকের বৈঠকে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের বিষয়ে সব দলের নেতাদের একটা মতামত সামনে এসেছে সিমলায় পরবর্তী বৈঠকে আসন্ন নির্বাচনের চূড়ান্ত রণকৌশল নির্ধারণ করা হবে। আমরা একসঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে নতুন পথের সূচনা করতে চলেছি এবং আমি নিশ্চিত যে দেশের মানুষ তাতে সমর্থন দেবে”।
আমরা এক, একসঙ্গে লড়ব: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “আমরা এক, আমরা একসঙ্গে লড়ব। বিহার গণ-আন্দোলনের ভূমি এবং এই রাজ্য থেকে আবারও ইতিহাস রচনা শুরু হয়েছে। তিনি বলেছিলেন যে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে 'স্বৈরাচারী' সরকারের পতন নিশ্চিত করতে আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের ডাক দিয়েছি”।
জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ বলেছেন, “আমরা এই দেশকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে এবং সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতে আজকের এই বৈঠক”। বিরোধী দলগুলির বৈঠকের পরে, পিডিপি প্রধান মেহবুবা মুফতি বলেছেন, "আমাদের প্রচেষ্টা আমরা গান্ধীর দেশকে 'গডসের দেশ' হতে দেব না।" তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন বলেছেন, “বিহার থেকে ঐক্যবদ্ধ বিরোধী দল ঘোষণা করা আশ্চর্যের কিছু নয়। এটি সামাজিক ন্যায়বিচারের দেশ, যেখান থেকে ফ্যাসিবাদী, স্বৈরাচারী শাসনের অবসান এবং একটি ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক ভারতের পুনর্জন্মের জন্য একটি ঐক্যবদ্ধ বিরোধীদের যুদ্ধের আর্তনাদ উঠে আসছে”।
অমিত শাহের কথা সত্যি হবে নাকি বিরোধীদের আশা?
যে সকল রাজনৈতিক দলগুলির নেতারা পাটনার সভায় যোগ দিয়েছিলেন তাদের মোট সাংসদের সংখ্যা বর্তমানে ২০০-এর কম। যেখানে বিজেপি ৫৪৩টি আসনে সাংসদ সংখ্যা ৩০০-এর বেশি। বিরোধী নেতারা আশা করছেন, তারা একসঙ্গে নির্বাচনে লড়লে আগামী লোকসভা নির্বাচনে এই ছবি পুরোপুরি বদলে যাবে। সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনের সময় হিমাচল প্রদেশ এবং কর্ণাটকে কংগ্রেসের জয় এবং রাহুল গান্ধীর "ভারত জোড়ো যাত্রা"-তে উত্সাহী প্রতিক্রিয়াও কংগ্রেস সহ অনেক বিরোধী দলে নতুন করে শক্তি দেখাতে শুরু করেছে। তবে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ শুক্রবার নিজেই জম্মুতে একটি সমাবেশে দাবি করেছেন যে বিরোধী দলগুলির ঐক্য সম্ভব নয় এবং পাটনার সভাটি কেবল একটি ‘ফটো সেশন’। তিনি আরও বলেন, বিরোধীরা একত্রিত হলেও ২০২৪ সালে আবার মোদী সরকার গঠন প্রায় নিশ্চিত। অমিত শাহের দাবি সঠিক নাকি বিরোধীদের প্রত্যাশা তা আগামী দিনেই জানা যাবে।