দিল্লি অর্ডিন্যান্সের বিরুদ্ধে সমস্বরে প্রতিবাদ চাই, কেজরিওয়াল পাশে চান মমতা, শরদ, উদ্ধবকেও। ইতিমধ্যেই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী এবং আপের জাতীয় আহ্বায়ক অরবিন্দ কেজরিওয়াল বৃহস্পতিবার (২৫ মে) মুম্বইতে এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ারের সঙ্গে দেখা করেন। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালের সঙ্গে এদিনের বৈঠকে, পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান, এএপি এমপি রাঘব চাড্ডা, দিল্লির মন্ত্রী অতীশি এবং অন্যান্য নেতারাও শরদ পাওয়ারের সঙ্গে দেখা করেন।
নিজের রাজ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের জন্য আপ সুপ্রিমো এখন কেন্দ্রীয় অধ্যাদেশ বা অর্ডিন্যান্সের বিরুদ্ধে কণ্ঠস্বর জোগাড় করতে চান। দিল্লি সরকারের অধীনে কর্মরত আমলারা। তাঁদের নিয়োগ বা বদলির ওপর কার নিয়ন্ত্রণ থাকবে, তা-ই নিয়েও কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আপ সরকারের বিবাদ চরমে। সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছিল, তা পাস কাটিয়ে জারি করা নতুন অধ্যাদেশ। কেন্দ্রীয় অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, ক্ষমতা থাকবে লেফটেন্যান্ট গভর্নরের হাতে। যিনি আবার কেন্দ্রের প্রতিনিধি।
কেন্দ্রের এই ধরনের মর্জিমাফিক নির্বাচিত দিল্লি সরকারকে বিপাকে ফেলার বিরুদ্ধে দেশজোড়া প্রতিবাদ চান কেজরিওয়াল। আর, সেই কারণেই তিনি বেছে বিরোধী নেতাদের কাছে দরবার করতে যাচ্ছেন। বিরোধী শিবিরে হলেও কংগ্রেস আপেরও বিরোধী। সেই কারণে সাহায্য চাইতে কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে দেখা করার কোনও চেষ্টাই করেননি কেজরিওয়াল। বরং, যে নেতা ও নেত্রীরা বিরোধী শিবিরে থাকলেও বিজেপির সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখেছেন, সেই প্রবীণ শরদ পাওয়ার এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে যাওয়াই তিনি শ্রেয় বলে মনে করেছেন। ইতিমধ্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে কেন্দ্রীয় অধ্যাদেশ বা অর্ডিন্যান্সের বিরুদ্ধে আপ তথা কেজরিওয়ালের পাশে থাকার বার্তা মিলেছে। পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে।
অর্ডিন্যান্স অনুসারে, দিল্লিতে আধিকারিকদের বদলি-পোস্টিংয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন লেফটেন্যান্ট গভর্নর। এতে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের কোন অধিকার থাকবে না। এরপরই বিরোধী দলের নেতাদের কাছে কেজরিওয়াল আবেদন করেন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সকল বিরোধী দলের আপের পাশে থাকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ইতিবাচক আলোচনার পর আজ বুধবার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে দেখা করেন।
বৈঠক শেষে এক সাংবাদিক সম্মেলনে শিবসেনা সভাপতি উদ্ধব ঠাকরে বলেছেন যে তাঁর দল দিল্লিতে কেন্দ্রের অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আপের পাশে থাকবে। তিনি বলেন, “দেশ ও গণতন্ত্র বাঁচাতে আমরা সবাই আজ একত্রিত হয়েছি। আমি মনে করি আমাদের ‘বিরোধী দল’ বলা উচিত নয় আসলে তাদের (বিজেপি) ‘বিরোধী দল’ বলা উচিত কারণ তারা গণতন্ত্র এবং সংবিধানের বিরোধী,” ।
উদ্ধব ঠাকরের সমর্থন আদায় করে কেজরিওয়ালের মনোবল এখন তুঙ্গে। গতকাল কেন্দ্রের অধ্যাদেশ বা অর্ডিন্যান্সের বিরুদ্ধে আপের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে এনসিপিও।
গতকালের বৈঠক শেষে কেজরিওয়াল বলেন, 'এনসিপি আমাদের সমর্থন জানিয়েছে। কেন্দ্রের অধ্যাদেশ রাজ্যসভায় যাতে পাস না হয় তার জন্য আমাদের সঙ্গে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে এনসিপি সুপ্রিমো। শরদ পাওয়ায়ের সঙ্গে আজ এক ইতিবাচক বৈঠক হয়েছে। তিনি দেশের এক সিনিয়র ও বড় মাপের নেতা। তিনি নিজে আমাকে সমর্থন করছেন, দেশের অন্যান্য দলের থেকেও আমাদের সমর্থন প্রয়োজন'। তার আগে অবশ্য রবিবারই আপ সুপ্রিমো নয়াদিল্লিতে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জেডিইউ নেতা নীতীশ কুমার এবং আরজেডি নেতা তথা বিহার সরকারে নীতীশের ডেপুটি তেজস্বী যাদবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।