পেগাসাস ইস্যুতে এবার কেন্দ্রের বিরুদ্ধে এককাট্টা বিরোধীরা। কংগ্রেসের পাশাপাশি তৃণমূল, সিপিএম, আরজেডি, এনসিপি এবং শিবসেনাও সরকারকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ শানিয়ে সোচ্চার হয়েছে। 'রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক, বিচারক এবং সুশীল সমাজের কর্মীদের টার্গেট করার ক্ষেত্রে নিজেদের ভূমিকা স্বীকার করে নিক কেন্দ্র', একযোগে এই দাবি তুলেছে বিরোধীরা।
Advertisment
'পেগাসাস নিয়ে তথ্য গোপন করছে কেন্দ্র, সুপ্রিম কোর্টের এব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা উচিত', এমনও দাবি বিজেপি বিরোধী একাধিক দলের। সংসদের বাজেট অধিবেশনের আগে এবার পেগাসাস ইস্যুতে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ নিয়ে নতুন করে সরব হওয়ার তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে বিরোধীরা।
পেগাসাস নিয়ে দিন কয়েক আগেই 'বোমা' ফাটিয়েছে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস। ২০১৭ সালেই ইজরায়েলি স্পাইওয়্যার পেগাসাস কিনেছিল ভারত, চাঞ্চল্যকর এই দাবি মার্কিন সংবাদপত্রের। মার্কিন এই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে ইজরায়েলের সঙ্গে ২ বিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি সই করেছিল ভারত। সেই চুক্তির অন্যতম ছিল পেগাসাস। যদিও এখনও পর্যন্ত পেগাসাস কেনা নিয়ে ভারত বা ইজরায়েল কোনও দেশের সরকারই মুখ খোলেনি।
এদিকে, পেগাসাস নিয়ে নতুন করে এই তথ্য সামনে আসায় কেন্দ্রকে দুষে ফের একবার ময়দানে নেমেছে বিরোধীরা। রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে জানান, এর আগেও সংসদের দুই কক্ষে পেগাসাস নিয়ে সোচ্চার হয়েছে কংগ্রেস। এবার নতুন করে ফের একবার পেগাসাস নিয়ে সংসদে সোচ্চার হবে দল। 'দেশদ্রোহীর ভূমিকায় মোদী সরকার', পেগাসাস ইস্যুতে নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনকে ঢাল করে গতকালই মন্তব্য করেছেন রাহুল গান্ধী।
Advertisment
NYT-এর রিপোর্ট নিয়ে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে তৃণমূল নেতা সুখেন্দু শেখর রায় বলেন, ''আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি…(এটি) ইজরায়েল থেকে ভারত সরকারের স্পাইওয়্যার কেনার একটি বাস্তব উপস্থাপনা। আমাদের দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের ফোন ও তাঁর সেক্রেটারির ফোন ট্যাপ করা হয়েছিল।''
অন্যদিকে, সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিও পেগাসাস ইস্যুতে মোদী-শাহ নেতৃত্বাধীন সরকারের কড়া সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ''মোদী সরকারকে হলফনামা দিতে হবে। কেন তাঁরা সাইবার অস্ত্র কিনেছিলেন? কে এটির ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন? কীভাবে লক্ষ্যগুলি নির্বাচন করা হয়েছিল? সবিস্তারে তার ব্যাখা দিতে হবে কেন্দ্রকে।"
অন্যদিকে পেগাসাস ইস্যুতে একদা বন্ধু দল বিজেপিকে তুলোধনা করে সোচ্চার শিবসেনা। দলের সাংসদ সঞ্জয় রাউত বলেন, ''গত বছর পেগাসাস ইস্যুটি প্রকাশ্যে আসার সময় আমাদের বক্তব্যই রাহুল গান্ধী-সহ অন্যরা সংসদের ভিতরে এবং বাইরে বলেছেন। আমরা বারবার এটির বিষয়ে তথ্য এবং প্রমাণ আনার চেষ্টা করেছি। আমরা সবাই নজরদারিতে রয়েছি। শুধু আমরা নই, বিজেপির অনেক সিনিয়র নেতাও নজরদারিতে রয়েছেন। এমনকী উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীও নজরদারিতে রয়েছেন। আমাদের পরিবারের সদস্যদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কে শুনবে আমাদের কথা? এটাই কি গণতন্ত্র? এটি স্বৈরতন্ত্রের আরও একটি রূপ।''
NCP নেতা মাজিদ মেমন বলেন, ''ভারত সরকারের এই ধরণের গোপন চুক্তি অবশ্যই সন্দেহজনক প্রশ্নগুলিকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। ২০১৭ সালে ইজরায়েলের কাছ থেকে পেগাসাস কেনার এই গোপন চুক্তিটি কি জাতীয় স্বার্থে ছিল? নাকি এটি অন্য কোনও পরিকল্পনার স্বার্থে নেওয়া হয়েছিল? সরকারকে এগুলি ব্যাখ্যা করতে হবে। কেন সংসদকেও এই জাতীয় চুক্তি সম্পর্কে অন্ধকারে রাখা হয়েছিল? যদি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জাতীয় সুরক্ষার ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী তথ্য না দেয় তবে এই জাতীয় চুক্তিগুলি সন্দেহজনক বলে মনে হবে।''
ফোনে আড়ি পাতা কাণ্ডে মার্কিন সংবাদপত্রের প্রতিবেদনকে ঢাল করে বিরোধীরা সোচ্চার হলেও এব্যাপারে মুখে কুলুপ কেন্দ্রের। এখনও পর্যন্ত এব্যাপারে কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি কেন্দ্রের কোনও মন্ত্রীই। বিজেপির কোনও নেতাও এব্যাপারে মুখ খোলেননি। তবে সোমবার থেকে শুরু হওয়ায় সংসদ অধিবেশনে পেগাসাস নিয়ে যে ফের এক দফায় ঝড় উঠতে চলেছে তা বলাই বাহুল্য।