Advertisment

তৃণমূলের মুসলিম ভোট এখন আমার দিকে, বললেন আব্বাস সিদ্দিকি

তবে, এটা একটা ব্যাক্তিগত পজিশনের লড়াই ছাড়া কিছু নয়। ও বড় হয়ে যাবে, এ উঠছে একে শেষ কর- এরকম একটা ব্যাপার।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
abbas siddiqui cover

নতুন রাজনৈতিক দল ঘোষণা করতে চলেছেন আব্বাস সিদ্দিকি।

২০২১-এ এক ধর্মগুরু বাংলার রাজনৈতিক ময়দানে লড়বেন। ফুরফুর শরিফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি নতুন রাজনৈতিক দল করবেন বলে ঘোষণা করেছেন। এ নিয়ে একদিকে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা অন্যদিকে ফুরফুরা শরিফের পারিবারিক মতবিরোধ জারি রয়েছে। আক্রমণের শিকার হয়েছেন আব্বাস সিদ্দিকি। তিনি কিন্তু নাছোড়বান্দা মুসলিম, দলিত ও আদিবাসীদের জন্য ভোটের ময়দানে অবতীর্ণ হবেনই। তাই তাঁকে টার্গেট করা হচ্ছে বলে অভিমত আব্বাস সিদ্দিকির। তৃণমূল, বিজেপি, এমআইএম, ফুরফুরা পরিবার সহ নানা বিষয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-র সঙ্গে খোলামেলা কথা বললেন আব্বাস সিদ্দিকি

Advertisment

আপনাকে আক্রমণ করা হয়েছে। প্রতিবাদে রাস্তা অবরোধ হয়েছে। অনেক দিন ধরেই রাজ্য সরকারের সমালোচনা করে আসছেন। আদপে কী চাইছেন? কী পরিকল্পনা?

দীর্ঘ ৭৩ বছর আমরা মুসলিম, দলিত বা আদিবাসীরা কংগ্রেস, বামফ্রণ্ট বা তৃণমূলকে জিতিয়েছি। সবার হয়ে লড়েছি। এরা ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু সংবিধানের মৌলিক অধিকার অনুযায়ী আমাদের প্রাপ্য আমরা পাইনি। সেই না পাওয়ার জন্য শিক্ষা থেকে, চাকরি থেকে সব ক্ষেত্রে আমরা অবহেলিত, বঞ্চিত। সেই জায়গায় আমি ভাবছি দলিত, আদিবাসী ও মুসলিমদের নিয়ে একটা ফ্রণ্ট তৈরি করব। পশ্চিম বাংলার রাজনীতিতে নিজেদের অধিকার, সংবিধান এবং গণতন্ত্রকে বাঁচানো আমার লক্ষ্য। দলিত, আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে আমার কথা-বার্তা হয়েছে। তাঁরাও আগ্রহী। আমাদের সঙ্গে তাঁদের যথেষ্ট সুসম্পর্ক আছে। তাঁদের সঙ্গে মিটিং, মিছিল সব হচ্ছে।

আপনি একটা সময় তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বার্তা দিয়েছিলেন ৪৪টি আসন আপনাদের জন্য রেখে বাকি আসনগুলিতে তৃণমূল প্রার্থী দিক। এখন কী চাইছেন?

এই মুহুর্তে আমরা আর ৪৪ টি আসনে সীমাবদ্ধ নেই। তৃণমূল নেত্রীকে বলেছিলাম ৪৪টি আসনে আপনি যদি প্রার্থী না দেন, তাহলে বাকি ২৫০টি আসনে আমি আপনাদের সমর্থন করব। জনগণকে সজাগ করব যাতে আপনাকে ভোট দেয়। উদ্দেশ্য ছিল বিজেপিকে রোখা এবং রাজ্যে নতুন সরকারও ক্ষমতায় আসত না। ৪৪টা আসনে কিন্তু শুধু মুসলিম নয়, আদিবাসী ও দলিতদেরও প্রার্থী করতাম।

ভাবনা বদলে গিয়েছে?

বর্তমানে দিদির একশ্রেণির গুন্ডাবাহিনী যেভাবে অত্যাচার করছে, জুলুমের স্টিম রোলার চালাচ্ছে, আমাকে যাঁরা ভালবাসে তাঁরা বলছে সবাইকে মানতে পারছি, দিদিমনিকে আর নয়। এই ধরনের কথা ভেসে আসছে। তবে এখনও আলোচনা সম্পূর্ণ হয়নি।

কতগুলি আসনে প্রার্থী দিতে পারে আপনাদের দল?

দেখুন এভাবে খোলাখুলি এখনই বলতে পারব না। ওটা আলোচনার স্তরে আছে। তবে আমরা আর ৪৪টি আসনে আটকে নেই। এটা বলতেই পারি।

রাজনৈতিক দলের নামের কথা ভেবেছেন?

ভেবেছি, তবে সেটা প্রকাশ্যে এখন আনতে চাইছি না।

ত্বহা সিদ্দিকির কথা অনুযায়ী আপনি নাকি ফুরফুরা শরিফের বদনাম করছেন?

এটা খুবই দুর্ভাগ্যের একটা বিষয়। বড় গাছের পাশে ছোট গাছ পুঁততে গিয়ে একটু কষ্ট হয়। এভাবে বলার অর্থ আমাকে অপমানিত করে ছোট করা। আমাকে ডাউন করার ষড়যন্ত্র। তবে আমি কখনও এভাবে পরিবারের বিষয় কথা বলি না। ওনার কথা প্রসঙ্গে আমি মানুষকে একটাই কথা বলি, আমি এ ব্যাপারে একটা কথাও বলতে চাই না। তবে, এটা একটা ব্যাক্তিগত পজিশনের লড়াই ছাড়া কিছু নয়। ও বড় হয়ে যাবে, এ উঠছে একে শেষ কর- এরকম একটা ব্যাপার।

পুলিশ গিয়েছিল আপনার বাড়িতে.....

আমার অভিজ্ঞতায় বলতে পারি এটা ফুরফুরা শরিফকে ছোট করা।  এই তীর্থ স্থানের থেকেও শক্তিশালী বোঝাতে চাইছে। আমি চোর, ডাকাত নই বা দেশদ্রোহী নই। সেই জায়গায় বাংলার সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ভাবুক। তাঁরা এটাকে তীর্থস্থান হিসাবে ভাবে। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ শ্রদ্ধা করে, সম্মান করে। এরকম পবিত্র জায়গায় আক্রমণ মানে আমাদের সবাইকে আক্রমণ করা। সবাই সুরক্ষিত নয়। তাই পরিবর্তন শুরু হয়েছে।

একটা সময় ত্বহা সিদ্দিকি তৃণমূল নেতাদের পাশে নিয়ে ঘুরেছেন। এখন ফুরফুরা শরিফ রাজনীতির জায়গা হয়ে উঠছে।

একটা সময় উনি তো তৃণমূল দল করেছেন। প্রকাশ্যে তৃণমূলের লোকেদের বাড়িতে নিয়ে এসেছেন। বামেদের বিরোধিতা করেছেন। এটা তো তৃণমূল করাই। রাজনীতি কাকে বলে? ব্যানার বেঁধে, রাস্তায় নেমে মারপিট করা এটাই কি রাজনীতি? তৃণমূল নেতাদের পাশে বাসিয়ে শিষ্যদের বোঝাতে চেয়েছে তোমরা একে সমর্থন কর। এটাও তো একটা রাজনীতি। সেই জায়গায় তখন কিন্তু আমরা তাঁর বিষয়ে কিছু বলিনি। আমরা ওই বিষয়টাকে পছন্দ না করলেও ভেবেছি ওঁর বাকস্বাধীনতা আছে। তিনি ভারতের নাগরিক। ধর্ম স্বাধীনতা দিয়েছে, মানবসেবা, দেশ সেবার জন্য তুমি রাজনীতি করতে পার।

বেঙ্গল ইমামস অ্যাসোসিয়েশন বিজেপি করা নিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। এই নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। আপনার মত কী?

আমার মতে, ভারতবর্ষে সংবিধানকে যদি সামনে রেখে কথা বলা হয় তাহলে গণতান্ত্রিক দেশে কে মুসলিম, কে দলিত, কে আদিবাসী, যার যা ইচ্ছা, সেই দল করবে। সেটা তাঁর স্বাধীনতা। আমার রোখার অধিকার নেই। আমি যদি ধর্মীয় গুরু হিসাবে আমার শিষ্যকে বলি, এই বিজেপির বর্তমান কর্মকান্ড যেটা ইসলাম ধর্মকে ধংস করার একটা চক্রান্ত। যদি বলি, তাদের কর্মকান্ড আমার দেশের সংবিধানকে শেষ করে গণতন্ত্রকে হত্যা করে একটা বিশেষ ধর্মীয় দেশ তৈরি করতে চাইছে। সেই জায়গায় বিজেপি করলে ইসলামের ক্ষতি হচ্ছে। ইসলমের যাঁরা ক্ষতি করবে তাঁদের সঙ্গ দিও না। ধর্মগুরু হিসাবে এ কথা আমার বলার অধিকার আছে। কিন্তু কারও ব্যক্তিগত স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ করতে পারি না।

এবার বলুন আপনার ওপর এমন হামলা হল কেন?

এর পিছনে বড় রহস্য আছে। বর্তমান তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় এসেছিল সংখ্যালঘু তথা মুসলিম ভোটের জন্য। তারপরে ২০১৬-তে মুসলিম ভোট। ২০১৯-এ লোকসভা ভোটেও যে ২২টি আসন পেয়েছিল সংখ্যালঘু মুসলিম ভোটে ভর করেই। সেই মুসলিম ভোটটা এখন আমার দিকে। আমি ধর্মগুরু পরিবারের ছেলে হয়ে কখনও রাজনীতির কথা বলিনি। ২০১৯ -এ সিএবি বিল পাশ হওয়ার সময় দিদির ৮ জন সাংসদ যখন নাটক বা প্রতারণা করল, তখন বললাম আমি রাজনৈতিক দল করব। আমাকে যাঁরা ভালবাসে তারা আমাদের দিকে আসছে। তৃণমূল যে সংখ্যালঘু ভোট পেয়েছে তাতে ভাঁটা পড়ে যাবে।

কিন্তু যেখানে অত্যাচার হয়েছে সেখানে ২ জন সমর্থক ছিল, এখন ২হাজার হয়েছে। যেখানে আমার ছেলের ওপর অত্যাচার করেছে সেখানে আমি না গেলে একটা সুযোগ পাবে। না গেল ওরা বলবে, দেখলে যাঁর হয়ে দল করছো, ভালবেসে ছুটছো, তুমি অসুস্থ তবু একবার দেখতে এল না। ব্ল্যাকমেল করবে। আমি যখন দেখতে চলে যাচ্ছি, তখন ওঁরা দেখছে ওদের টার্গেট সফল হচ্ছে না। তখন ওরা মরিয়া হয়ে উঠছে নিজেদের দুর্নীতি, লুঠপাট, গুন্ডারাজ বাঁচানোর জন্য আমার ওপর এই ভাবে হামলা করছে। তবে এটা শুধু সওকত মোল্লার কাজ নয়। ওর পিছনে বড় মাথা কাজ করছে। সময় এলে বাংলার মানুষ বুঝে যাবে। ওই ছেলেটিকে লকডাউনের দিনে মারধর করেছিল। আমার প্রশ্ন তাহলে লকডাউন কীসের জন্য? মানুষ বেরতে পারবে না বলে মারধর করা হচ্ছে?

এদিক তৃণমূল বিধায়ক সওকত মোল্লা আপনার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছেন। সন্ত্রাসবাদী বলতেও ছাড়েননি। কী বলবেন?

আমার বিষয়ে কী অভিযোগ করেছে তার জন্য দেশের গোয়েন্দা সংস্থা রয়েছে। তাঁরা ভালভাবে জানে। সংগঠনের ছেলেদের বিগত দিনের কর্মকাণ্ড জানে। বাংলার মানুষ জানে। ভারতের একটি অঙ্গরাজ্যে সন্ত্রাসী প্রশিক্ষণ হয়, ভারত রুখতে পারেনি বলে দেশকে অপমান করেছে। এর জন্য তাঁর ফাঁসি হওয়া উচিত।

তৃণমূলের ওপর মুসলিমদের একাংশ খেপে গেল কেন?

মানুষ ভুল করে এক জিনিস। মানুষ যদি চিটিংবাজি বা প্রতারণা করে সেটা খারাপ। তৃণমূল সরকার মুসলিমদের সঙ্গে চিটিংবাজি ও প্রতারণা দুটোই করেছে। তাছাড়া আমাদের হাজার হাজার বছরের হিন্দু ভাইদের সঙ্গে বিভাজন তৈরি করেছে তৃণমূল সরকার। কিছুই দেয়নি অথচ নানা ভাবে সংখ্যালঘুদের পাশে থাকার কথা বলছে। আমাদের চাকরি নাও দিত, কিন্তু এভাবে বিভাজন কেন তৈরি করল। আমাদের শত্রু তৈরি করে দিয়েছে।

এআইএমএম ঘোষণা করেও এ রাজ্য়ে কাজ করতে পারছে না...

বর্তমান সরকার পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্রকে হত্যা করছে। বিরোধী বলে কিছু রাখতে চাইছে না। বিরোধী না থাকলে গণতন্ত্র থাকে না। সত্যি কি পশ্চিমবাংলায় এআইএমএম এসেছে! না এটা একটা দিদির সাজানো নাটক? এটা বোঝার বিষয়। রাজ্যে এখনও দলের দায়িত্ব কাউকে দেওয়া হয়নি। সেই জায়গায় মুসলিম দলের মধ্যে একটা ফাটল ধরানোর জন্য এটা চলছে। মিমকে হাইলাইট করা দিদির একটা ষড়যন্ত্র নয় তো?

বিজেপিও তো থাকতে পারে মিমের পিছনে......

বিজেপির সঙ্গে মিমের সম্পর্ক থাকবে এটা আমি কখনও ধারনা করতে পারছি না। রাজনীতিতে অনেক কিছু হয়, কিন্তু এ বিষয়টা ভাবতে পারছি না। আসাউদ্দিন ওয়েসিকে ভাল লাগে। সেটা আমার ব্যক্তিগত বিষয়। সেই ব্যক্তিত্ব বিজেপিকে সহযোগিতা করবে বলে আমি বিশ্বাস করি না।

বিজেপি নেতৃত্ব আপনার ওপর আক্রমণ নিয়ে সমালোচনা করেছেন।

শুনেছি। শুনুন, এরই নাম ফুরফুরা শরিফ। ফুরফুরা শরিফের প্রতি সকলের একটা ভদ্র ব্যবহার রাখে এবং আলাদা নজরে দেখে। এটা তো অবাক বিষয় যে তৃণমূল ফুরফুরা শরিফের অবদান পাওয়া সত্বেও ফুরফুরা শরিফের ওপর বারবার আক্রমণ করছে। এই তৃণমূলের পিছনে কার হাতে আছে? কে চাইছে ফুরফুর শরিফকে শেষ করতে?

লড়াই কার বিরুদ্ধে, তৃণমূল না বিজেপি?

ব্যক্তিগতভাবে কোনও দলের বিরুদ্ধে নয়। আমার লড়াই হচ্ছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে, ন্যায়ের পক্ষে। অসহায়দের পক্ষে, সে যে কোনও ধর্মেরই হোক না কেন। যে জুলুম করবে তার বিরুদ্ধে লড়ব। সে যদি মুসলিম হয় তাও।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

west bengal politics bjp tmc
Advertisment